বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মন, রিপোর্টারঃ গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানা এলাকায় মোবাইল চোর সন্দেহে নির্মম গণপিটুনিতে এক দিনমজুরের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার (২৫ মে) দুপুরে কোনাবাড়ীর পারিজাত এলাকায়। ইতোমধ্যে কোনাবাড়ী থানা পুলিশের দক্ষ অভিযানে তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নিহত ব্যক্তি জুয়েল তালুকদার (৩৫), পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। তিনি জীবিকার তাগিদে প্রতিদিনের মতোই কাজে বের হয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল মৃত্যু। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি মোবাইল চোর সন্দেহে তাকে ও আব্দুল হক নামের আরেকজনকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান জুয়েল।
অপর আহত ব্যক্তি, আব্দুল হক, বর্তমানে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জুয়েলের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার ভিত্তিতে কোনাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সালাহউদ্দিন এর নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন— ১. মোঃ রফিকুল ইসলাম রনি (৪২), পিতা মৃত আব্দুল হাই আকন্দ, গ্রাম: রতনপুর, থানা: ফুলছড়ি, জেলা: গাইবান্ধা। ২. রনির স্ত্রী মোছাঃ ছালমা (৩৭)।
৩. এস এম রফিকুল ইসলাম (৬০), পিতা মৃত মেহের আলী, ঠিকানা: হরিণাচালা, কোনাবাড়ী, গাজীপুর মহানগর।
ওসি সালাহউদ্দিন জানান, “আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি। আজ সকালে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।”
জুয়েলের সহকর্মীরা জানান, তিনি একজন শান্ত স্বভাবের, পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। চুরির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। এমন নৃশংস ঘটনার বিচার দ্রুত দাবি করেছেন এলাকাবাসী ও মানবাধিকারকর্মীরা।
বিচার বহির্ভূতভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়ার এই প্রবণতা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল যে, অপরাধের অভিযোগ উঠলে বিচার হবে আদালতে, রাজপথে নয়।
নিহত জুয়েল তালুকদারের পরিবার আজ শোকে মূহ্যমান। জীবিকার আশায় বেরিয়ে যাওয়া এক পিতার এভাবে ফিরে না আসার বেদনা ছুঁয়ে গেছে সকল বিবেকবান হৃদয়কে।