খুলনার তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তানিয়া রহমানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

IMG_20250224_173712-1.jpg

Oplus_131072

স্টাফ রিপোর্টারঃ খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তানিয়া রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ী নিয়ে যথেচ্ছ চলাফেরা এবং পারিবারিক কাজে বিভিন্ন স্থানে গমনাগমন, এ্যাম্বুলেন্স চালকের কাছে প্রতি মাসে ৬০ /৭০ লিটার অকটেন দাবি অন্যথায় অন্যত্র বদলির হুমকি,সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার, রোগীদের খাবারের বিল থেকে উৎকোচ গ্রহণ, কর্মচারীদের বিভিন্ন বিলের টাকা আত্মসাৎ, কর্মস্থলে অবস্থান না করে খুলনার বাসা থেকে আসা যাওয়া, অফিস কক্ষে রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়ে গল্প গুজবে সময় কাটানো, অফিস কক্ষের সামনে পিওন বসিয়ে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে অপরিষ্কার অপরিছন্নতা, জনসম্মূখে

স্যানেটারি ইন্সপেক্টরকে তাজা পুতে ফেলার হুমকি এবং দুর্ব্যবহার, কর্তব্যে অবহেলাসহ নানাবিধ অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তানিয়া রহমান তেরখাদায় যোগদানের পর সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি কাউকেই তোয়াক্কা করেন না বলে জানা গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তানিয়া রহমান প্রতিনিয়ত খুলনা থেকে ৩০/৩৫কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা যাওয়া করেন। তিনি নিয়মিত অফিস করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

তিনি তেরখাদা উপজেলায় যোগদানের পর কোনোদিন সকাল ১০/১১ টার আগে অফিসে আসেন না। যেদিন আসেন তার বেশীরভাগ দিনে তিনি ২টার আগে অফিস ত্যাগ করেন। তিনি সরকারি গাড়ি এবং তেল ব্যবহার করে পারিবারিক, ব্যক্তিগত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, মার্কেটে কেনা কাটা, আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে এমনকি হানিমুন করতেও তিনি সরকারি জীপ গাড়ীটি ব্যবহার করেন। সরকারি এই জীপ গাড়িটি ব্যবহার করতে গিয়ে তিনি এই গাড়ির অনুকূলে বরাদ্দকৃত তেল ছাড়াও এম্বুলেন্স চালকের নিকট থেকে প্রতি মাসে ৬০/৭০ লিটার তেল (অকটেন) দাবি করেন। ইতোমধ্যে তিনি এম্বুলেন্স চালকের নিকট থেকে ১২০ লিটার অকটেন নিয়েছেন বলেও জানা গেছে। তিনি চালককে প্রতিমাসে ৬০/৭০ লিটার তেল দেয়ার জন্য নির্দেশ নিয়েছেন। তেল না দিলে তাকে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন বদলি করে দিবেন বলেও হমকি দিয়েছেন। হুমকি অব্যাহত

রয়েছে বলে জানা গেছে। চালককে ভয় যেগিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে যা তদন্তে প্রকাশ পাবে। গত ৫ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এ্যাম্বুলেন্স যোগে ২০/২২দিন খুলনার বাসা টু তেরখাদা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা যাওয়া করেন। উক্ত তেলের বিলে ডাঃ তানিয়া রহমানের নাম লেখার কথা বললে তিনি এ্যাম্বুলেন্স চালককে দারুণভাবে হেনস্তা করেছেন। এ কথায় চালককে বদলি করে দিবেন হলে হমকি দিয়েছেন। তিনি রোগীদের খাবারের কোনো তদারকি করেন না। ঠিকাদার কর্তৃক মাসোহারা দেয়া হয় বলে জানা গেছে। অপরদিকে রোগীদের প্রতি সপ্তাহে ৪দিন মাংস এবং ৩ দিন মাছ দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয় না। তাছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্নেেক্সে ২০জন রোগী ভর্তি থাকলে অজ্ঞাত কারণে ৩০/৪০জনের বিল ভাউচার করার সুযোগ দেন তিনি। বিনিময়ে তাকে দিতে হয় মাসোহারা। এটিও জনশ্রুতি রয়েছে।

কোনোদিন সকাল ১০/১১টার আগে আউটডোরে বহিরাগত রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ডাক্তার বসেন না। রোগীরা সকাল ৮টা থেকেই স্বাস্থ্য কমপ্লেয়ে ভীড় করে। রোগীদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করা হয় বলেও অভিযোগ আছে। রোগীরা সরকারি ঔষধ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠ কর্মীদের এইচ পিপি (জরায়ু ক্যানসার টিকা) প্রদানের অনারিয়াম ১৮টি ওয়ার্ডে ৯০ জনের (এক মাসের) টাকার আংশিক দিয়ে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কর্মচারীদের বাজেটও দেখান নি। এরা হলেন এফডব্লিটএ, এইচএ এবং পরিদর্শক।

তিনি বেশীরভাগ শনিবার অফিসে আসেন না। গত কয়েকদিন আগে শনিবারে খুলনার সির্ভিল সার্জন তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শনে এসে তাকে উপস্থিত পাননি। তানিয়া রহমানকে সোকজ করা হয়। সোকজ করার পরও তিনি শনিবারে অফিস করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। শনিবারের স্বাক্ষর করেন পরে যেদিন আসেন সেদিন। তিনি প্রত্যেক কর্মচারীদের জিম্মী করে রেখেছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মোঃ জুয়েল রানা একট বিলের টাকার ভাগ দিতে না চাওয়ায় তিনি তেরখাদা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও ইখড়ি দাখিল মাদ্রাসার সুপারের সম্মুখে জুয়েল রানাকে তাজা পুতে ফেলার হুমকি দেন। কারণে অকারণে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কর্মচারীদের সাথে অসদাচারণ করেন তিনি। এছাড়াও জুয়েল রানাকে অন্যত্র বদলি এবং দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ারও হুমকি দেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী রাখি বালার ৮ হাজার টাকার একটি বিল করে তিনি অর্ধেকাংশ রেখে দিয়েছেন।

এমনি করে বিল করলেই তাকে নিতে হয় ৫০% টাকা। তিনি বিগত সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরি নিয়েছেন। তিনি ওই সময় শেখ পরিবারের বিশেষ সুপারিশে বড় ধরণের তদবির নিয়ে এই পদে এসেছেন। সেই দাপট এখনও বিরাজমান। তার পিতা আওয়ামী লীগের দোসর হওয়ায় শেখ পরিবারের সাথে তাদের রয়েছে সখ্যতা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২ কিলোমিটারের মধ্যে কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়োগস্টিক থাকলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন না। অথচ ওই সব ক্লিনিকে দেয়া হচ্ছে অপচিকিৎসা ও ভুল চিকিৎসা। অপচিকিৎসায় ইতোপূর্বে এসব ক্লিনিক থেকে কয়েকজন রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। ওই সব ক্লিনিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার বসেন বলেও জানা গেছে।

তিনি তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রাংশ ( কম্পিউটার, প্রিন্টার, ল্যপটপসহ বিজিন্ন মালামাল মেরামতের নামে বাসায় নিয়ে গেছেন। যা আজও ফেরত আনেন নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ট্রেনিং বা মিটিং এর বিল নিজেই উত্তোলন কয়ে ফাউকে কোনো হিসাব না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। রোগীরা সর্বদা সরকারি ঔষধ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। দামি দামিঔষধগুলো চোখের আড়ালে হারিয়ে যায়। ফলে রোগীদের ভাগ্যে আর ওইসব ঔষধ জোটেনা। গত কয়েকদিন আগে খুলনা থেকে ছাত্র সমন্বয়করা এসে তার অনিয়মের কথা তুলে ধরেন। তিনি তাদেরকে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন নি।

তিনি প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপরাশেন থিয়েটারের এসি টি একটি কোয়ার্টারে লাগিয়েছেন যেখানে তিনি অফিস চলাকালীন সময়ে বিশ্রাম করেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি ঘর নিয়ম বর্হিভূতভাবে বিক্রি করেছেন।

তিনি তার অফিসের দরজার উত্তর পার্শ্বে মাত্র ১০/১২ ফুটের মাথায় একটি লোহার গেট লাগিয়েছেন এবং সেখানে একজন পিওন নিযুক্ত করেছেন। ফলে সাধারণ রোগীরা তার অফিসে প্রবেশ করতে পারে না। তার অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ করে নিয়েছেন। এভাবে প্রতিদিন সাধরণ মানুষ হেনস্তা হচ্ছে। এলাকাবাসী বলছেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট এর দোসর তানিয়া রহমানের খুঁটির জোর কোথায়? উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তানিয়া রহমানের ০১৭০১২৪৮৫৮৯ নাম্বারে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেন নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top