বাগেরহাটে চাষ হচ্ছে ভিয়েতনামের জাতীয় ফল ড্রাগন

received_3620863921521253.jpeg

মেহেদি হাসান নয়ন, বাগেরহাটঃ মিষ্টি ও টক-মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষে বাগেরহাটে বিপ্লব ঘটিয়েছেন বিদেশি ফল চাষি জেলার ২০ একর জমির উপর বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগনের এক বিশাল খামার গড়ে তোলার পাশাপাশি জেলা জুড়ে খামারিদের মাঝে ড্রাগন চাষ ছড়িয়ে দিয়েছেন। প্রতিটি ড্রাগন গাছ থেকে খামারিরা এক মৌসুমে ৫ বার করে ফল তুললেও ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছেনা খামারিরা।

বাগেরহাটে ড্রাগন বিপ্লব ঘটানো খামারি ফজলুর রহমান জানান, ২০১৫ সালে ড্রাগন বাগানের সূচনা করেন মাত্র ১৬০টি চারা দিয়ে। ২০ একর জমির উপরে তার বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন খামারে এখন গাছের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। তার ড্রাগন খামার দূর থেকে দেখলে মনে হয় সযত্নে ক্যাকটাস লাগিয়েছে কেউ। একটু পাশে যেতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে অন্য রকম দেখতে ফুল ও এক লাল ফলে ভরা খামার। প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল, মুকুল এবং পাকা ড্রাগন।

দেশের আবহাওয়া লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী হলেও তিনি গড়ে তুলেছেন লাল ড্রাগনের খামার। ড্রাগন লতানো কাঁটাযুক্ত গাছ, যদিও এর কোনো পাতা নেই। গাছ দেখতে অনেকটা সবুজ ক্যাকটাসের মতো। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে। কৃত্রিম পরাগায়নও করা যায়। এ গাছকে ওপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের/বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ওপরের দিকে তুলে দেওয়া হয়। ড্রাগনের চারা বা কাটিং রোপণের ১০ থেকে ১৫ মাসের মধ্যেই ফল সংগ্রহ করা যায়।

এপ্রিল থেকে মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব।

এবার ফজলুর রহমানের খামারে ড্রাগনের বাম্পার ফলন হয়েছে, এখন প্রতি সপ্তাহে ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচ মন করে। যা বাজারে পাইকারি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দরে। এখন প্রতিদিন তার খামার থেকে বিক্রি হচ্ছে ড্রাগ গাছের চারা। প্রতিটি ড্রাগনের চারা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। কোন বেকার যুবক বা সরকারি অফিসগুলোতে বিনামূল্যে বিতরণ করছেন ড্রাগনের চারা। এবছর করোনার মধ্যে এতো পরিমাণ চাহিদা ক্রেতাদের যা আমরা সরবরাহ করতে পারছিনা। অনেকেই আমার কাছ থেকে চারা কিনছে, ছোট-বড় খামার করছে। ড্রাগন চাষ বিশেষ করে করোনাকালে বিদেশ ফেরতদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, ফজলুর রহমানের ড্রাগন চাষের সফলতা দেখে জেলায় অনেকেই এখন ড্রাগন ফলের চাষ করছেন। বিদেশি এ ফসল দেশের মাটিতে চাষ বৃদ্ধির লক্ষে কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এ ফল চোখকে সুস্থ রাখে, শরীরের চর্বি কমায়, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। করোনার কারণে স্থানীয় বাজার সৃষ্টি হওয়ায় এ ফল চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top