BGMEA-র ছুটি নির্দেশ অমান্য করে মতিন স্পিনিং মিলস্-এ জোরপূর্বক ডিউটির চাপ: শ্রমিকদের প্রতিবাদ

IMG_20250519_210529.jpg

Oplus_131072

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঈদুল আজহা ২০২৫ উপলক্ষে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (BGMEA) ১০ দিনের ছুটি ঘোষণার পরও গাজীপুরের মতিন স্পিনিং মিলস্ পিএলসি প্রতিষ্ঠানটি তা অমান্য করে এক তরফাভাবে শ্রমিকদের উপর ডিউটির চাপ সৃষ্টি করছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (BRGWF) তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। BGMEA গত ৭ মে ২০২৫ তারিখে এক বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে জানায় যে, ১৩ থেকে ২২ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ঈদুল আজহার ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ছুটি প্রদানে সরকার ঘোষিত ছুটির সঙ্গে মিল রেখে, মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনার ভিত্তিতে কমপক্ষে তিন দিনের উৎসব ছুটি বাধ্যতামূলক ভাবে দিতে হবে বলেও নির্দেশনা প্রদান করে।

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, মতিন স্পিনিং মিলস্-এর কতৃপক্ষ ঈদের ছুটিতে ডিউটি না করলে চাকরি থাকবে না—এমন হুমকি দিয়ে শ্রমিকদের মানসিকভাবে চাপে ফেলছে। একই সঙ্গে, ভয়ভীতি দেখিয়ে ও জোর করে শ্রমিকদের দিয়ে ‘স্বেচ্ছায় ডিউটি’ করার মিথ্যা স্বাক্ষর আদায় করা হচ্ছে। একাধিক শ্রমিক বলেন, “আমরা সারা বছর কঠোর পরিশ্রম করি। ঈদুল আজহার ছুটি মানেই পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ। কিন্তু আমাদেরকে বলা হচ্ছে, ঈদের দিনও ডিউটি না করলে চাকরি যাবে। এমন চাপ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।” আরেকজন বলেন, “আমরা

যেটায় সই করেছি, সেটা আমাদের ইচ্ছায় নয়। অফিসের ইনচার্জ, এইচআর কর্মকর্তারা চাপ দিয়ে সেটা করিয়েছেন।” BRGWF অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে, এই কার্যক্রম বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮), বাংলাদেশ সংবিধান, এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) কনভেনশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। ধারা ১১৭ ও ১১৮ অনুযায়ী, শ্রমিকের উৎসব ছুটি পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ধারা ৩২৬(ক) অনুসারে, জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেওয়া ও কাজ করাতে বাধ্য করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৪ অনুযায়ী, জোরপূর্বক শ্রম নিষিদ্ধ।

ILO কনভেনশন অনুযায়ী, শ্রমিকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করানো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। BRGWF গাজীপুর জেলা সভাপতি মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া ও কাশিমপুর থানা সভাপতি বিদ্যুৎ চন্দ্র বর্মনের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে: ১. সকল শ্রমিককে ঈদুল আজহার পূর্ণ উৎসব ছুটি দিতে হবে।
২. ভয়ভীতি ও চাকরি হারানোর হুমকি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ৩. পূর্বে আদায়কৃত স্বাক্ষর বাতিল করতে হবে। ৪. ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫. ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্পষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে।

BGMEA-এর বিজ্ঞপ্তিতে (স্মারক নং বিজিএমইএ/২০২৫/১০২) উল্লেখ রয়েছে, “শ্রমিকদের ধর্মীয় উৎসব পালনের অধিকার রক্ষায় সরকার ঘোষিত ছুটির সঙ্গে মিল রেখে আলোচনার মাধ্যমে ছুটি নির্ধারণ করতে হবে।” তবে, মতিন স্পিনিং মিলস্ কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশনাকে স্পষ্টভাবে উপেক্ষা করছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। এই ঘটনায় শ্রমিক সমাজে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। BRGWF জানিয়েছে, যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে বিষয়টি শ্রম মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার সংস্থা এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা হবে। “শ্রমজীবী মানুষের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো”—এই স্লোগানে সংগঠনটি ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *