দিঘলিয়া উপজেলায় টানা তিনদিনের প্রবল বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ফসল ও মাছের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

IMG_20240918_114816.jpg

Oplus_131072

সৈয়দ জাহিদুজ্জামান দিঘলিয়া খুলনাঃ খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলায় গত ৩ দিনের হালকা ও ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অতি সম্প্রতি রোপা আমন, পানের ক্ষেত ও সবজি ক্ষেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সহস্রাধিক বিঘার ঘের-বেড়ি ও পুকুর নিমজ্জিত হয়ে লাখ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ ও চিংড়ি মাছের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। এ সকল ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় অনেক জায়জায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, গত ৩ দিন ধরে দিঘলিয়া উপজেলায় কখনও হালকা

আবার কখনও ভারি বর্ষণের কারণে এ জনপদের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সম্প্রতি রোপা আমন ধানের জমি, পানের বরজ ও সবজী ক্ষেতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সহস্রাধিক বিঘার ঘের-বেড়ি ও পুকুর নিমজ্জিত হয়ে লাখ লাখ টাকার সাদা মাছ ও চিংড়ি মাছের ক্ষতি হয়েছে। পান চাষি, ধান চাষি, সবজি চাষিসহ শত শত মাছ চাষিদের জীবনে নেমে এসেছে দুশ্চিন্তার ভাল।
অনেক মানুষের বসত বাড়িতে পানি জমা হয়ে পড়েছে। এ জনপদে অপরিকল্পিত আবাসন, পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা, খালগুলোতে পাটা ও জাল পেতে মাছ ধরা ও পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, স্লুয়েজ গেট সংযুক্ত খালগুলো সংস্কার না করায় খালের নব্যতা ও প্রশস্ততা কমে

যাওয়ার কারণে পানি দ্রুততার সাথে নদীতে নামতে না পারা, স্লুয়েজগেটগুলো পানি নিষ্কাশন ও বন্ধের উপযুক্ততা হারিয়ে ফেলা অর্থাৎ মেরামত না করার কারণে বিকল হওয়া, উপজেলার খালগুলোর নদী সংযোগ স্থলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত স্লুয়েজ গেটগুলোর কার্যকারিতা অকার্যকর, ষড়যন্ত্রকারিদের অব্যবস্থাপনা বলবৎ রাখতে চলমান খাল খনন কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়া, বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে এ জলাবদ্ধতা ও ক্ষয়ক্ষতির কারণ বলে বিজ্ঞমহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
দিঘলিয়া ও পানিগাতির ক্লাস্টার পদ্ধতির চিংড়ি চাষিরা বলেছেন দিঘলিয়ায় চলমান খাল খনন কর্মসূচি নানা ষড়যন্ত্রকারিদের গোপন যড়যন্ত্রের কারণে অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয় কলহ সৃষ্টি করে বন্ধ করে দেওয়ার কারণেই দিঘলিয়ার মৎস্য চাষিদের এ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যা তাদের পূরণ হওয়ার নয়।

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার দিঘলিয়া এ প্রতিবেদককে জানান, বিগত ৩ দিনের হালকা ও ভারী বর্ষণে এ উপজেলায় ৫৫০ টি ঘের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নানা জাতের মাছ ও মাছের পোনা ভেসে গেছে। প্লাবিত ঘেরের পরিমাণ ১৫৫ হেক্টর। এ সকল ঘের প্লাবিত হয়ে সাদা মাছ ১৬০ মে.টন, চিংড়ি ৪৫ মে.টন এবং ৮০ লক্ষ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ৮০ লক্ষ পানির টানে ভেসে গেছে। যার ফলে মৎস্য চাষিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাদা মাছ ২কোটি ৭০ লক্ষ টাকা, চিংড়ি ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, পোনা ৩ কোটি টাকা। অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকার। মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৯কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।
তিনি আরও জানান, দিঘলিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ের মধ্যে ৪ টি ইউনিয়নে মৎস্য চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো বারাকপুর, দিঘলিয়া, সেনহাটি ও যোগীপোল। তার মধ্যে দিঘলিয়া ও বারাকপুরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।

তবে এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে ওঠা ক্লাস্টার পদ্ধতির চিংড়ি ঘেরসহ সাদা মাছের ঘের ও পুকুর নিমজ্জিত হয়ে মাছ বেরিয়ে গেছে। এ কারণে কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। গাজীরহাট ইউনিয়নসহ অনেক পুকুরের মাছ বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়ে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকা ছড়িয়ে যেতে পারে।

এদিকে দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ কিশোর আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, গত তিন দিনের বর্ষণে ১০০০ হেক্টর রোপা আমন, ১৫০ হেক্টর সবজী ক্ষেত ও ৫ হেক্টর পানের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পানি সরে গেলে ক্ষয় ক্ষতি কম হতে পারে। এক সূত্র থেকে জানা গেছে, দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্লুইসগেট সংযুক্ত খালগুলোর স্লুইসগেটের চাবি দায়িত্বশীল লোক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া প্রয়োজন। ভাটায় পানি নিষ্কাশনের পরবর্তী জোয়ারের পানি যাতে খালে না ঢুকতে পারে তার ব্যবস্থা সংশ্লিকর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে সঠিক বাস্তবায়ন কৃষকদের জোর দাবী।
এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার ভুক্তভোগী মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top