সেলিম মাহবুব, ছাতকঃ ছাতকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের বঞ্চিত করে বেতন-ভাতা ও সরকারি সব সুবিধা গ্রহণ করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের ছোট ভাই আব্দুস ছমাদের দ্বিতীয় স্ত্রী রংমালা বেগম।
বীর মুক্তিযোদ্ধার ছোট ভাই আব্দুস ছমাদ জীবিত থাকাবস্থায় ভুঁয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজে সরকারি সুযোগ- সুবিধা ভোগ করেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মোঃ জহুর আলী নোয়ারাই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওয়ারিশান সার্টিফিকেট নিতে গেলে এ বিষয়টি প্রকাশ পায়। এ ব্যাপারে এলাকায় সালিসিসহ বিভিন্ন দপ্তরে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের পুত্র মোঃ জহুর আলী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী বরাবরে লিখিত একটি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৯ জুন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি বিষয়টি খুবই জরুরি উল্লেখ করে ওই মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ রেখে তদন্তের জন্য সিলেট বিভাগের দায়িত্ব রতদের নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রী মহোদয়ের দেয়া কপি ইতিমধ্যে ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও
সোনালী ব্যাংক ছাতক শাখায় দেয়া হয়েছে।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের শাহ আরেফিন নগর গ্রামের রহিম উল্লাহর ছেলে আব্দুর রহমান। মৃত রহিম উল্লাহর দুই ছেলে ছিলেন আব্দুর রহমান ও আব্দুস সামাদ এবং এক মেয়ে ফুলই বিবি। ফুলই বিবি এখনো জীবিত রয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান তার নিজ বাড়িতে মারা যান। এ সময় আব্দুর রহমানের স্ত্রী কাচা মালা বেগম জীবিত ছিলেন। বর্তমানে ওই মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মোঃ জহুর আলী ও মেয়ে জয়ধন মালা রয়েছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের ছোট ভাই আব্দুস ছমাদ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নিজে মুক্তিযোদ্ধা সেজে সরকারি বেতন-ভাতাসহ সব সুবিধাদি ভোগ করেছেন। এ ঘটনায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের ছেলে মো:জহুর আলী বাদী হয়ে মৃত আব্দুছ ছমাদের দ্বিতীয় স্ত্রী রংমালাকে প্রধান আসামি করে ও তার ছেলে তাজুদ আলী, নুরজাহান, আশিক আলী, মাসুক মিয়া,নুরমালা বতনি, নুরেজাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি প্রতারণার মামলা করেন। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আব্দুস ছমাদ নামের ওই লোক আব্দুর রহমান সেজে বিভিন্ন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে জাতীয় পরিচয়পত্রে ও নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন। আব্দুস ছমাদের মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী রংমালা বেগমও আব্দুর রহমানের (ভাসুরের) ভুয়া স্ত্রী সেজে মুক্তিযোদ্ধার বেতন-ভাতা উত্তোলনের ঘটনায় নিয়ে এলাকায় একাধিক সালিশ বৈঠক হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মোঃ জহুর আলী ও জয়ধন মালা মুক্তিযোদ্ধার বেতন-ভাতা ও সরকারি সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা সমন্বিত তালিকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের (০১৯০০০০২৫৬৭), বেসামরিক গেজেট (১১২৩) গ্রামের নাম শাহ আরেফিন নগরের স্থলে মহিষমারা পরিবর্তন করেছেন তার ভাই আব্দুস ছমাদ। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য জোৎস্না বেগম তদন্ত করে সার্টিফিকেট দেওয়ার সুপারিশ করলেও ইউনিয়নের এক উদ্যোক্তা সার্টিফিকেট তৈরি করতে নারাজ। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধার ছেলে
:জহুর আলী ইউনিয়ন উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। প্রতারণাপূর্বক আব্দুস ছমাদের স্ত্রী রং মালা বেগম আব্দুর রহমানের ভুয়া স্ত্রী সেজে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ করার ব্যাপারেও ওই দিন তিনি আরেকটি অভিযোগ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের বোন, ফুলই বিবি জানান, তার ভাই আব্দুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আব্দুস ছমাদ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। আব্দুর রহমানের মৃত্যুর পর আব্দুস ছমাদ বিভিন্ন জাল- জালিয়াতি করেছে। এখন আব্দুস ছমাদের স্ত্রী ও প্রতারণা করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা খাচ্ছেন। এই ভাতার দাবিদার আব্দুর রহমানের সন্তান মোঃ জহুর
আলী ও মোছা. জয়ধন মালা। শাহ আরেফিন নগর-টিলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর মিয়া ও গ্রামের সমর আলী জানান, রহিম উল্লাহর পুত্র আব্দুর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। প্রতারণা করে তার ভাই আব্দুস ছমাদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান নামের ভাতা খেয়েছেন। আব্দুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই মারা গেছেন। কিছু দিন আগে আব্দুস ছমাদও মারা যান। বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের সন্তানদের বঞ্চিত করে আব্দুস ছমাদের স্ত্রী তাদের সম্মানী বেতন-ভাতা সোনালী ব্যাংক থেকে উত্তোলন করছেন। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন নোয়ারাই ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক মেম্বার আলকাছ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোহর আলী। ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নুরের জামান চৌধুরী জানান এ ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার বিকেলে মন্ত্রনালয়ে দায়েরি একটি অভিযোগের কপি তিনি পেয়েছেন।