ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহিদ মুরাদ চীফ রিপোর্টার– অন্ধজনে দেই আলো এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে “বন্ধু মহলের” সৌজন্যে খুলনার সেনহাটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ সোমবার অনুষ্ঠিত হলো স্বল্পমূল্যে /বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা শিবির ২০২৩ । এই চক্ষু শিবিরে অর্থায়ন করেছে সাইট সেভাস এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ব্রাক ও বি.এন.এস. বি চক্ষু হাসপাতাল, খুলনা। এই কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন ডাক্তার মোঃ মাহাবুবুল আলম, এম.বি.বি.এস বিসিএস(স্বাস্থ্য),উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, দিঘলিয়া, খুলনা। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলে এই চক্ষু শিবির। সকাল থেকেই চক্ষু শিবির কেন্দ্রে আসতে থাকে চক্ষু রোগীরা। সময় গড়ানোর সাথে সাথে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। চোখের বিভিন্ন রোগ নিয়ে উপস্থিত হয় প্রায় ২০০ রোগী। তাদের উন্নত এবং আন্তরিক সেবা প্রদানের জন্য এই কর্মকান্ডে নিয়োজিত ছিলেন ডাক্তার এবং নার্স মিলে ১৫ জন এবং আরো সহযোগী হিসেবে ছিলেন ৩৫ থেকে ৪০ জন
লোক। কয়েকটি ধাপে রোগীদের এই চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। প্রথমত রোগীদের টিকিট করতে হয় এরপর তাদের ডাক্তার দেখানো হয়। রোগী দেখার পর ডাক্তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পত্র প্রদান করেন। চিকিৎসা পত্রসহ তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কাউন্সিলরদের কাছে, সেখানে কাউন্সিলররা তাদের চিকিৎসা পত্র দেখে যার চশমার প্রয়োজন তাকে চশমা গ্রহণের এবং যার ঔষধের প্রয়োজন তাকে ঔষধ গ্রহণের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। আর যার অপারেশন প্রয়োজন তাকে বি.এন.এস. বি হাসপাতলে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলাদা জায়গাতে অপেক্ষা করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। এসব বিষয় নিয়ে বি.এন. এস. বি হাসপাতালের প্রোগ্রাম ম্যানেজার, মীর মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হয় আমাদের চীফ রিপোর্টারের। মীর মিজানুর রহমান জানান- চক্ষু রোগীদের সেবা প্রদান কার্যক্রমটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সারা বছর ধরে বিভিন্ন জায়গাতে এ ধরনের চক্ষু শিবিরের মাধ্যমে চক্ষু রোগীদের সেবা প্রদান করা হয়। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে রোগীর চক্ষু পরীক্ষা ও প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়, বাছাইকৃত ছানি পড়া রোগীদের অপারেশনের জন্য ঐ দিনেই নিজস্ব গাড়িতে খুলনা বি.এন.এস.বি চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, শিশুদের চোখের ছানিসহ চোখের অন্যান্য সমস্যার
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়, অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন দ্বারা অত্যাধুনিক কৃত্রিম লেন্স সংযোজন এর মাধ্যমে (IOL) ছানি অপারেশন করা হয়, ছানি অপারেশনের পর একটি কালো চশমা ও এক মাসের ওষুধ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়, অপারেশনকৃত ছানি রোগীদের নিয়মিত চেকআপ ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফলোআপের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়, নিকট দৃষ্টি সম্পন্ন চক্ষু রোগীদের মাত্র ১৫০ টাকা দিয়ে চশমা ক্রয়ের সুযোগ প্রদান করা হয়, ছানি অপারেশনের জন্য যারা নির্বাচিত হন তাদের প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় সাথে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। বাছাইকৃত রোগীদের ছানি অপারেশনের জন্য নামমাত্র ৬০০ টাকা প্রদান করতে হয়। তবে যারা প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ভাতা অথবা বিধবা ভাতা প্রাপ্ত তাদের উক্ত ৬০০ টাকা প্রদান করতে হয় না। তিনি আরো বলেন, আজ যাদের চোখের ছানি অপারেশনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে এমন রোগীর সংখ্যা ৪৭ জন তার ভিতরে ২৫ জন পুরুষ এবং ২২ জন নারী। তাদের আজই বি.এন.এস.বি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে এবং আগামীকাল তাদের আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ছানি অপারেশন করা হবে। এর পরের দিন রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে অপারেশনের পরবর্তী এক মাসের ঔষধ এবং কালো চশমা দিয়ে রোগীকে হাসপাতাল
থেকে রিলিজ করে দেয়া হবে। চোখের ছানি অপারেশনের জন্য রোগীদের এই সেবা প্রাপ্তির জন্য কোন অর্থ ব্যয় করতে হবে না। রোগীরা এই সেবা পাবেন একেবারেই ফ্রিতে। আজকের এই চক্ষু শিবিরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সেনহাটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খুলনার প্রধান শিক্ষক, এস.এম. ফরহাদ হোসেন এবং ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ডাক্তার দীনেশচন্দ্র বেপারী, সাগর জুট স্পিনিং মিলস লিমিটেড। এছাড়া চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে ছিলেন ডাক্তার খাঁন নাহিদ মুরাদ (অনিক) এসিস্ট্যান্ট সার্জন, খুলনা বি.এন.এস.বি চক্ষু হাসপাতাল শিরোমনি, খুলনা। কৃতজ্ঞতায় ছিলেন তালুকদার নুরুল ইসলাম মঞ্জু, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক। আজকের এই চক্ষু শিবিরের কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু, সুন্দর এবং শৃঙ্খলার সাথে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে একদল নিবেদিত প্রাণ সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। তারা হলেন ডাক্তার শাহআলম, ডাক্তার সেলিম রেজা, নজরুল ইসলাম কবির, ডাঃ মোঃ মহাসিন, ডাক্তার আবুল কাশেম এবং আরো অনেকে। সকাল থেকে শুরু হওয়া চক্ষু শিবিরের যাবতীয় কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু, সুন্দর এবং শৃঙ্খলার সাথে সম্পন্ন হওয়ায় রোগী ছাড়াও উপস্থিত সুধীজনেরা সকলেই খুশি ও আনন্দিত হয়েছেন এবং সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।