মুক্তিযোদ্ধার এতিম সন্তানের সম্পত্তি আত্মসাৎ,প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান,নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন

IMG_20231205_184808.jpg

এস এম রুবেল চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে একজন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। জমি দখল ছাড়াও বাবার বিভিন্ন সম্পদ না দেয়ার প্রতিবাদ করায় হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তার সৎ মা ও সৎ ভাইয়েরা। এসব কারনে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হকের ছেলে বাদশা ও তার পরিবার। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি,বাবা মৃত্যুর পর সৎ মা ও ভাই বোনরা মিলে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয় মো.বাদশাকে। এছাড়াও বাবার সম্পত্তি বিক্রি করে সেখান থেকেও কোনরকম ভাগ না দিয়ে আত্মসাৎ করে তারা। এনিয়ে মুখ খুলতে গেলেই মারধর,মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হয় তাকে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে আতঙ্কে দিন পার করছেন চা বিক্রেতা মো.বাদশা ও তার পরিবার।

অনুসন্ধানে জানা যায়,মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হক ২০২২ সালের ০৬ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। এসময় তিনি তিন পক্ষের স্ত্রী সন্তান রেখে যান। নিয়ম অনুযায়ী,তিন পক্ষেরই সকল সম্পদে সমান অধিকার থাকার কথা থাকলেও তা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে প্রথম পক্ষের সন্তান এসরাফিল, রাকিব,বাদশা ও দ্বিতীয় পক্ষের রহমত,। এনিয়ে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করেও কোন প্রকার সুরাহা পায়নি ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেখানকার স্থানীয় ঐ এলাকাবাসী।
তথ্য রয়েছে,বাদশাকে ভিটেমাটি থেকে সরানোর জন্য সৎ ভাই সফিকুলের স্ত্রী শামীমা খাতুনের পরকিয়া প্রেমিক বালিয়াঘাট্টা হাতনাবাদ গ্রামের রিফাত ও তার গুন্ডাবাহিনীর সদস্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের বটতলাহাটের জাহাঙ্গীর,তরিকুল,মাহবুবুল রহমান ওরফে হারবাল মাহবুল, সুকতারাসহ অন্যান্যরা বিভিন্ন সময়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে কোন কোন সময় যার চা বিক্রি করে চলা না চলা সংসারের হাল ধরা বাদশা ভয়ে দোকান খোলতে না পারায়

তার বউ বাচ্চাদের নিয়ে বেকায়দায় দিন যাপন করছে বলে যানা যায়। ভুক্তভোগী মো.বাদশা বলেন,চায়ের দোকান চালিয়ে সৎ মা ও তিন সৎ ভাই-বোনদের ভরনপোষণ চালিয়েছি তাদের উপযুক্ত মানুষ করতে নিজের সংসারের চিন্তা মাথায় নেইনি,দিন রাত চা বিক্রি ও রাতে নাইট গার্ডের চাকুরী করে তাদের মুখে আহার যুগিয়েছি আজ এর প্রতিদান হিসেবে তারা আজকে আমাকে আমার বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করছে। এক জায়গায় আমার ভাগের এক কাঠা ১৫ লাখ টাকা ও আরেক জায়গায় ৫ কাঠা জমির ১৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে তারা। এসবের প্রতিবাদ করায় আমার নামে থানা ও আদালতে দফায় দফায় একাধিক মিথ্যা,বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। তিনি আরও বলেন,বাবার পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে আমার সৎ মা মোসা. রুমালী,ভাই সফিকুল ইসলাম,বোন শুকতারা বিবি,মাহাবুব আলী,আহাদ বিশ্বাস,মফিজুল ইসলাম ও আব্দুল মালেক। বাবার রেখে যাওয়া সকল সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছে। অথচ এর কেন ভাগ দিচ্ছে না সৎ মা ও ভাই-বোনেরা। এমনকি আমার শেষ থাকার জায়গাটুকুর ভিটেমাটি থেকেও তাড়াতে নানারকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে প্রতিবাদ করলেই নানা কৌশলে আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছে।

মো.বাদশা বলেন,আমি কোন অন্যায় দাবি করব না। আমি চাই,আমার নায্য অধিকার ফিরে পেতে। আজকে আমার সৎ মা ও ভাই-বোনদের এমন ন্যাক্কারজনক কাজের কারনে পথে বসেছি। কোন কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছি না। প্রশাসনের নিকট দাবি, দয়া করে আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাকে আমার নায্য অধিকার বুঝিয়ে দিবেন এবং বসতবাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিবেন এই টুকু আমার জীবনের শেষ চাওয়া। স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম জানান, মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হকের তিনটি পক্ষ থাকলেও রুমালী বেগম ও তার সন্তানেরাই সকল সম্পত্তি ভোগ করছে। জমিজমা সব বিক্রি করে টাকার ভাগ বাটোয়ারা করে খাচ্ছে দেয়না আমাকে। এমনকি তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাই। আশেপাশের কেউ তাদের এসব কাজের প্রতিবাদ করলেই স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিবেশীদের নামেও নানরকম মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। বাদশার স্বজন আশিক

আহমেদ বলেন, বিষয়টি অত্যান্ত দু:খ জনক। বাদশাদের পক্ষকে এভাবে বঞ্চিত করা অন্যায়। দাবি আদায়ে যাতে সোচ্চার না হতে পারে তাই তার নামে ইচ্ছে মতো মিথ্যা বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হকের থাকা নগদ অর্থ সবই আত্মসাৎ করেছেন রুমালী বেগম মেয়ে ও তার ছেলে সফিকুল।
জানা যায়,প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হকের গোদাগাড়ী উপজেলার বিলসমসপুর মৌজার আরএস ৬৬ ও ৬৭ নম্বর দাগের দশমিক ৫০ শতক বসত জমি এবং বাসুদেবপুর মৌজার আরএস ৯৭২ ও ৯৭৯ নম্বর দাগের দশমিক ৬৪ শতক জমি থেকে মো.বাদশাকে বঞ্চিত করেছেন সৎ মা রুমালী বেগম ও তার ছেলে-মেয়েরা।
এমতাবস্থায় সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন,প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হকের স্ত্রী রুমালী বেগম ও তার ছেলে-মেয়েরা। এবিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট হতে জানতে চাইলে বলেন তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সম্পদের সুষম বণ্টন করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top