দিঘলিয়ায় কুরবানীর ঈদকে সামনে রেখে গরু-ছাগল পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা

InShot_20240612_002531705.jpg

 সৈয়দ জাহিদুজ্জামান দিঘলিয়া খুলনা থেকে :::::  কোরবানির ঈদের আর মাত্র ৫ দিন বাকি। খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু ছাগল লালন-পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। বিভিন্ন এলাকার কুরবানি ও আকিকার পশু ক্রেতারা ইতিমধ্যে খামারে যাতায়াত শুরু করেছেন গরু ছাগল ক্রয় করার জন্য। এলাকার কয়েকজন খামারি জানান, কয়েকদিন পরেই পুরোদমে শুরু হবে কোরবানির পশু বেচা-কেনা। তাই দিনরাত পরিশ্রম করে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এ উপজেলায় সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু ছাগল পালন করছেন খামারীরা। শেষ মুহুর্তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। গতবারের লোকসান এবারের কোরবানীর ঈদে কিছুটা পুষিয়ে

 

নেয়া যাবে বলে খামারীরা আশা পোষণ করছেন। কারণ গত বছরের চেয়ে এ বছর গরুর দাম ও চাহিদা বেশী। যে পরিমাণ দেশি গরু ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে তা দিয়েই দিঘলিয়া উপজেলার মানুষের কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। তাই চোরাই পথে যাতে ভারতীয় পশু ঢুকতে না পারে সেদিকে নজর রাখার জন্য আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থার কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি খামারিরা জোর দাবি জানিয়েছেন। কোরবানীর ঈদকে ঘিরে পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশি জাতের গরু ও ছাগল পালন করা হয়েছে দিঘলিয়া উপজেলার বিভিন্ন খামারে। পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু ছাগল পালনে খরচ অনেকটা বেড়েছে। এ সকল কারণে অন্যান্য সময়ের চেয়ে গরু ছাগলের দাম কিছুটা বেশি হতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলায় কোরবানির জন্য পশু খামারিরা পশু প্রস্তুত করেছেন

 

৫ হাজার ৫৫১টি। এ উপজেলায় নিজস্ব চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার পশু। যা চাহিদার চেয়ে ১ হাজার ৫৫১টি বেশি। তাই এবার উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে দিঘলিয়ার খামারিদের প্রস্তুত করা পশু সরবরাহ করা সম্ভব হবে। খান মোজাফফর হোসেন ডেইরি ফার্মের মালিক দিঘলিয়া গ্রামের বাসিন্দা খান এরশাদ আলী সবুজ ২০১৫ সালে ৫৫টি গরু দিয়ে শুরু করেন তার ডেইরি ফার্ম। ৯ বছরের মাথায় এখন তার ৭০টি গরু সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করা হয়েছে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, তার ফার্মের অনেক গরু বিক্রি হয়ে গেছে। অনেক গরু বায়না হয়ে গেছে। বাকী গরু ফার্ম থেকে বিক্রি হয়ে যাবে। কোনো হাটে নেওয়া লাগবেনা। বড় গরুগুলো খুলনা শহর থেকে লোকজন এসে কিনে নিয়ে যায়। দিঘলিয়া গ্রামের অপর এক খামারী মুরাদ হোসেন সোহাগের আকন এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার মোহাম্মদ মিল্টন জানান, তাদের খামারে বর্তমানে কোরবানিযোগ্য

 

গরু আছে ৫৫ টি । বছরজুড়ে খড়, কুটা, খৈল, ভুষি ও ঘাস খাইয়ে গরু গুলি লালন পালন করা হচ্ছে। তাদের নিজস্ব জমিতে ঘাস উৎপাদন করা হয়। ২০২০ সালে ২০টি গরু নিয়ে খামারটি যাত্রা শুরু করে। কোরবানীর ঈদে সবগুলো গরু বিক্রি হবে এমন আশা তাদের। খামারিরা আরো বলেন, এবার পশুর সঠিক দাম পেলে আগামীতে পশুর খামার আরো বাড়বে এ উপজেলায়। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দিঘলিয়া উপজেলার মোল্লাডাঙ্গা গ্রামের রাজু শেখের খামারে ৭৫ টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি বলেন, গরু বিক্রির বাজার এবার বেশ ভালো, ঈদ পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে থাকলে গরু বিক্রি করে আমি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হব। ঈদের আগেই আমার খামারের সমস্ত গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে আমি আশা পোষণ করছি। উপজেলার ৬৬৮ টি খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে চলছে প্রায় ৫ হাজার ৫৫১টি পশু লালন পালনের কাজ। উপজেলার সবগুলো খামারে দিনরাত সমানভাবে ফার্মের গরু ছাগল গুলোকে পরিচর্যা করা হচ্ছে। রাসায়নিক খাবারের পরিবর্তে খামারের পশুগুলোকে প্রাকৃতিক খাবার খড়, কুটা, খৈল, ভুষি

 

ও ঘাস খাইয়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন খামারিরা। কোরবানীর ঈদে সবগুলো গরু ছাগল বিক্রি হবে এমন আশাও খামারিদের। এদিকে এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২/৪ টা করে যাড় ও ছাগল লালন-পালন করেন অনেকে। আর খামারীদের ও ব্যক্তিগত লালন করা পশু বিক্রির জন্য দিঘলিয়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ৪টি কুরবানির পশুর হাট বসেছে। হাটগুলো হলো গাজীরহাট ইউনিয়নের মোল্লাডাঙ্গা-কেটলা হাট, দিঘলিয়া ইউনিয়নের দিঘলিয়া এমএ মজিদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ, সেনহাটি ইউনিয়নের পথের বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ ও যোগীপোল ইউনিয়নের তেলিগাতী বাইপাস সড়কের পাশে। এ সকল হাটে ব্যাপক পরিমাণ কুরবানি ও আকিকার পশু শতভাগ স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপত্তার সাথে ক্রেতাগণ গরু কিনতে

 

পারবেন বলে বিভিন্ন হাট কর্তৃপক্ষ এ প্রতিবেদককে জানান। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার ফজলুল করিম বলেন, এবার দিঘলিয়া উপজেলায় গরু ছাগল রয়েছে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। আমাদের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম প্রতিনিয়ত খামারিদের নানাভাবে পরামর্শ ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কোন প্রকার রাসায়নিক খাবার যেন পশুকে না খাওয়ানো হয় সে বিষয়েও খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে গরু ছাগল পালতে খামারিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানায় জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এবার কোরবানিতে খামারিরা গরু ছাগলের ভালো দাম পাবেন বলে আশা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top