সেলিম মাহবুব, সুনামগঞ্জঃ সরকারী পাকা ঘর পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে এক দিনমজুরের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির নেতা নিশিকান্ত সিংহ’র বিরুদ্ধে। এর আগে গতবছর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাকে। অবশেষে আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দিয়ে নিস্তার পায় সে। সম্প্রতি সরকারী পাকা ঘর পাইয়ে দেয়ার নামে এক দিনমজুরের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ৩ সেপ্টেম্বর নিশিকান্ত সিংহ’র বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ(ডকেট নং-৮৪৭) দেন প্রতারনার শিকার উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের নিজগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুর রবের পুত্র বশির উদ্দিন। অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে সহকারী কমিশনার(ভুমি) কে নির্দেশ দেয়া হয়। অভিযোগ থেকে জানা যায়, গৃহহীনদের জন্য ঘর বরাদ্দের তালিকায় তালিকাভুক্ত হন দিনমজুর বশির উদ্দিন। বিষয়টি জেনে একটি প্রতারনার ফাঁদ তৈরী করে একই ইউনিয়নের রাসনগর গ্রামের চন্দ্র মোহন
সিংহ’র পুত্র নিশিকান্ত সিংহ। সরকারী পাকা ঘর পাওয়ার তালিকায় নাম লিখার অজুহাতে বশির উদ্দিনের কাছ থেকে প্রথম দফা ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় সে। চলতি বছরের ১৪ আগষ্ট সরকারী ঘরের অর্ডার হয়েছে বলে আরো ২৫ হাজার টাকা দিতে সে বশির উদ্দিনকে জানায়। পাকা ঘর পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর বশির উদ্দিন নিরুপায় হয়ে তার শেষ সম্বল ঘরে থাকা দুটি ছাগল বিক্রি এবং ধারকর্জ করে ১০ হাজার টাকা নিয়ে হাজির হয় নিশিকান্ত সিংহ’র বাড়িতে। টাকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে নিশিকান্ত তার স্ত্রীর মোবাইল নাম্বারে আরো এক হাজার টাকা বিকাশ করে দেয়ার জন্য বশির উদ্দিনকে নির্দেশ দেয় সে। মোট ১৬ হাজার টাকা দিয়ে সোনার হরিণ সরকারী পাকা ঘর পাওয়ার প্রত্যাশায় প্রহর গুনতে থাকে দিনমজুর বশির উদ্দিন। ১৯ আগষ্ট সকালে নোয়াকোট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সরকারী ঘর বরাদ্দের যাচাই-বাচাই চলছিল। খবর পেয়ে বশির উদ্দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে উপস্থিত হয়। বিষয়টি জেনে যাওয়ার আশংকায় এতে বাদ সাধে নিশিকান্ত। কৌশলে বশির উদ্দিনকে বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। প্রায় দুপুর বেলা বাচাই কাজ শেষে প্রথমেই ঘর বরাদ্দের তালিকায় বশির উদ্দিনের নাম ঘোষনা করা হয়। খবর পেয়ে সে আবারো নোয়াকোট বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে কর্মকর্তাদের কথাবার্তা শুনে চোখ খোলে যায় বশির উদ্দিনের। এ সময় সে জানতে ও বুজতে পারে সরকারী ঘর পেতে কোন টাকা-পয়সা ঘুষ দিতে হয় না। এ সময় সে নিশিকান্তকে প্রশ্ন করে বলে কেন এবং কিসের টাকা তার কাছ থেকে নিয়েছে সে। তার টাকা ফেরৎ না দিলে উপস্থিত কর্মকর্তাদের কাছে বিচার দেয়ার কথা বলে বশির উদ্দিন। আবারো তাকে হুমকি দিয়ে নিশিকান্ত বলে বিচার দিলে ঘর দেয়া হবে না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রতারকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান বশির উদ্দিন। এর আগে ২০২২ সালে ৯ জুন সকালে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে প্রদত্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে উপবৃত্তির টাকা বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান,
তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাদাত লাহিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিপি বেগম সহ কর্মকর্তাবৃন্দ। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের ৭০ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপবৃত্তির ৩ লক্ষ ১২ হাজার টাকা এবং ৫টি বাইসাইকেল বিতরণের কথা ছিল। উপবৃত্তির এসব নগদ অর্থ সহ প্রতি বাইসাইকেল ১০হাজার টাকা করে আরো ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয় নিশিকান্তকে। কিন্ত অনুষ্ঠান স্থলে ৪টি বাইসাইকেল দেখে কর্মকর্তাদের সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তখন শিক্ষার্থীদের জন্য খামের ভেতরে রাখা উপবৃত্তির টাকা খাম খুলতেই বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। হতভম্ব হয়ে পড়েন উপস্থিত অতিথিরা। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের খামে ২৪০০ টাকার স্থলে ২০০০ টাকা, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের খামে ৬০০০ টাকার স্থলে ৫১০০ টাকা ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের খামে ৯৬০০ টাকার স্থলে ৮০০০ টাকা পুরে রাখা হয়েছে। উপবৃত্তির প্রায় ৭২ হাজার টাকা
আত্মসাৎ করে নিশিকান্ত সিংহ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান এতে চরম ক্ষুব্ধ হন। তিনি উপবৃত্তির টাকা বিতরণ না করে নিশিকান্ত সিংহকে সরকারি ৩ লক্ষ ১২ হাজার টাকা ও ৫ টি বাইসাইকেল ফেরত প্রদানের নির্দেশ দেন। পরে ২৬ জুলাই উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে সহকারী বিভাগী কমশিনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ’র উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তির ওই টাকা ও বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়। স্থানীয় লোকজন জানান, এত বড় দুর্নীতি প্রমানীত হওয়ার পরও তার কোন আইনী বিচার হয়নি। উপর্যুপরী প্রতি বছরই তার একমাত্র পুত্রের জন্য শিক্ষাবৃত্তি ও একটি বাইসাইকেল বরাদ্দ দেয়া হয়। বারবার একই নামে বাইসাইকেল বরাদ্দ দেয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যান্য শিক্ষার্থীরা। নিশিকান্তর জন্য প্রধানমন্ত্রীর এ শিক্ষাবৃত্তির অর্থ ও শিক্ষা সামগ্রী সুষম বন্টন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বারবার। এ ব্যাপারে নিশিকান্ত সিংহ জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। তিনি কারো কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেননি। তদন্ত হলেই সত্য বেবিয়ে আসবে। স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিক আলী এ ব্যাপারে জানান, বিষয়টি তিনি জানেন এবং সমাধানের উদ্যোগও নিয়েছিলেন। কিন্তু অসহযোগিতার জন্য তিনি তা পারেননি।