সৈয়দ জাহিদুজ্জামান দিঘলিয়া খুলনা থেকে::::: খুলনায় বিলুপ্তের পথে বড় ধরণের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন কালো জাম। সবুজ রংয়ের এই ফল পাকলে রং হয় কালো। তাই সবাই এই ফলকে কালো জাম বলে জানে। এই পাকা জাম খেলে পরে ঠোঁটসহ মুখের ভেতরে রঙ্গীন হয়ে পড়ে। তাইতো কবি বলেছেন, “ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ, পাকা জামের মধুর রসে রঙ্গীন করি মুখ।” মধুমাস চললেও আগের দিনের মত ছোট শিশুদের মুখে এ ফলের রঙ্গীন রসের রং আর দেখা যায় না। বিলুপ্তের পথে এসে দাঁড়িয়েছে এ ফল। মেলে না কালো জামের দেখা। এক সময় মানুষ জাম গাছ তলায় যেত না কালো জামের রসের ভয়ে। শেষ হয়ে গেছে মধুমাস, মধু মাসে আমাদের এ খুলনা অঞ্চলে নানান প্রজাতির ফল-ফলাদি দেখা যায়। এই মধু মাসে আম-জাম-কাঁঠালের মিষ্টি রসে যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এর মাঝে অন্যতম ফল হলো
কালো জাম। পরম উপকারী এই কালো জাম ফলটি সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। এই ফলটি নানান দেশে নানান নামে পরিচিত। যেমনঃ- জাম্বুল, জাম্বু, জামুল, কালোজাম ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে খুলনা জেলায় সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে জামগাছ। নানা কারণে এ অঞ্চলে বিলুপ্তির পথে জামগাছ। অন্যান্য সব ফলের তুলনায় জামের স্থায়ীত্বকাল কম হলেও এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। কালো জামের স্বাদের কারণে মাসের নাম পরিচিত হয়ে দেখা মিলে মানুষের মুখে মুখে। তাইতো জৈষ্ঠ্য মাসকে মধুমাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এ ফলকে কেন্দ্র করে। এ মাসে হরেক রকমের ফল যেমন, আম, কাঁঠাল, লিচু, ডেফয়া, লটকন, কালো জাম, জামরুল, আতাফল, কাউফল, শরীফাসহ নানা ফল পাকতে শুরু করে। মধুর স্বাদের ফল পাওয়া যায় জ্যৈষ্ঠ মাসে। শুধু ফল নয় জাম গাছ তীব্র রোদে পশুপাখি ও মানুষদের স্নিগ্ধছায়া দান করে। জাম গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি হতো বাহারী সব আসবাব পত্র। সম্প্রতিকালে খুলনার বিভিন্ন জায়গায় এই জাম গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
আগে বিভিন্ন রাস্তায়, মহাসড়কে, বাড়ির আঙ্গিনায়, পুকুর পাড়ে সব সময় চোখে পড়তো জাম গাছের। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন জাম গাছ রোপণ না করায় এবং বড় গাছগুলো কাটা পড়ায় গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। বিগত দিনগুলোতে কিছু মানুষ জাম বিক্রি করে নিত্য দিনের আয় করতেন। খুলনা জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে কালোজাম বিক্রি হলেও দাম চড়া। কিন্ত বর্তমানে গাছের পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে বাজারে এক কেজি কালো জাম বিক্রি হচ্ছে ৩ শত থেকে পাঁচশত টাকায়। মনিষীদের মতে জামে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে। এটি একটি অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান যা মানবদেহ নিজ থেকে উৎপাদন করতে পারে না। তাছাড়া শরীর থেকে দ্রত ভিটামিন সি বের হয়ে যায় এবং দেহ এটি সংরক্ষণ করতে পারে না। ফাউন্ডেশনের তালিকা অনুযায়ী, ভিটামিন সি দেহের কোষের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ঠান্ডা দূর করে, স্মৃতি উন্নত করে এবং চোখের লেন্স’য়ে প্রোটিনের ক্ষয় দূর করে ছানি পড়া রোধ করে। সময়ের পরিবর্তনে জেলায় চাষীরা
নানাবিধ ফল ফলাদি চাষ করছেন। যার চাপে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে পুরনো দিনের জামগাছগুলো। যার ফলে একদিকে যেমন হারাতে বসেছে জামগাছ অপরদিকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে একটি অত্যাবশকীয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল হতে। বর্তমান সময়ে জাম গাছ লাগিয়ে প্রাচীন এ ফলটি রক্ষা করা এখন সময়ের দাবী বলে মনে করছেন বিজ্ঞমহল। দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ কিশোর আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনা অঞ্চলে প্রচুর জাম গাছ ছিল। কালের বিবর্তনে বড় বড় জামগাছগুলো কাটা পড়ছে বা হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিবছর বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি পালন করা হলেও জামগাছ লাগানো হচ্ছেনা। যে কারণে দিন দিন খুলনা অঞ্চল থেকে জামগাছ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের এ মুহূর্ত থেকে বাড়ির আঙ্গিনায়, রাস্তার পাশে অন্যান্য ফলজ ও বনজ বৃক্ষের পাশাপাশি জামগাছ লাগাতে হবে।