দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুলনা-৫, সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করতে যাচ্ছেন সাবেক এম, পি(নৌকা) ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান(ঈগল)

IMG_20231224_141603.jpg

খান আতিকুর রহমান খুলনাঃ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে খুলনা-৫ আসন ফুলতলা-ডুমুরিয়া থেকে আওয়ামী লীগ এর দলীয় নমিনেশনের জন্য একাধিক প্রার্থী দলীয় নমিনেশন ক্রয় ও প্রত্যাশী হলেও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দলীয় ভাবে নমিনেশন দেওয়া হয় সাবেক এম, পি ও মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সাবেক প্রতি মন্ত্রী বাবু নারায়ণ চন্দ্র চন্দ কে। অন্য সকল প্রার্থী কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও মেনে নিতে পারেননি ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি ও ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আকরাম হোসেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন এবং তার নির্বাচনী কার্যক্রমের অংশ হিসাবে মতবিনিময় সভা ও ঘরোয়া বৈঠক শুরু করেন। তারপরেও এলাকাবাসী ও দলীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাঝে ছিল দ্বিধা-দন্দ, হয়তোবা শেষ অবধি তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেননা। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ, নমিনেশ ক্রয় ও জমা দানের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণকে তিনি নিশ্চিৎ করেন, অবশন ঘটে সকল দ্বিধা-দন্দের।

কিন্তু প্রার্থীতা যাচাই-বাছাই কালে ঘটে আর এক বিপত্তি, বাতিল করে দেওয়া হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এর প্রার্থীতা। শুরু হয় আর এক নতুন যুদ্ধের। জেলা রিটার্নিং অফিসার, নিবার্চন কমিশন ও হাইকোর্ট ঘুড়েও কোন প্রকার সূফল অর্জন করতে না পেরে সর্বশেষে তিনি দ্বারস্থ হন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে, চেম্বার জর্জ আদালতে গত বৃহস্পতিবার প্রায় শেষ লগ্নে তার প্রার্থীতা বৈধ ঘোষনা করে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের অনুমতি প্রদান করা হয়। অবসান ঘটে সকল জল্পনা-কল্পনার, কারন এই প্রার্থীতা ঘিরে বিরোধী শিবিরে ছিল নানান উত্তেজনা ও একক আধিপত্যের এক সুপÍ অনুভূতি। একদিকে পাওয়ার আনন্দ ও উত্তেজনা, অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দিতার ভাড় ও উত্তেজনা। জনজরীপ,এলাকাগত

অবস্থান, ধর্মীয় অবস্থান ও রাজনৈতিক বিন্যাস পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানে জানা যায়, এম, পি প্রার্থীতা নিয়ে অতিত থেকেই এই দুই নেতা দন্দে জড়িয়ে পরেন এবং দলিয় রাজনীতিতে তৈরী করেন দুটি বিভাজন। দলীয় নেতা-কর্মীরাও এই বিভাজনের বাহিরে অবস্থান নিতে অক্ষম হয়। তারাও সর্বত্র বিভাজনের এই প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পরেন এবং সর্বত্র বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে বিভাজনের এই রাজনীতি। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই দলীয় প্রেক্ষাপট পর্যালোচনায় জানাযায় দুই নেতারই রয়েছে আলাদা আলাদা ভাবে শক্ত দুটি অবস্থান। আওয়ামী লীগ এর দলীয় অবস্থান জরীপে জানা যায় দলের ওয়ার্ড, থানা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও বড় অংশটি রয়েছে সাবেক এম, পি এর পক্ষে। অপরদিকে ইউপি চেয়ারম্যানদের একটা বড় অংশ রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এর পক্ষে। এলাকাগত অবস্থানে নিজ নিজ এলাকায় প্রার্থীদের নিজ অবস্থান নিয়েও দেখা দেয় ভিন্ন চিত্র। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এর এলাকায় তার অবস্থান দৃঢ় থাকলেও বিপত্তি ঘটে সাবেক এমপি এর এলাকায়। সাবেক এমপি এর এলাকায়ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যার এর ব্যপক জনপ্রিয়তা লক্ষ্যকরা যায়। যেখানে এমপির একক আধিপত্যের হিসেবটা কিছুটা হলেও এলোমেলো হয়ে যায়। ধর্মীয় অবস্থান নিয়ে সাধারণ

জনগনের অতিত চিন্তাধারার ও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়, সাবেক এমপি সনাতন ধর্মাম্বলীর হওয়ায় সনাতন ধর্মাম্বলীর ভোটারদের সিংহভাগ ভোটই সাবেক এমপি এর পক্ষে থাকবে বলে তাদের ধারণা ছিল। কিন্তু এখানেও দেখা যায় ভিন্নতর চিত্র। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এর ও এখানে একটা ভালো অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। যা অনেকটা বাড়তি একটা মাথা ব্যথার কারন বলে সাধারণ জনগন মনেকরেন। সাংগঠনিক পর্যায়ে অতিতে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারীদের বহিস্কারের প্রথা চালু থাকায় দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে দলীয় কেহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করলে এবং কোন দলীয় নেতৃবৃন্দ তাকে সহযোগীতা করলে তাকেও বহিস্কার করা হবে এই সুবিধা নৌকার প্রার্থীকে বাড়তি সুবিধা এনে দেবে বলে নৌকা মার্কার প্রার্থী ও সমর্থকেরা মনেকরে ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এর সাধারন সম্পাদক এর বক্তব্য “দলীয় নিয়ম মেনে যে কেহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করতে পারবে” তাদেরকে অনেকটা হতাশ করে দেয়। তবে একথাও শোনা যাচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ছাড় পেলেও দলীয় পদাধিকারী কেহ তাদেরকে সমর্থন করলে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায় আসতে পারে।

সর্বদিক পর্যলোচনা করে তিব্র একটা প্রতিদ্বন্দিতা মূলক নির্বাচন হবে বলে সাধারণ জনগন অভিমত ব্যক্ত করেন। যা অনেকটা বাঘে বাঘে লড়াই এর মত। কারন খুলনা ৫ আসনে বিগত নির্বাচনে একাধিকবার সাবেক এমপি নির্বাচন করে নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে পূর্ণ আসন জুড়ে বাবু নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এর রয়েছে একটা শক্ত অবস্থান। অপরদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে ফুলতলা উপজেলা জুড়ে আলহাজ্ব শেখ আকরাম হোসেন এর একটা শক্ত অবস্থান থাকলেও ডুমুরিয়া উপজেলায় অতটা দৃঢ় নয়। তবে পরিবর্তনের একটা হাওয়া সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়। সাধারণ জনগন মনেকরেন উভয় পক্ষ শক্তিশালী হওয়ায় যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ঘটে যেতে পারে যে কোনো ধরণের সহিংসতা ও অঘটন।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে খুলনা ৫ আসনের বেশ কিছু এলাকার উপর প্রশাসনের সুদৃষ্টি সাধারণ জনগন কামনা করেন। খুলনা ৫ আসনে আওয়ামী লীগ এর দলীয় নমিনেশন নিয়ে নৌকা প্রতীকে বাবু নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আওয়ামী লীগ এর স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীক নিয়ে আলহাজ্ব শেখ আকরাম হোসেন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে শাহীদ আলম এবং ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুঢ়ি প্রতীক নিয়ে শেখ সেলিম আকতার এই ৪ জন নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে যাচ্ছেন। যদিও সবার দৃষ্টি নৌকা ও ঈগল এর দিকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top