সৈয়দ জাহিদুজ্জামান দিঘলিয়া খুলনাঃ খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নির্মানাধীন দিঘলিয়া উপজেলা মডেল মসজিদটির কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি। ঠিকাদারের নানা খোঁড়া অজুহাতে বার বার থেমে যাচ্ছে মসজিদটির নির্মাণ কাজ। বার বার পরিবর্তন হচ্ছে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সমাপ্তির সময়। নানা অযুহাতে এগোতে পারছেনা মসজিদটির নির্মাণ কাজ।
সূত্র থেকে জানা যায়, ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের উদ্যোগে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬৪ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। গৃহীত এ প্রকল্পের আওতায় খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা সদরে ৩১ শতক জায়গার উপর সোয়া ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়। এ মসজিদ কমপ্লেক্সটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় টিচবি-মামুন (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
২০১৯ সালের ১৬ জুন খুলনা গণপূর্ত বিভাগ -১ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে উল্লেখিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। উক্ত মডেল মসজিদটির নির্মাণ কাজের মেয়াদ উল্লেখ করা হয় ১৮ মাস। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। উক্ত মডেল মসজিদটির কার্যাদেশ প্রদানের ৪ বছরেরও অধিক সময় পার হয়ে গেলেও মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। ৪ বছরে কাজের অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। যা খুবই হতাশাজনক। কাজের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়নি। এ বছরের ডিসেম্বরে নয় আগামী বছর ডিসেম্বরে কাজ সমাপ্তি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে নানা মহল। কাজের এ হতাশাজনক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় মডেল মসজিদ নির্মাণ বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা গণপূর্ত বিভাগ- ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাসের কাছে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে বেশ সময় ক্ষেপন হয়েছে। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের গুণগত মান বজায় রেখে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য চূড়ান্তভাবে নোটিশ দিয়েছি। কাজ করতে গড়িমশি করলে আমরা তাঁদের কাজের অনুমেদন বাতিল করে পুনরায় নির্মাণ কাজের টেন্ডার আহ্বান করব।
তিনি জানান, এ প্রকল্পের অধীনে খুলনা গণপূর্ত বিভাগ -১ এর আওতায় অন্য চারটি উপজেলা রুপসা, তেরখাদা পাইকগাছা এবং ফুলতলাতে মডেল মসজিদ নির্মিত হয়েছে। ইতোমধ্যে রূপসা, তেরোখাদা, পাইকগাছা ও ফুলতলা উপজেলার মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রবিবার (৩০ জুলাই) বেলা ১১ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি পঞ্চম ধাপে পাইকগাছা ও ফুলতলা উপজেলার মডেল মসজিদসহ আরো ৫০ টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে একযোগে ৫৬৪ টি মসজিদের মধ্য হতে প্রথম ধাপে ৫০টি, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারী দ্বিতীয় ধাপে ৫০টি, ১৬ মার্চ তৃতীয় ধাপে ৫০টি এবং ১৭ এপ্রিল চতুর্থ ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেন।
উল্লেখ্য যে দিঘলিয়া উপজেলার নির্মাণাধীন এ মডেল মসজিদটির নির্মাণ কাজের ঠিকাদার কাজ শুরুর অনুমোদন পাওয়ার পর চার বছরের অধিক সময় পার করেছেন। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে গ্রাউন্ড ফ্লোরের পিলারগুলোরও কাজ শেষ করতে পারেন নি। ২০২৪ সালের মধ্যে এ মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করা নিয়ে উক্ত মসজিদের মুসল্লিসহ দিঘলিয়ার বিজ্ঞমহল আশংকা প্রকাশ করেছেন। সারাদেশে এ, বি, সি তিন ক্যাটাগরিতে এ সকল মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। খুলনার চারটি উপজেলাতে মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে বি ক্যাটাগরিতে। বি ক্যাটাগরির মসজিদগুলোর আয়তন হবে ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪০ বর্গমিটার। মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী ও পুরুষদের পৃথক ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা থাকবে। সঙ্গে থাকবে লাইব্রেরী গবেষণা ও দীনি দাওয়াত কার্যক্রম, পবিত্র কুরআন, হেফজ, শিশুশিক্ষা অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন ও মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা। থাকবে হজ্ব যাত্রীদের নিবন্ধন, প্রশিক্ষণ ও ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য থাকবে অফিসের ব্যবস্থা। মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ ওযু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে।