সাগর কুমার বাড়ই খুলনাঃ বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, সাংবাদিকরা গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেন। এখন দেশে গণতন্ত্র নেই। এ জন্য সাংবাদিকদের খুন, গুম, হামলা-মামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা এখন বিভক্ত। এর সুযোগ নিচ্ছে সরকার। কিন্তু সময় একই রকম যাবে না। যে সাংবাদিক সত্য লিখবে তার নামেই মামলা হবে। কেউ মামলা থেকে রেহাই পাবে না। তাই মামলা খাওয়ার আগেই সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শনিবার ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে) খুলনার উদ্যোগে নগরীর উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে বিএফইউজের নবনির্বাচিতদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে) খুলনার সভাপতি মো. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএফইউজে
সহকারী মহাসচিব ও এমইউজে খুলনার সহ-সভাপতি এহতেশামুল হক শাওন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম। এমইউজে খুলনার সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান হিমালয় ও কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক রানার পরিচালনায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ খুলনার আহবায়ক ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার প্রফেসর মাজহারুল হান্নান। পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ খুলনার সদস্য সচিব প্রফেসর ডা. সেখ মো. আখতার উজ জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সাবেক নির্বাহী সদস্য ও এমইউজে খুলনার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আলাউদ্দিন। বক্তব্য দেন এমইউজের সাবেক সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক আজীজী, সাবেক নির্বাহী সদস্য হারুন অর রশীদ, সিনিয়র সদস্য এরশাদ আলী, জি এম রফিকুল ইসলাম, কেএম জিয়াউস সাদাত, সামশুল আলম খোকন, শেখ শামসুদ্দিন দোহা, বশির হোসেন, সেলিম গাজী প্রমুখ।
এছাড়া ফুলতলার সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম, রূপসার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান আসাদ, বটিয়াঘাটার সাংবাদিক নেতা আল আমিন গোলদার, তরিকুল ইসলাম, কয়রার সাংবাদিক গোলাম রব্বানী, ডুমুরিয়ার সাংবাদিক মঈন উদ্দিন, চুকনগরের সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন, কবি রুহুল আমিন সিদ্দিকী, নজরুল গবেষক সৈয়দ আলী হাকিম সংবর্ধিত অতিথিদেরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। পরে বিশিষ্ট নজরুল গবেষক সৈয়দ আলী হাকিমের লেখা ‘বিশ^কবি নজরুল’ বইয়ের মোড়ক উম্মোচন করেন নেতৃবৃন্দ। শহীদ শেখ বেলাল উদ্দীনের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন বাংলাদেশ ইসলামি ফাউন্ডেশনের সাবেক উপ-পরিচালক মো. আলমগীর শিকদার। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা গোলাম রব্বানী। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন এমইউজে খুলনার সদস্যবৃন্দ, খুলনা জেলা সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ, কয়রা, ডুমুরিয়া, চুকনগর, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা ও রূপসা উপজেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়া খুলনা সাহিত্য পরিষদ, খুলনা সাহিত্য মজলিস, নজরুল গবেষণা পরিষদ, আলীজ একাডেমি নেতৃবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এমইউজে খুলনার সভাপতি আনিসুজ্জামান সংবর্ধিত অতিথিদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। রুহুল আমিন গাজী আরও বলেন, ক্ষমতাসীনরা কখনো সত্য প্রকাশকে সহ্য করতে পারে না।
এ কারণে সাংবাদিকরা বারবার গ্রেফতার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তারপরও সাংবাদিকরা সত্য লেখা থেকে পিছপা হচ্ছেন না। তিনি বলেন, যত বাধাই আসুক আমাদের ছোট ছোট করে হলেও প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলে এক সময় ক্ষমতাসীনরাও আমাদের কথা শুনতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমিও বর্তমান সরকারের সময় গ্রেফতার হয়ে ১৭ মাস জেল খেটেছি। আমি গ্রেফতার হওয়ার পর যারা আমার খোঁজ-খবর রেখেছেন আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার জন্য অনেকে নফল রোজাও রেখেছেন। আমি তাদের এই অনুভূতির যোগ্য কিনা জানি না। তবে ১৭ মাস এভাবে জেল খাটা একটি ইতিহাস।’ তিনি আমাদের এখন শপথ নেয়ার সময় এসেছে। আমাদের সাংবাদিকদের উপর চাপিয়ে দেয়া কালা কানুন যতদিন না বাতিল করা হবে এবং মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন এই ফ্যাসিবাদ উৎখাতের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে গণমাধ্যম কর্মীদের শঙ্কা ও ভয়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই তারা এখন সত্য তুলে ধরতে পারছেন না। তাদেরকে এখন সেলফসেন্সরশিপ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের সমালোচনা করলে রোষাণলের শিকার হয়ে বন্ধ করা হচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হলে এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হবে, ততক্ষণ আমাদের আন্দোলন চলবে।’
এহতেশামুল হক শাওন বলেন, আজকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা-প্রেস ফ্রিডমটা নেই। তার যে অবস্থা- এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার তৈরি করেছে, ইতোপূর্বে আর কখনও আমরা লক্ষ্য করিনি। এখন এক সেন্সর নিতে হয় আমাদেরকে- সেলফ সেন্সরশিপ করে দেয়। “সবাই ভাবি যে, এটা লেখা যাবে কি যাবে না, আবার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে যেতে হবে কি না। এখানে রুহুল আমিন গাজী ভাই বসে আছেন, সংগ্রামের সম্পাদক আসাদ সাহেব-তারা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অনেক সাংবাদিক আছেন যারা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে এখন পর্যন্ত সেই মামলা ঝুলছেন। তিনি সাংবাদিক সমাজসহ পেশাজীবীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এভাবে চলতে পারে না। যে যেখানে আছে সবাই একত্রে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরে আসবে। বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়া ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই গণমাধ্যমের উপর খড়গ নেমে এসেছে। ১৯৭৫ সালে ৪টি পত্রিকা রেখে সব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এবারও ক্ষমতায় এসে দৈনিক আমারদেশ, দৈনিক দিনকালসহ অসংখ্য পত্রিকা ও দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ অসংখ্য টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছে। ৬০জন সাংবাদিক হত্যা করেছে। খুরশীদ আলম বলেন, এ সরকারের আমলে সাগর-রুনিসহ ৬০জন সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার। হত্যাকারীদের বিচার হয় না। কিন্তু, বিরোধী মতের সবাইকে খুঁজে খুঁজে বিচার করা হচ্ছে।’ তারা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলে না। দেশে ভোটাধিকার নেই।’