খুলনা প্রতিনিধিঃ গিলাতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রশ্নবিদ্ধ ম্যানির্জিং কমিটির মেয়াদ শেষান্তে নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার শুরুতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইকবাল কবিরের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার পুত্র ও ম্যানির্জিং কমিটির সাবেক সভাপতি শেখ হারুন অর রশিদ ফুলতলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। ভোরের দর্পনের অনুসন্ধানে ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার খাতা এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যে দাতা সদস্য সংগ্রহে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ম্যানিজিং কমিটি দায়িত্বগ্রহণের পর নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম যেন পিছু ছাড়ছে না। বিদ্যালয়টির ম্যানিজিং কমিটি এবং নিয়োগের বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ড, খুলনা জেলা প্রশাসক, ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা
অফিসারের কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ যাওয়া সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে শুরুক্রবার বিকালে জরুরী অভিভাবক ও সুধী সমাবেশের আহবান করেছেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার পুত্র ও ম্যানির্জিং কমিটির সাবেক সভাপতি শেখ হারুন অর রশিদ। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার পুত্র ও ম্যানির্জিং কমিটির সাবেক সভাপতি শেখ হারুন অর রশিদের অভিযোগের সুত্র ধরে বিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার খাতা, খন্ডকালিন দাতা সদস্যদের টাকা জমা দেওয়ার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা খুজে পাওয়া গেছে। সুত্র বলছে, বিদ্যালয়ের খন্ডকালিন দাতা সদস্য সংগ্রহের জন্যে দৈনিক পূর্বাঞ্চল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ২ এপ্রিল অফিস বিধি(সময়) মোতাবেক ব্যাংকে টাকা জমার রশিদসহ আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য।
বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর আব্দুল কুদ্দুসের গত ২ এপ্রিল(আবেদনপত্র জমা দানের শেষ দিন) স্বক্ষরিত রেজিষ্ট্রার খাতায় লেখা হয় ১০টি পত্র জমা হয়েছে। রেজিষ্ট্রার খাতায় আবেদনকারীদের নাম ও পত্র নং উল্লেখ আছে। কিন্তু ব্যাংক স্ট্রেটমেন্ট দেখা যায় দাতা সদস্য হওয়ার জন্য ১৯ জন ২০ হাজার টাকা করে জমা দিয়েছে। রেজিষ্ট্রার খাতায় যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে ৫জন নির্ধারিত সময়ের পর অর্থাৎ ২ এপ্রিল বিকাল ৫টার পরে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছে। সব থেকে আবাক করা বিষয় দাতা সদস্য হতে আগ্রহী আরো ৯জন যারা নির্ধারিত সময়ের আগে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছে তাদের নামই রেজিষ্ট্রার খাতায় তোলা হয়নি। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল কবির নির্ধারিত সময়ের পরে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও রেজিষ্ট্রার খাতায় ব্যাংক স্ট্রেটমেন্টের সাথে মিল নাই কেন এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে উল্টো প্রশ্ন করেন রেজিষ্ট্রার খাতার ছবি বাইরে গেলো কিভাবে।
বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুল কুদ্দুসের কাছে পত্রগ্রহণের রেজিষ্ট্রার খাতার সাথে ব্যাংকে টাকা জমা আগ্রহী দাতা সদস্যদের নামের মিল নাই কেন জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি ছাড়া কোন কথা বলা যাবে না। নির্ধারিত সময়ের পরে কেন তিনি আবেদনপত্র জমা নিলেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে উত্তর দিতে পারবেন। তিনি ফোনে কোন কথা না বলার অপরাগত প্রকাশ করে সকল দায় প্রধান শিক্ষকের উপর চাপালেন। উল্লেখ্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল কবিরের বিরুদ্ধে নীতিমালা ও গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে প্রভাবশালী মহলের যোগসাজসে একটি পকেট কমিটি গঠন করার অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তুলে ধরে ২৮/৩/২২ তারিখ যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, খুলনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা,
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। যশোর শিক্ষা বোর্ড বিষয়টি তদন্তের জন্য খুলনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোরের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিশ^াস শাহিন আহমেদ স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয় সরেজমিন তদন্তপূর্বক অতিসত্ত¡র প্রতিবেদন জমা দেওয়ার চাইলে তিনি বলেন, ঐ সময়ে আমি দায়িত্বে না থাকায় বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে আমি অফিসিয়াল কাজে বাইরে আছি পরবর্তিতে যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার পুত্র ও ম্যানির্জিং কমিটির সাবেক সভাপতি শেখ হারুন অর রশিদ বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানির্জিং কমিটির মেয়াদ শেষান্তে নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার
শুরুতে অনিয়মের অভিযোগ করছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইকবাল কবির। তিনি বর্তমান ম্যানিজিং কমিটিকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে জালজালিয়াতি এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া সৃস্টি হয়েছে। বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য এবং ভাবমুর্তি রক্ষায় আগামী শুক্রবার বিকালে বিদ্যালয়ের সকল অভিভাবকসহ সর্বস্থরের মানুষের সাথে মতবিনিময় করা হবে।