মর্দনায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের বলি সাধারণ মানুষ,ঘটছে ধর্ষণ হামলা লুটপাট ছিনতাই

এসএম রুবেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ  চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌরসভার মর্দনা ও শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ থামছেই না। স্থানীয় একটি বিল ও জমি দখলকে কেন্দ্র করে একের পর এক ঘটছে বোমা হামলা,ধর্ষণ,লুটপাট,ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ। গত কয়েক বছরে এই মর্দনা গ্রামে কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটায় বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এখানকার বাসিন্দারা। এনিয়ে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব আসছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্থানীয়দের অভিযোগ,গত কয়েক বছর ধরেই আধিপত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সালাম ও আরেক সাবেক কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেম গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দফায় দফায় দেশীয় অস্ত্র ও বোমা নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দুইটি গ্রুপ। তবে দুই

গ্রুপের বাইরেও হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,গত কয়েক বছরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে বারবার সাধারণ মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন হত্যা গুম নির্যাতন করা হচ্ছে। তবে এনিয়ে থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনা বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষ ও জেম গ্রুপের লোকজনের। সালাম গ্রুপের পাল্টা অভিযোগ,তাদের উপর হুত্যা লুট করেই যাচ্ছে জেম গ্রুপের লোকজনরা। জানা যায়,সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সালামের মৃত্যুর পর এই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার ছোট ভাই ও বর্তমান কাউন্সিলর গোলাম আজম। অভিযোগ রয়েছে,ক্ষমতায় থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক জুলুম নির্যাতন শুরু করেছে সালাম গ্রুপের লোকজন। তবে থেমে নেই জেম গ্রুপের লোকজনও। গত দুই বছর আগে প্রকাশ্য দিবালোকে সালাম গ্রুপের অন্যতম মূলহোতা

সাইফুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে জেম গ্রুপের লোকজন। দুই গ্রুপের এসব অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগ উঠেছে,শিবগঞ্জের কিছু অসাধু নামধারী সাংবাদিকরা এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষকে উসকানি দেয়ার কারনে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। স্থানীয়রা জানান,যেকোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেই জেলার কিছু অসাধু সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি নিদিষ্ট পক্ষের হয়ে সংবাদ প্রকাশ করে আরও জলঘোলা করে। কয়েকদিনের মধ্যেই সাংবাদিকদের কয়েকটি গ্রুপ গিয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে পক্ষপাতমূলক সংবাদ প্রকাশ করবেন বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। জানা যায়,গত কয়েকদিন আগে মর্দনার বাসিন্দা আব্দুল মজিদকে আইয়ুব বাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে তার উপর অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা চালায় সালাম গ্রুপের লোকজন। খবর পেয়ে বাবাকে

বাঁচাতে গেলে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী মোছা.মর্জিনা খাতুন এগিয়ে গেলে তার উপরেও হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। তাকে মেরে পা ভেঙ্গে গুরুতর জখম হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন। গতবছরের ২৭ জুন মর্দনা গ্রামের মো.লুটুর ছেলে মো. আসাদুল্লাহ (২১) নিখোঁজ হয়। তার পরিবারের দাবি, তাকে গুম করে নিয়ে গেছে সালাম গ্রুপের লোকজন। ছেলেকে ফেরত পেতে পরিবারের আহামরি থামছেনা কোনভাবেই পরিবারের সদস্যদের লোকজন থানায় জিডি করলেও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ নিখোঁজ আসাদুল্লাহর পরিবারের। তারা বলছেন, এনিয়ে থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয় না। পুলিশকে তারা ম্যানেজ করে নিয়েছে। অপরাধীদের সাথেই পুলিশের সখ্যতা। এমনকি দুই গ্রুপের হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সাধারণ মানুষ।

একাধিক ব্যক্তির গরু-ছাগল লুটপাট, বাড়ি ভাংচুর, বাড়িতে প্রবেশ করে প্রতিবন্ধীকে ধর্ষনসহ নানা অপরাধ করছে তারা। আধিপত্য বিস্তারের এসব হামলার বলি হতে হয়েছে সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষজনকে। এসব হামলার গুরুতর জখমে আহত হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। একাধিক মামলা থাকলেও সন্ত্রাসীরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভুক্তভোগীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোন সুরাহা মিলছে না। একের পর এক হত্যাকান্ড চলতেই থাকছে। পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে বড় ধরনের সংঘর্ষ হবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।

এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা.শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মর্দনা এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। আমরা চাই,এর সুষ্ঠ সমাধান হোক। এতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কারন অনেক গডফাদার এর সাথে জড়িত রয়েছে। আমরা আশাবাদী,প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করলে এই জনপদে শান্তি ফিরে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top