মোকাররম হোসেন, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) :::: ঈদ শেষে জীবিকার প্রয়োজনে কর্মমুখী মানুষ ছুটছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বেশিরভাগ লোকের গন্তব্য রাজধানী ঢাকা। ঈদের ছুটি শেষে সবাইকে ফিরে যেতে হচ্ছে নিজ নিজ কর্মস্থলে। তাই যত ভোগান্তিই হোক না কেন কর্মস্থলে ফিরতেই হবে।যাত্রীদের এ ব্যস্ততাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী থেকে রাজধানী মুখী যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। সরেজমিনে বুধবার সন্ধ্যায় ও বৃহস্পতিবার সকালে ফুলবাড়ী শহরের ঢাকাগামী বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, দিনাজপুর থেকে ফুলবাড়ী হয়ে প্রতিদিন ঢাকা যাতায়াত করে প্রায় ৪০টি কোম্পানীর বাস । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টার প্রাইজ, এস আর ট্রাভেলস, শ্যামলী (এসপি) পরিবহনসহ, শ্যামলী (এনআর পরিবহণ), হক এন্টার প্রাইজ, রাহবার, আরাফাত ক্যারেজ, তৃপ্তি পরিবহণ, আহাদ, শুকরিয়া পরিবহণ, আসাদ ও যুথি পরিবহণসহ অন্যন্য।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে প্রতিটি কাউন্টারে নির্ধারিত ভাড়ার মুল্য তালিকা ঝোলানোর নিয়ম থাকলেও কোন বাসের কাউন্টারে এমন তালিকা দেখা যায়নি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃক ০২/০৪/২০২৪ তারিখে ওয়েবসাইডে প্রকাশিত নির্ধারিত ভাড়া তালিকা অনুযায়ী উল্লেখ করা হয়েছে দিনাজপুর-ঢাকা নন এসি নরমাল কোসে (বাসে) ৯২১ টাকা ভাড়া । কিন্তু সরজমিনে দেখা যায় এর ভিন্ন চিত্র। নির্ধারিত ভাড়া উপেক্ষা করে বিভিন্ন কোম্পানীর কাউন্টার গুলো ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করছে। এসব কাউন্টার গুলোতে ১২০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকায় টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ যাত্রী সাধারণের। ফুলবাড়ী পৌর এলাকার কাঁটাবাড়ী গ্রামের ঢাকাগামী যাত্রী জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা স্বামী স্ত্রী ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকুরী করি । টিকিটের জন্য বিভিন্ন কাউন্টারে ঘুরে আহাদ এন্টারপ্রাইজে টিকেট পেয়েছি; কিন্তু ভাড়া অনেক বেশি।
দুটি টিকেট প্রতিটি ১৩০০ টাকা হিসেবে ২৬০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। তিনি বলেন, ফুলবাড়ী থেকে ঢাকাগামী টিকেট ঈদের পূর্বে ছিল ৮০০ টাকা। ঈদ উপলক্ষে ৯৪০ টাকার কথা আমরা জানি। তবে সব পরিবহনের ভাড়া ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে আহাদ এন্টার প্রাইজের কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা ফয়জার রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মালিকপক্ষের বেঁধে দেয়া দামেই টিকেট বিক্রি করছি। প্রতিটি টিকেট থেকে মাত্র ১০০ টাকা কমিশন পাই। অনলাইনের টিকেট বেশি নেওয়ার কোন উপায় নেই। একই কথা বলেন, নাবিল পরিবহণের ম্যানেজার মামুনসহ অন্যন্য কাউন্টার মালিকরা। এদিকে নাম না প্রকাশের শর্তে এক কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, বাস গুলো ঢাকা থেকে ফাঁকা আসছে। শুধুমাত্র দিনাজপুর থেকে যাওয়ার সময় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। তাই একটু ভাড়ায় তারতাম্য হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত একজন যাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২১ জুন ঢাকা যাওয়ার জন্য তিনি এসি কোচের (বাসের) টিকিট কিনেছেন
নির্ধারিত মূল্যের ৫০০ টাকা বেশিতে। তিনি আক্ষেপের সাথে বলেন, ‘প্রতি ঈদেই এভাবে আমাদের পকেট কাটা হয়। সরকার নানা কথা বলেন, বাস্তবে কোন প্রভাবেই পড়েনা এবং বাস ভাড়া নিয়ে এত নৈরাজ্য হলেও এতে নজর নেই প্রশাসনের। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, বাস কাউন্টারগুলোতে বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা রাখতে হবে। ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণ করলে সেই তালিকাও প্রদর্শন করতে হবে। যদি কেউ আইন অমান্য করে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী জানান, বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত যে ভাড়া বেঁধে দেয়া হয়েছে, তার তালিকা প্রতিটি কাউন্টারে প্রদর্শন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ভাড়া নিতে হবে। বিষয়টি কাউন্টার মালিকদের অবগত করা হয়েছে। এর বাইরে যদি কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন বা মুল্য তালিকা প্রদর্শন না করেন তবে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।