মাইনুল ইসলাম রাজু,আমতলী (বরগুনাঃ বরগুনার আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পানি সরবরাহের বৈদ্যুতিক মটারটি নষ্ট হয়ে যাওায়ায় ৫দিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী এবং তাদের সাথে আসা স্বজন ও আবাসিক ভবনে বসবাসরত ডাক্তার এবং নার্সরা পরেছে মহাবিপাকে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবনে পানি সরবরাহের জন্য ১ বছর আগে একটি নতুন বৈদ্যুতিক মটার বাসানো হয়। মটারটি ২৩ আগস্ট বুধবার দুপুরে আকস্মিক ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে অদ্য ২৭ আগস্ট রবিবার পর্যন্ত ৫দিন আমতলী হাসপাতাল এবং আবাসিক ভবনে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
আমতলী হাসপাতালে ১৪ জন ডেঙ্গু রোগীসহ বিপুল পরিমান রোগী ভর্তি থাকলেও গত ৫দিন ধরে হাসপাতালে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় রোগী এবং তাদের সাথে আসা স্বজনরা পড়েছে মহাবিপাকে। পানির অভাবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়রা রোগীদের গোসল করা এবং শৌচাগার সারা দুরহ হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে শৌচাগারে ময়লার পাহার জমে দূর্গন্ধে এখন আর কেউ তার ধারে কাছেও যেতে পারছেন না। রোগী ও তাদের সাথে আসা স্বজনরা আশপাশের স্বজনদের বাসাবাড়িতে গিয়ে গোসল এবং শৌচাগার সারছেন।রবিবার দুপুরে সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগী এবং স্বজনরা বালতি এবং পানির বোতল ভরে বাহিরের গভীরনলকুপ থেকে পানি নিয়ে আসছেন। অনেক রোগী আবার বাহিরে গিয়ে গোসল ও শৌচাগারের কাজ সেরে আসছেন। রোগীর সাথে আসা শিরিনা বেগম নামের এক স্বজন বলেন, গভীর নলকুপ থেকে পানি ভরে চার তলায় নিয়ে ওঠা খুব কষ্টকর। এভাবে আর পারা যায় না। ডেঙ্গু জরে আক্রান্ত লিটন কাজী বলেন, ভাই ৫দিন ধরে গোসল করতে পারছি না, শৌচাগারে যেতে পারছি না। শহরের কোন এক দুর-সম্পর্কের আত্মীয়রে বাসায় গিয়ে গোসল এবং শৌচাগার সেরে আসি।
ষাটোর্ধ আব্দুল জব্বার নামে এক রোগী বলেন, বাবা বয়সের কারনে এমনিতেই ঠিকমত হাটতে পারি না তার উপর ডেঙ্গু জ্বর। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এখানে পানি নাই। না পারছি গোসল করতে না পারছি শৌচাগারে যেতে। এখন আমাদের হয়েছে মরন দশা।
হাসপাতালের আবাসিক ভবনে চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বসবাসরত চাকুরিজীবিরা পরেছে মহাবিপদে। হাসপাতালের অভ্যান্তরে একটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মকর্তাতাদের জন্য রয়েছে ৪টি আবাসিক ভবন। ওই সকল ভবনে বসবাসরত চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারীরা পানির অভাবে ঠিকমত গোসলসহ সাংসারিক কাজকর্ম করতে পারছে না। হাসপাতালের আবাসিক ভবনে বসবাসরত নার্স রেবা, সালমা, মোর্শেদা, আখি বলেন, হাসপাতালের পানি তোলার বৈদ্যুতিক পাম্প মেশিনটি নষ্ট থাকায় এখন আমরা পানি পাই না। বিকল্প ব্যবস্থায় বাহির থেকে পানি সংগ্রহ করে তা দিয়ে সাংসারিক, রান্নাবান্না ও ধোয়া মোছাসহ বাসা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করছি। বর্তমানে পানির অভাবে আমরা খুবই কষ্টে আছি।
আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পানি সরবরাহের জন্য ২০২২ সালের প্রথম দিকে ৮-৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি বৈদ্যুতিক মটার বসানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, ঠিকাদার স্বাস্থ্য প্রকৌশলীর যোগসাজসে কম মূল্যের এবং নিম্ম মানের একটি বৈদ্যুতিক মটার বসানোর কারনে ১ বছরের মাথায় সেটি আবারও নষ্ট হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পটুয়াখালীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী দেবব্রত হালদার বলেন, কি কারনে মটারটি নষ্ট হয়েছে তা জানি না তবে দ্রæত মেরামতের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নি¤œমানের মটার বসানোর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, ভালো মানের মটার বসানো হয়েছিল।আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল মুনায়েম সাদ বলেন, হাসপাতালে ৫দিন ধরে পানি তোলার বৈদ্যুতিক মটারটি নষ্ট হওয়ায় পানির সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে। সমস্যা সমাধানের জন্য সিভিল সার্জন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। আশাকরি দু’একদিনের মধ্যে এর সমাধান হয়ে যাবে।