দিঘলিয়ার প্লাস্টিকের আধিক্যে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে

462645464_572566812043273_4715871468656068752_n.jpg

সৈয়দ জাহিদুজ্জামান দিঘলিয়া খুলনা থেকে ::::: খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প প্রয়োজনীয় অর্থ, জ্বালানির অভাব ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ বিলুপ্তির পথে। যথাযথ কদর না থাকায় এবং বিভিন্ন রকম সমস্যায় জর্জারিত মৃৎশিল্পের ধারক এবং বাহক পাল বংশের লোকজন এখন ভিন্ন পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। চেষ্টা ও মনের ঐকান্তিক ইচ্ছে থাকলেও বংশ পরস্পরায় বয়ে আসা ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে ধরে রাখতে পারছেনা পাল বংশের লোকজন। অথচ মৃৎশিল্পকে পুঁজি করে একসময় দিঘলিয়া উপজেলার পাল বংশের লোকদের জীবিকা নির্বাহ হত। দিঘলিয়া উপজেলা একসময় মৃৎশিল্পের জন্য সুনাম ছিল। দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি, ফরমাইশখানা, বারাকপুর, গোয়ালপাড়া, গাজীরহাট, দিঘলিয়া, পানিগাতি প্রভৃতি গ্রামে মৃতশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পাল বংশের লোকেরা বসবাস করত। বর্তমানে অনেকেই তাঁদের পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়েছে। তাঁরা একসময় মাটি দিয়ে হাঁড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন, পানির কলস, টব, ফুলদানি, মাটির ব্যাংক, ফুল-ফল, নানা ধরণের খেলনা, হিন্দুধর্ম অবলম্বীদের নানা দেব-দেবীর মূর্তি, রসের হাড়ি, দেয়াল শোপিজসহ নানা জিনিসপত্র তৈরি করতেন এ সকল মৃতশিল্পীরা।

 

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিখন সহায়ক উপকরণ হিসেবে মৃৎশিল্পের কদর ছিল। সময়ের পরিবর্তনে আজ মৃতশিল্পের কদর হারিয়ে যেতে বসেছে। কারণ খুঁজতে গিয়ে মৃতশিল্পীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এখন মাটির জিনিসের পরিবর্তে প্লাস্টিক কিংবা চাচ জাতীয় জিনিসপত্র মৃৎশিল্পের জায়গা দখল করে নিয়েছে। এখন আর মৃতশিল্পের পণ্য নিয়ে পাল বংশের লোকজনকে ফেরি করতে দেখা যায় না। মৃৎশিল্পের জন্য মাটিও এখন টাকা দিয়ে কিনতে হয়। সময়ের পালা বদলে মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। এশিল্পের ওপর নিয়োজিত অনেকেই এখন ভিন্ন পেশায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ফরমাইশখানা পাল বাড়িতে গিয়ে কথা হয় মৃৎশিল্প ব্যবসায়ী নারান পালের সাথে। তার বয়স ষাটোর্ধ্ব। বৃটিশ আমল থেকে তাঁর পূর্ব পুরুষরা মৃৎশিল্পকে পেশা হিসেবে নিয়ে ছিল। শখে নয় পৈতৃক পেশাকে স্মৃতিময় করে রাখতে তিনি এখনও আছেন এই পেশায়। এই পেশার সাথে জড়িত নিতাই পাল, গোপাল পাল, নেপাল পাল, মন্টু পাল, অরুণ পাল ও দোলাল পাল এ প্রতিবেদককে জানান, মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন ক্ষুদ্রঋণ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণ ও মৃৎ শিল্পীদের উৎপাদিত মাটির জিনিসপত্রের বহুমূখী ব্যবহার নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে খুলনা ও স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এ পেশায় নিয়োজিত শিল্পীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top