মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)  এর জীবনদর্শন

IMG_20240916_191329.jpg

Oplus_131072

মিজানুর রহমানঃ সলাম ব্যবহারিক ও সামাজিক ধর্মসমাজের প্রথম ও আদি ধাপ হলো ব্যক্তি।কাজেই ব্যক্তি যদি সৎকর্মশীল না হয়, সমাজকখনও সৎ ও মহৎ হতে পারে না। ব্যক্তির জীবন ওসমাজ, এই দুইয়ের সমন্বয় ও পারস্পরিকসহযোগিতার ওপরেই মানুষের কল্যাণ ও শান্তিনির্ভরশীল। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ(সা.) তাঁর বাণী ও কাজের মাধ্যমে অত্যন্তসুন্দরভাবে এই সমন্বয় ও সহযোগিতার পথনির্দেশদিয়ে গেছেন।১৪শ’ বছর আগে মহানবী (সা.) যে জীবন দর্শনবিশ্ববাসীর সামনে স্থাপন করেছেন, আজও তাপুরোনো হয়নি। বর্তমান সমাজ অনেক জটিলহয়েছে। লোকসংখ্যা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারেরফলে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে দেখা দিয়েছে অজ্ঞাতবহু সমস্যা। মানুষের আর্থ-সামাজিক জীবন আগেরমতো এখন আর সরল নেই। অনেক

দুরূহ ও কঠিনহয়েছে। একমাত্র মহানবীর (সা.) দেওয়া শিক্ষা ওজীবনদর্শন এই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলাকরতে সক্ষম এবং বর্তমান সমস্যাসংকুল পথেএকমাত্র আলোকবর্তিকার কাজ করতে পারে।কারণ মহানবী (সা.) বলেন, যে আমার সুন্নত থেকেবিমুখ হলো, সে আমার লোক নয় (সহি মুসলিম)।মহানবীর (সা.) জীবনটাই ছিল উন্মুক্ত আর তাঁরসাহাবারাই তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করে গেছেন।তিনি নিজে বলেছেন, আমি তোমাদের মতোইমানুষ। আমার নিকট শুধু আল্লাহর বাণী অবতীর্ণহয়। আর মানুষ হচ্ছে আশরাফুল মাখলুকাত বাসৃষ্টির সেরা। তিনি মানুষকে দিয়েছেন স্বীকৃতি,সম্মান ও মর্যাদা। ‘স্ত্রীর মুখে এক গ্রাস খাবার তুলেদেওয়াও পুণ্য, যে নিজের সন্তানদের ভালোবাসে না,সে আমার কেউ নয়। চাকরকে কতবার ক্ষমাকরতে হবে- দিনে অত্যন্ত ৭০ বার বলেছেন। জনৈক

বেদুইন একবার মসজিদে নববিতে দাঁড়িয়ে প্রস্রাকরছিল, সাহাবিরা মারমুখো হয়ে ছুটে এলেন।মহানবী (সা.) বললেন, আগে তাকে তার কাজ শেষকরতে দাও। পরে ওখানে এক মশক পানি ঢেলেদাও। মানুষের কাজ সহজ করার জন্যই তোমাদেরসৃষ্টি করা হয়েছে, কঠিন করার জন্য নয়। এভাবেইমানুষ ও মনুষ্যদের প্রতি রেখে গেছেন শ্রদ্ধার একঅনুপম দৃষ্টান্ত। সুতরাং মানুষ অনুধাবন করেছে,সর্বোত্তম জীবন পদ্ধতি হলো মহানবী (সা.) প্রদর্শিতপদ্ধতি (সহি মুসলিম)।মহানবী (সা.) এতিম ছিলেন। অনেকটা অসহায় ওছিলেন। তবু জীবনে কারও কাছে তিনি হাতপাতেননি। তিনি মেষ চরিয়েছেন, দূরদেশে গিয়েবাণিজ্য করেছেন। মহানবীর (সা.) জীবন ও তাঁরশিক্ষা থেকে অনুধাবন করা যায়। যে যুগ ও সমাজেতিনি জন্মগ্রহণ

করেছিলেন, তা ছিল অত্যন্তঅধঃপতিত। কিন্তু তাঁর কল্যাণমুখী ব্যক্তিত্বের কারণেইতিহাস এবং সেই সঙ্গে ধর্মীয় প্রশ্নে নবীদেরসিলমোহর হিসেবেই নিজেকে প্রতিপন্ন করেন।মহানবী (সা.) বলেছেন, শ্রমিকের গায়ের ঘামশুকানোর আগেই মজুরি দিয়ে দাও। যে ব্যক্তি পেটভরে খায় অথচ তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকে, সেমুমিন নয়। মৃত্যুশয়া থেকে তিনি হজরতআয়েশাকে (রা.) নির্দেশ দেন তার সামানা অর্থওবিলিয়ে দিতে। তিনি দেখিয়েছেন আমাদের সত্য ওসঠিক পথ; বলেছেন কোরআনকে আঁকড়ে ধরো,তাহলে কখনও বিপথগামী হবে না (মিশকাত)।আল্লাহর ইচ্ছায় হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত

ও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন। মহানবী(সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসুল ছিলেন।আল্লাহতায়ালার বাণীবাহক ছিলেন। কিন্তু দৈনন্দিনজীবনে তিনি ছিলেন সর্বতোভাবে একজন আদর্শমানুষ। তিনি এমন কোনো অসম্ভব, অস্বাভাবিক বাআজগুবি আদেশ-নির্দেশ দেননি, যা পালন করাসাধারণ মানুষের পক্ষে ছিল দুঃসাধ্য। পেশাদার প্রচারকের মতো তিনি শুধু অপরের জন্য উপদেশদেননি। নিজের জীবনে সেগুলো বাস্তবায়নকরেছেন। অনেক মহাপুরুষের সঙ্গে এখানেই তাঁরবড় তফাত।যে সমাজ ও যুগে প্রিয় নবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাছিল অত্যন্ত সমস্যাসংকুল। পৌত্তলিকতা ছাড়াওআরবে যেসব ধর্মমত চালু ছিল, সেগুলো আল্লাহরতাওহিদকে প্রতিষ্ঠা করতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়।এরূপে যখন তদানীন্তন বিশ্বের মানুষ নৈতিকঅধঃপতনে নিমজ্জিত হয়, ঠিক সে সময়ে আল্লাহরআখেরি

নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইসলাম ধর্মেরপয়গাম নিয়ে আসেন এবং অতি অল্প সময়ে অধঃপতিতপৃথিবীকে সত্যের আলোকে উজ্জীবিত করেন।রাসুল (সা.) এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন।এখানকার কোনো নশ্বর বস্তু তিনি কারও জন্যরেখে যাননি। শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসে ঠিকএকই অবস্থায় বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু মানবজাতির জন্য রেখে গেছেন পবিত্র ইসলাম ওইসলামী তাহজিব-তমদ্দুনরূপী সম্পদ। এরসজীবতা দানকারী ঝর্ণাধারা থেকে তৃষ্ণার্ত পৃথিবীকেয়ামত পর্যন্ত পিপাসা নিবারণ করতে থাকবে।এরূপে আমাদের প্রিয় নবী এক অনুপম আধ্যাত্মিকসম্পদ ইসলাম রেখে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন।আল্লাহতায়ালা তাঁর ধর্মকে সাহায্য করবেন এবংপ্রতিটি বাতিল ধর্মের ওপর বিজয়ী করবেন। এটাআল্লাহতায়ালার ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি। পরিশেষেএই মহান পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে প্রিয়নবীর  জন্ম দিনে আত্মার প্রতি দরুদ ও সালাম ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top