নুরুজ্জামান হোসেন হিলিঃ আবহমান বাংলার এক চিরায়ত সংস্কৃতি পিঠা-পুলির উৎসব। বাংলার ঐতিহ্যবাহী শীতকালীন এই উৎসবের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আয়োজন করা হয়েছে পিঠা উৎসব। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে দু দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠান। ৮ ফেব্রয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে হাকিমপুর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া মডেল স্কুল মাঠ প্রাঙ্গনে এ পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ডাঙ্গাপাড়া মডেল স্কুল কতৃপক্ষ। পিঠা উৎসবে নানান রকম পিঠার সমাহারে সজ্জিত ছিল স্টলগুলো। উক্ত উৎসবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পিঠা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক, দর্শনার্থী, আমন্ত্রিত অতিথিদের ঢল নেমেছিল এ উৎসবে। বিভিন্ন স্টলে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। স্টলগুলোতে পিঠা বিক্রির
ধুম ছিল লক্ষ্যনীয়। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আমন্ত্রিত অতিথি, দর্শনার্থীদের পদভারে উৎসব স্থল ছিল উৎসবের আমেজে মুখরিত। আর অনুষ্ঠানকে ঘিরে ছিল সেলফি তোলার ধুম। বেলুন, ফেস্টুন, বাহারি রঙের পতাকা দিয়ে সাজানো স্টল গুলি।
গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম শীতকালেই বেশি পড়ে। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর বা সন্ধ্যায় গাঁয়ের বধূরা চুলার পাশে বসে ব্যস্ত সময় কাটায় পিঠা তৈরিতে। অতিথি বিশেষ করে জামাই ও আত্মীয়-স্বজনদের এ সময় দাওয়াত করে পিঠা খাওয়ানো হয়। এ সময় খেজুরের রস থেকে গুড়, পায়েস এবং নানারকম মিষ্টান্ন তৈরি হয়।
বাঙালির লোকজ ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। পিঠা-পায়েস সাধারণত শীতকালের খাবার হিসাবে অত্যন্ত পরিচিত এবং মুখরোচক খাদ্য হিসাবে বাঙালি সমাজে আদৃত। আত্মীয়স্বজন ও পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠা-পুলির উৎসব বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম শীতকালেই বেশি পড়ে। সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠা হচ্ছে ভাপা পিঠা। এছাড়াও আছে চিতই পিঠা, দুধচিতই,
পাটিসাপটা, নকশি পিঠা, মালাই পিঠা, পাকন পিঠা, ঝাল পিঠা ইত্যাদি। বাংলাদেশে প্রায় শতাধিক ধরনের পিঠার প্রচলন রয়েছে। শীতকালে শুধু গ্রামবাংলায়ই নয়, শহর এলাকায়ও পিঠা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। ইদানীং শহরেও পাওয়া যায় শীতের পিঠার স্বাদ। পিঠা-পুলি আমাদের লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই প্রকাশ। আমাদের গ্রামবাংলায় এসব পিঠা-পার্বণের আনন্দ-উদ্দীপনা এখনো মুছে যায়নি। পিঠা-পার্বণের এ আনন্দ ও ঐতিহ্য যুগ যুগ টিকে থাকবে বাংলার ঘরে ঘরে।
পিঠা-উৎসব উপলক্ষ্যে
আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম পরিচালক ডাঙ্গাপাড়া মডেল স্কুল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কাওছার রহমান। আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রী শিক্ষক শিক্ষিকা বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যনীয়। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আগমনে স্কুল মাঠ প্রাঙ্গন মিলনমেলায় পরিণত হয়। অনুষ্ঠানটি আগামি কাল বিকেল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন কতৃপক্ষ।