স্মার্ট খুবির অগ্রযাত্রায় গুরুত্ব পাচ্ছে গবেষণা বেড়েছে বরাদ্দ ও গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ

সাগর কুমার বাড়ই খুলনাঃ  খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে গবেষণাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সামাজিক সমস্যা নিয়ে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে অ্যাপ্লাইড রিসার্চকে। এসব গবেষণার বিষয় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে এতদাঞ্চলের সম্ভাবনাময় ও সমস্যাভিত্তিক ক্ষেত্র। চিংড়ির ভাইরাস, সুন্দরবনের টপডাইং রোগ, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ফসল ও বৃক্ষরাজির জাত উদ্ভাবন, দেশীয় মাছের প্রজাতির সংরক্ষণ ও বংশ বৃদ্ধি, পানির আর্সেনিক মুক্তকরণ, মাটি, পানি, বায়ু, সমুদ্র ও নগর দূষণ এবং তার প্রতিকারের উপায়, জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন, গ্রামীণ এলাকায় তথ্য প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মতো বিষয়। গবেষণাকর্মের অনেক ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে এবং সুন্দরবনসহ এতদাঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর গবেষণার কয়েকটি ক্ষেত্রে গবেষকরা সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। যা সম্ভব হয়েছে বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন-এর নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নের কারণে। এছাড়াও

 

জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখার সময়োপযোগী বিষয় যা মানব কল্যাণে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তা’ প্রবর্তন করা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম লক্ষ্য।খুুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন সেন্টার সূত্র জানায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন-প্রবীণ গবেষকদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে গবেষণা অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০০-০১ অর্থবছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে গবেষণা বরাদ্দ ছিল ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকায়। পরবর্তীতে বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেনের যোগদানের পর ২০২১-২২ অর্থবছরে গবেষণা বরাদ্দ পায় ২ কোটি টাকারও বেশি। যার ধারাবাহিকতায় গত দুই অর্থবছরে এর পরিমাণ আশানুরূপ হারে বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ৫.৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এর মধ্য থেকে এবারই প্রথম মাঠ গবেষণার জন্য ৫টি ডিসিপ্লিনকে ৫৫ লাখ ৫ হাজার টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব গবেষণা তহবিল ‘রিসার্চ ইনডোমেন্ট ফান্ড’ গঠন করা হয়েছে। প্রণয়ন করা হয়েছে নিজস্ব রিসার্চ স্ট্র্যাটেজি প্ল্যান।

 

গত এক বছরে ১২৬৬টি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। বর্তমান প্রশাসনের সময়ে মোট ১২টি আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্মেলন হয়েছে, যার মধ্যে গত ছয় মাসে হয়েছে ৫টি। এমওইউ হয়েছে ৩৬টি। এছাড়াও ইউএসএইড, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে এমওইউ করার প্রক্রিয়া চলমান। এক বছরে পিএইচডি প্রোগ্রামে রেকর্ডসংখ্যক ৮৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি। কেন্দ্রীয় গবেষণাগার এবং প্রত্যেক ডিসিপ্লিনের গবেষণাগারে আন্তর্জাতিকমানের যন্ত্রপাতি স্থাপন করার হয়েছে। ইউনিভার্সিটি-ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কোলাবরেশন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- গবেষণায় আরও উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ইন্টারন্যাশনাল হাই ইমপ্যাক্ট ফেক্টর জার্নালে গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশনায় রেজিস্ট্রেশন ফিস প্রদান ও আর্টিকেল পাবলিকেশনের জন্য প্রসেসিং ফিস প্রদান। জীববিজ্ঞান স্কুলের জন্য একটি গ্রিনহাউস স্থাপন ও নেটহাউজ নির্মাণ। এর পাশাপাশি মাঠ গবেষণারে প্রয়োজনীয় জমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী একশত বছরের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণ, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে স্থাপিত গবেষণা যন্ত্রপাতির আইএসও সার্টিফাইড, রিসার্চ ইনফরমেশন সেন্টার-আইসিটি ডেস্ক তৈরির

 

বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে স্মার্ট ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বারোপ করেছে। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রয়োজন জ্ঞানের সৃজন। আর গবেষণা ছাড়া জ্ঞানের সৃজন হবে না। গবেষণার মাধ্যমে একটি দেশ তথা জাতিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার অগ্রযাত্রায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। তারা গবেষণামুখী হওয়ায় বরাদ্দ বেড়েছে। পাশাপাশি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি রিসার্চ ফোকাসড ও স্মার্ট ইউনিভার্সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top