সৈয়দ জাহিদুজ্জামান দিঘলিয়া খুলনাঃ দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি এ্যাম্বুলেন্স চালক মফিজুল মিনার বিরুদ্ধে ঝড়-বৃষ্টির রাতে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে আনার ব্যাপারে অস্নীকৃতি জানানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার রাত পৌনে ১২টা বাজে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবের রাত। চারদিকে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি পড়ছে। ঠিক এমন সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম (৬৫)। এ সময় নিরুপায় তার ছেলে জামাল হোসেন মাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ফোন দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স চালক মফিজুল মিনাকে। চালক মফিজ মিনা ফোনে সাফ জনিয়ে দিলেন আমি এখন ঘুমাচ্ছি, যেতে পারবো না। রোগী হাসপাতালে নেওয়ার দরকার হলে অন্য ব্যবস্থা করেন।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমালে জরুরি স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষ ১০টি নির্দেশনা ছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। যদিও তার ব্যতিক্রম ছিল খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সব হাসপাতালকে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করতেও নির্দেশনা দেয় অধিদপ্তর। সব পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতেও বলা হয়। জরুরি অবস্থার জন্য সার্বক্ষণিক এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখারও নির্দেশনা দেওয়া ছিল। কিন্তু বাস্তবে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অতিরিক্ত কোন জনবল নিয়োগতো ছিলই না। পক্ষান্তরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা রাতে কর্মস্থলেও ছিলেন না। তারা স্ব স্ব বাসায় অবস্থান করেছেন। শুধুমাত্র মেডিকেল অফিসার শাওন বিশ্বাস, উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দুলাভ বিশ্বাস ও প্রতিদিনের মত ডিউটি নার্স দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
এদিকে, রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম (৬৫) বুকে ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার জন্য তার পুত্র সাংবাদিক
জামাল হোসেন এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ মফিজুল মিনাকে ফোন দিয়ে রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এ্যাম্বুলেন্স চালক বলে ‘আমি এখন ঘুমাচ্ছি, আসতে পারবো না’। রোগী হাসপাতালে নেওয়ার দরকার হলে অন্য ব্যবস্থা করেন বলে জানান এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ মফিজুল মিনা ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ মফিজুল মিনার অবহেলার কারণে দিঘলিয়া উপজেলাবাসী এ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বরং টাকার বিনিময়ে উপজেলা থেকে খুলনা শহর ও বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার কোন রোগী তাকে ফোন দিলে হয় ফোন রিসিভ করেনা অথবা তাকে অন্য কোন ব্যবস্থা করতে বলে বেশিরভাগ সময়। টাকা কম পাওয়ার কারণে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী বহনে আগ্রহটা কম থাকে সবসময়। এমনকি মফিজুল মিনার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ মানুষের মুখে মুখে। একটা প্রভাবশালী মহলের ইশারায় মফিজ মিনা তার স্বেচ্ছাচারিতা ও নানা অনিয়ম বছরের পর বছর চালিয়ে আসছে। যার আশু প্রতিকার চাই এলাকাবাসী।
এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ মফিজুল মিনা এ প্রতিবেদকে বলেন, আমি এখন রোগী হাসপাতালে আনতে পারবো না। আপনাদের হাসপাতালে যদি আসতে হয় তাহলে অন্য ব্যবস্থা করেন। আমি এখন বাসায় রয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাহবুব আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ মফিজুল মিনার সার্বক্ষণিক হাসপাতালে অবস্থান করার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু সে নির্দেশনা মানেনি। এ বিষয়ে খুলনা সিভিল সার্জন স্যারের সাথে কথা হয়েছে এ্যাম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুম বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, রোববার লিখিতভাবে সব দপ্তরকে স্ব স্ব কর্মস্থলে থাকতে বলা হয়। কিন্তু এ্যাম্বুলেন্স চালক মোঃ মফিজুল মিনা
রাতে হাসপাতালে না থেকে বাসায় ঘুমিয়ে থাকাটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। ঝড়-বৃষ্টির রাতে রোগীদের হাসপাতালে কেন আনেনি সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ সফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশনা রয়েছে। সে নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স চালক কেন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন সে বিষয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।