সৈয়দ জাহিদুজ্জামান দিঘলিয়া খুলনা::: খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার পূর্ব বারাকপুর নিবাসী নাজিম শেখের পুত্র জনি শেখের স্ত্রী গৃহিনী মহিলা সাবিনা বেগম মোবাইলে দেখে শখের বসে কোয়েল পাখি পালন করে বর্তমানে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। বারাকপুর বাজার থেকে আধা কিলোমিটার পুবে ইদগাহের পশ্চিম পাশে অবস্থিত সাবিনার কোয়েল ঘর। তিনি কোয়েল পাখির চাষের জন্য ৩০ ফুট লম্বা ও ১২ ফুট চওড়া করে ঘর তৈরি করে ২ বছর ধরে কোয়েল পাখির চাষ করে আসছেন। তিনি তাঁর চাষকে সম্প্রসারিত করার জন্য উক্ত শেডের পূর্ব পাশে একই পরিমাপের আর একটা শেডও তৈরি করেছেন তিনি। কিন্তু সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা অভাবে
অদম্য আগ্রহ ও অটুট মনোবল থাকা সত্বেও সামনে এগোতে পারেননি এমনটাই জানালেন সাবিনা বেগম ও তাঁর স্বামী জনি শেখ। কোয়েল পালনে খাবার ও জায়গা লাগে কম। এছাড়া কোয়েলের মাংস ও ডিম বেশ সুস্বাদু। বাজারে চাহিদা থাকায় একটা সময় বাণিজ্যিকভাবে খামারের চিন্তা করেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ১ হাজার কোয়েল পাখি। পাশাপাশি রয়েছে দেশি মোরগ ও মুরগির চাষ। আরো আছে ৪ টা চিনা হাঁস। হাঁস, মুরগি ও কোয়েল পাখির ডিম ও কোয়েল বিক্রি করে মাসে আয় করেন প্রায় ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। সাবিনার স্বামী জনি শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। ছেলে খুলনা পলেটেকনিক্যাল কলেজে পড়ে (ইলেক্ট্রিক্যাল) আমার স্ত্রীর পাখি খুব পছন্দ। শখের বশে কোয়েল পাখি পালন শুরু করে বাসায়। এরপর বাণিজ্যিকভাবে খামারের কথা জানালে তাকে সমর্থন দিই। এখন তার বিশাল খামার। নিজেই উপার্জন করছে। উদ্যোক্তা সাবিনা বলেন, সংসারের পাশাপাশি কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম। শখ থেকে প্রথমে অল্প কিছু কোয়েল
পালন শুরু করি। একটা সময় কোয়েলের ডিম ও মাংসের অনেক চাহিদা লক্ষ করলাম বাজারে। তখন বাণিজ্যিকভাবে খামারের কথা ভাবি। এরপর দুইটি শেডঘর তৈরি করি। কোয়েল উঠিয়ে চাষ শুরু করি। মাঝ পথে ঠান্ডা গরম লেগে কোয়েল মারা গিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লচে পড়ি। ২ বছর আগে খামার তৈরি করি। এখন আমার খামারে ১ হাজার পাখি আছে। প্রতি মাসে ২৪০০ ডিম পাই। ডিম বিক্রি করে মাসে ৬/৭ হাজার টাকা আয় হয়। পাইকারি একটি ডিম বিক্রি করি ২.৮০ টাকা করে। এছাড়া পুরুষ কোয়েল পাখিও বিক্রি করি। শীতের সিজনে খামারে প্রায় ৪ হাজার পাখি থাকে। ওই সময় ডিমের পাইকারি দাম থাকে প্রতি পিস প্রায় ৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৩ টাকা ৪০ পয়সা। আমি ও আমার স্ত্রী দুজনে মিলে সম্পূর্ণ খামার পরিচালনা করি। খরচ বাদে শুধু ডিম বিক্রি থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা মাসিক আয় হয়। কোয়েল পাখি,
মুরগির ডিম ও চিনা হাঁসের ডিম ও বাচ্চা বিক্রির টাকা তো আছেই। শীতকালে খামার থেকে আয় অনেক বেড়ে যায়। সাবিনা জানান, কোয়েল পাখি ১৫ সেমি থেকে ২০ সেমি হয়। ওজন ১২০ থেকে ১৫০ গ্রাম। স্ত্রী কোয়েল বছরে ২০০ থেকে ২৫০টি ডিম দেয়। প্রতিটি ডিমের ওজন ৮ থেকে ১২ গ্রাম হয়। কোয়েল ৬ থেকে ৭ সপ্তাহের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ডিম দিয়ে থাকে। তিনি আরো জানান। আমরা উদ্যোক্তা হলেও সরকারিভাবে আমাদের চাওয়া পাওয়ার মূল্য খুবই কম। আমরা বড় কিছু করতে চাই। দেশ ও দেশের মানুষকে কিছু দিতে চাই। কিন্তু আমরা পাই না সরকারিভাবে বড় ধরণের আর্থিক সহযোগিতা। ব্যাংক জমির দলিল ছাড়া বড় কোনো লোন দেয়না। সমিতির লোন নিলে সপ্তাহ যেতে না যেতে টাকার কিস্তি পরিশোধ করা শুরু করতে হয়। অথচ কোয়েল পাখি প্রডাকশনে আসতে সময় লাগে। এ কারণে আমরা গ্রামের মানুষের মন ও যোগ্যতা থাকা সত্বেও টাকার অভাবে কিছু করতে পারিনা। আমাদের প্রশিক্ষণ ও যোগ্যতার সনদ থাকা সত্বেও আমাদেরকে দেশের ব্যাংকগুলো লোন দেয়না। আমরা সামনে বা উপরে উঠবো কি করে?
সাবিনার খামার থেকে কিনে ডিম বিক্রি করেন বারাকপুর বাজারের ডিম ব্যবসায়ী পরিমল মন্ডল। তিনি বলেন, প্রতিদিন সাবিনার ফার্ম থেকে ডিম কিনে নিয়ে বারাকপুর বাজারে বিক্রি করি। বাজারে অনেক চাহিদা। বিক্রিও ভালো। তবে শীতের সিজনে অনেক বেশি চাহিদা থাকে।
দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মাহমুদা সুলতানা বলেন, কোয়েল পাখির ডিম পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, জিংক, ভিটামিন বি-১২, ৬, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই। এর উপকারিতাও অনেক। অ্যালার্জির লক্ষণ ও মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি সর্দি-কাশি,
হাঁপানি কমায়। ত্বক কোমল রাখে, রাতকানা রোগ প্রতিরোধ, বাচ্চাদের মেধা বিকাশ ও ডায়াবেটিস-২ প্রতিরোধ করে। কোয়েল পাখি খাদ্য ও টিকা মেনটেইন করে লালন পালন করলে অনেক লাভজনক। অল্প খরচ ও স্বল্প জায়গাতেই কোয়েল পাখি লালন পালন করা যায়। তিনি আরও জানান, প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে আমরা খামারিদের সহযোগিতা করে থাকি। কোয়েল পাখি খামারিদের ভ্যাকসিন, টিকা সরকারি রাজস্বে বিতরণ করে থাকি। রোগ-বালাইয়ে চিকিৎসা ও পরিচর্যার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি।