শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তার স্লিপ নিয়ে কৃষকলীগ নেতার বানিজ্য

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে প্রতি বছর মোংলা বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছে বন্দর ব্যবহারকারীরা। এবারও ৩১৫০ জন শ্রমিকদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দিতে বিশেষ ‘স্লিপ’ তৈরি করে তা শ্রমিকদের হাতে তুলে দেয়ার কথা। কিন্তু বন্দরের প্রকৃত শ্রমিকের হাতে কাঙ্খিত সেই স্লিপ ঠিক মতো পৌঁছায়নি। স্লিপ চলে গেছে মোংলা পৌর কৃষকলীগের সভাপতি আসলাম হোসেনের হাতে। একসাথে অনেক স্লিপ হাতে পেয়ে আসলামের পোয়া এখন বারো। আসলাম শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দকৃত সেই স্লিপ তার দলের অনুসারীদের কাছে এক হাজার টাকার বিনিময়ে রাজনীতিতে জনপ্রিয় নেতা হতে চেয়েছেন। কিন্তু জনপ্রিয়’র চেয়ে নিন্দিত

হচ্ছেন বেশি। কৃষকলীগ নেতা আসলামের এমন বির্তকিত কর্মকাণ্ডের ক্ষোভ ঝেড়ে মোংলা বন্দরের শ্রমিক সর্দার আবুল হোসেন ও সুকুমার মন্ডল বলেন, শ্রমিকদের খাবার মেরে দিয়ে জনপ্রিয় নেতা হওয়া যায়না। প্রতি বছর মোংলা বন্দর বার্থ ও শিপ অপারেটর এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। এটা শ্রমিকদের হক। আর সেই হক মেরে দিলে আল্লাহ তাকে পরকালেও ছাড় দিবেনা। কৃষকলীগ নেতা আসলাম এর আগেও ত্রাণের স্লিপ নিয়ে বাণিজ্যসহ নানা বির্তকিত কর্মকাণ্ড করে মোংলা ছেড়ে পালিয়েছেন বলেও জানান এই শ্রমিকেরা।
মোংলা বন্দরে কর্মরত শ্রমিক মোঃ বাবুল আকন, মফিজ খাঁন ও বেল্লাল হোসেন বলেন, আসলাম হোসেন একজন ধুরন্দর বাটপার টাইপের

লোক। যেখানে সুবিধা সেখানেই ইঁদুরের মতো মাটি খুড়ে ঢুকে পড়েন। মানুষের সাথে প্রতারণা ও বাটপারি করতে নিজের সুবিধার জন্য নানা কৌশল করে পৌর কৃষকলীগের সভাপতি হয়েছেন। এরপর মোংলা বন্দরে শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন সময়ে আসা বিশেষ খাদ্য সহায়তার দিকে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তার। এজন্য বন্দরের শ্রমিক ঠিকাদার (ষ্টিভেডরিং) প্রতিষ্ঠান ‘মক্কা মদিনা এন্টারপ্রাইজের’ অস্থায়ী সর্দার চাকুরী নেন। শ্রমিকরা আরও বলেন, এই সর্দারী চাকুরী নেওয়ার পর শ্রমিকদের মাঝে অযৌক্তিক দাবি বুঝিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করার চেষ্টা করলে শ্রমিকেরা তাতে সাড়া দেয়নি।
শ্রমিকেরা বলেন, অযৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করলে এই সচল বন্দর আবার অচল হয়ে পড়বে। তখন শ্রমিকদের না খেয়ে থাকতে হবে৷ আর এই আন্দোলনের জন্য কৃষকলীগ নেতা আসলাম হোসেনের উস্কানিতে সাড়া না দেওয়ায় শ্রমিকদের

জন্য আসা খাদ্য সহায়তার স্লিপ নিয়ে এখন রাজনীতি করছেন আসলাম। শ্রমিকদের জন্য খাদ্যের স্লিপ টাকার বিনিময়ে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক সেন্টু বলেন, আসলাম হোসেন যত বড়ই নেতা হোক না কেন, শ্রমিকদের খাদ্যের স্লিপ নিয়ে নয়ছয় করলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াসহ এই বন্দর থেকে তাকে বিতাড়িত করা হবে। মোংলা বন্দর বার্থ ও শিপ অপারেটর এ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা যারা বন্দর ব্যবহারকারী আছি, তারা সবাই শ্রমিকদের স্বার্থ নিয়ে কাজ করি। শ্রমিকদের ভাল মন্দ ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদেরকে স্বচ্ছল রাখার চেষ্টা করি। এ জন্য প্রতি ঈদের মতো এবারও তাদের জন্য খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি৷

কিন্তু শ্রমিকদের এই খাদ্যের স্লিপ নিয়ে কোন সর্দার প্রকৃত শ্রমিকদের না দিয়ে অন্য কোথাও বিক্রি বা স্বজনপ্রীতি করলে তাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ছাটাই করে দেওয়া হবে। একইসাথে তার বিরুদ্ধে এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। জানতে চাইলে এ বিষয়ে শ্রমিক সর্দার ও পৌর কৃষকলীগের সভাপতি আসলাম হোসেন শ্রমিকদের স্লিপ টাকার বিনিময়ে বিক্রির বিষয়ে অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। এমন কোন কাজ করিনি, এটা অসত্য অবান্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top