সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:-চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পাক্ষিক উত্তর চট্টলার নির্বাহী সম্পাদক ও ঢাকা প্রতিদিনের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি ইলিয়াছ ভূঁইয়াকে অপহরণের চেষ্টা চালিয়েছে একটি সন্ত্রাসী চক্র। পরে ব্যর্থ হয়ে হত্যার উদ্দেশ্য সন্ত্রাসী হামলা চালায় সন্ত্রাসী দলটি। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল আটটায় পৌরসদরের বাসস্ট্যাণ্ড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ইলিয়াছ ভূঁইয়ার দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীর সামনেই তাকে অপহরণের চেষ্টা করে সন্ত্রাসীদের একটি দল। এসময় তারা তাকে একটি মাইক্রোবাসে তোলার চেষ্টা করে। পরে ব্যর্থ হয়ে বেড়ধক পিটিয়ে আহত করে। আহত সাংবাদিক ইলিয়াছকে গুরুতর অবস্থায় নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, সাংবাদিক ইলিয়াছ ভূঁইয়ার উপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ। জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায় সাংবাদিক ইলিয়াছ ভূঁইয়া তার সন্তানের চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ও আরেক সন্তানসহ ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিতে তার বাসা থেকে রওয়ানা হন। বাসস্ট্যাণ্ড এসে তিনি স্ত্রী ও সন্তানকে সড়কের পশ্চিম পাশে রেখে পূর্ব পাশে টিকিট আনতে যান। এসময় রাস্তা পার হতেই আইল্যাণ্ডের উপর তাকে আক্রমণ করে ১৫-২০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল। এসময় সন্ত্রাসীরা তাকে লোহার রড়, গাছ, বাঁশ দিয়ে বেড়ধক পেটায়। এসময় তার ও তার স্ত্রী চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষ ছুটে আসলেও সন্ত্রাসীদের কাছে রামদা ও দেশীয় অস্ত্র থাকায় কেউ এগিয়ে আসেনি। এসময় তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার তাকে বাঁচাতে কোলে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে এগিয়ে এলে তারা তারও শ্লীলতাহানি করে।
একপর্যায়ে লোকজন জড়ো হলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। অভিযোগ ওঠেছে, ভূমিদস্যু হেদায়েত, সেকান্দর, এলাকার শীর্ষ চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী কাইয়ুম, আবু প্রকাশ কলা আবুর নির্দেশে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ১৫-২০ জনের একটি দল এ হামলা চালায়। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের ভূমিদস্যুতা নিয়ে পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ও সংবাদ পোস্ট করায় চক্রটি তার বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠে৷ তাকে হামলা করতে উৎপেতে থাকে ওই চক্রটি। এ ঘটনায় এর আগে সন্ত্রাসীদের হুমকি-ধমকি নিয়ে থানায় জিডি করেছেন সাংবাদিক ইলিয়াছ ভূঁইয়া।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তারা তাকে অপহরণের চেষ্টা করে। পরে ব্যর্থ হয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে।
এ বিষয়ে সাংবাদিক ইলিয়াছ ভূঁইয়া বলেন, সকালে আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে আটটার দিকে আমাকে আক্রমণ করে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের সবার হাতে লোহার রড়, এসএস পাইপ, দেশীয় অস্ত্র, রামদা ও কয়েকটি মুখোশ এবং গামছা ছিল। কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে তারা আমাকে তোলার চেষ্টা করে। সেই মাইক্রোবাসে আগে থেকে কয়েকজন বসা ছিল। আমি মাটিতে বসে গেলে তারা তুলতে ব্যর্থ হয়। পরে আমাকে বেদম প্রহার করে। আমার স্ত্রী কোলে দুটি শিশু সন্তান নিয়ে গাড়ির সামনেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে ছুটে আসে। এসময় আমার স্ত্রীর চিৎকারে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আনা হয়।
তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসীরা আমাকে মেরে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি নাকি শ্যামলী বাস কাউন্টার থেকে ফ্রিতে টিকিট কাটতে গিয়েছি। সেজন্য নাকি আমাকে কাউন্টারের মালিক মারধর করেছে। অথচ আগের দিন রাতেই অনলাইনে টিকিট কাটা হয়েছে। তার প্রমাণ আমার কাছে আছে।
জানতে চাইলে শ্যামলী বাস কাউন্টারের আব্দুল মুনাফ জানান, আমার কাছ থেকে রাতেই ৪টি ঢাকার টিকিট বুকিং নেন ইলিয়াছ ভূঁইয়া। সকালে এসে তিনি টাকা পরিশোধ করেন। তার সাথে আমার কোন ঝামেলা হয়নি, ফ্রি টিকিট ওনি চাননি, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সাংবাদিক ইলিয়াছের স্ত্রী নাসিমা আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে সন্ত্রাসীরা প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। প্রথমে তারা তাকে গাড়িতে তুলে নিতে চায় জোরপূর্বক। আমি চিৎকার করলে অনেক মানুষ ছুটে আসে। পরে তারা ব্যর্থ হয়ে তাকে ব্যাপক মারধর করে। সে এমনিতেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাকে হাতে, পায়ে আঘাত করা হয়। আমি শীঘ্রই মামলা দায়ের করব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা হামলা চালিয়েছে অবিলম্বে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সীতাকুণ্ড প্রশাসন সাধারণ মানুষ, পর্যটক থেকে শুরু করে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ। আগে সীতাকুণ্ড বাস স্টেশনে সবসময় একটি টহল টীম ও হাইওয়ে পুলিশ থাকতো। কিন্তুু ৫ আগস্টের পর থেকে সেটি আর দেখছি না।