অভিযান টিভি নিউজ ডেস্কঃ ১৯শে নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্র উদীচীর ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী গভীর শ্রদ্ধা ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশ পালিত হয়। অনুষ্ঠানের সুচনা লগ্নে দলীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এর পর সংগঠনের সভাপতি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন শুরু হয় ছোটদের অংকন প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি , গান , নাচ , দলীয় সংগীত , ভায়োলিন যন্ত্র সংগীত । এসময় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ স্থানীয় কুইন্স প্যালেসে কমিউনিটির বিশিষ্টজন ও সাধারণের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাফা, শিল্পকলা একাডেমী, বহ্নিশিখা, রবীন্দ্র একাডেমী বেংগলী ইন্টারন্যাশনাল লিটারারি সোসাইটির ধনজ্ঞয় সাহা, মৌ মধুবন্তি, আনন সাহা, অটিস্টিক যুবক সহ স্থানীয় শিল্পী সংস্থা। এছাড়া অংশগ্রহণ করে উদীচীর ব্রঙ্কস ও জ্যামাইকা শাখা।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কনসাল অফিসের প্রধান কনসাল জেনারেল জনাব নাজমুল হুদা।
বিশিষ্ট লোকগীতি শিল্পী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক রথীন্দ্রনাথ রায় ও
কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা। মুহুর্মুহু(স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান স্থল ) তার সাথে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর উদ্বোধনী সংগীত এক আনন্দপূর্ণ আবেগের পরিবেশ তৈরি করে। উদ্বোধন প্রাক্কালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন কনসাল জেনারেল জনাব নাজমুল হুদা। তিনি বলেন, প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতির বিকাশ আমাদেরকে সম্মানিত ও গর্বিত করে। সংস্কৃতির বিকাশ যাতে বাঙালি কমিউনিটিতে প্রসার লাভ করে তিনি সর্বতোভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি উদীচী নেতৃবৃন্দ ও আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলীম উদ্দীন। উদ্বোধনী পর্বের পর শোক প্রস্তাব ও নিন্দা প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের প্রচার সম্পাদক জাকির হোসেন। শোক প্রস্তাবে সম্প্রতি বিশিষ্ট কবি আসাদ চৌধুরী ও জামালপুর উদীচীর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। এছাড়া সংগঠন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর আক্রমণে আত্মাহুতি দেওয়া সংগঠনের নেতাকর্মী, শিল্পী ও মুক্তিযুদ্ধে এবং যুদ্ধ পরবর্তীতে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
সকল যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক সরকার ও জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া ভারতের ’পিপ্পা’ ছবিতে এ আর রহমান জাতীয় কবি নজরুলের কালজয়ী গান ’কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের সুরারোপ বিক্রত করার নিন্দা এবং ক্ষমা প্রার্থনার জন্য প্রযোজক ও গায়কের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তারপর সংগঠনের সহসভাপতি শরাফ সরকার শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। তিনি আমন্ত্রিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, লেখক ও সাহিত্যিক কুলদা রায়, লেখক ও প্রকাশক সাগর লোহানী এবং উদীচীর সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস। সাধারণ সম্পাদক আলীম উদ্দীন একে একে আলোচকদের মঞ্চে আহ্বান জানান। এবং তাদেরকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণ সম্পাদকের নাতিদীর্ঘ সূচনা বক্তব্যের পর আলোচনাপর্ব শুরু হয়। প্রথমে সাগর লোহানী তার বক্তব্যে বলেন, উদীচী দীর্ঘদিন থেকে এই প্রবাসে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তিনি বলেন, উদীচীকে দেশের মতো করে এখানে সংস্কৃতি চর্চা করলে হবে না। এখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সংস্কৃতি
পৌছে দিতে হবে। লেখক সাহিত্যিক কুলদা রায় বলেন, দ্বিজাতি ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল। শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে হিন্দুর সংস্কৃতি ও ভাষা অভিহিত করে সাম্প্রদায়িক প্রলেপ দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। ধর্মের নামে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বাংলা সংস্কৃতির ওপর আঘাত এসেছে। কিন্তু বাঙালি ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর আক্রমণের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছে, সফলও হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতি একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ ও রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু আজ আমরা এক গ্লানিকর বিপরীত পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে নিপতিত। আমাদের চাওয়া পাওয়া সব স্বপ্ন আজ হারিয়ে গেছে। স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী সরকারের দুর্বলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগে দ্বিজাতিতত্তে¡র শাপদ গোষ্ঠী এখন পাকিস্তান আমলের চেয়েও শক্তিশালী। এটা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের জন্য এক চরম লজ্জাকর ও অপমানকরও বটে। শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন উদীচী গণমানুষের গান গাইবার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৬৮ সালের ২৯শে অক্টোবর জন্ম নিয়েছিল। তার নেতৃত্বে ছিলেন দুই প্রথিতযশা শিল্পী সাহিত্যিক লেখক সাংবাদিক, উপমহাদেশের বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ঋতুতুল্য সাধক সত্যেন সেন ও রণেশ দাশগুপ্ত। তাদের হাতে গড়া উদীচী তাদের নীতি ও আদর্শকে লালন ও ধারণ করে আজ এক মহীরুহ। উদীচী জন্মের ৫৫ বছরে আজ শুধু দেশেই নয় বিদেশের বড় বড় শহরে রয়েছে উদীচীর শাখা প্রশাখা। একজন শিল্পী হিসেবে উদীচীর উত্তরোত্তর অগ্রগতি ও শুভ কামনা করি।
আলোচনাপর্ব ও সংগঠনের সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিন আলোচকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, উদীচীর জন্মের পর পর সমগ্র জাতি ও দেশ পরাধীনতার নাগপাশ হতে মুক্তির জন্য পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামে উত্তাল ছিল। স্বাভাবিকভাবে উদীচীর সামনে ছিল এক অগ্নি পরীক্ষা। কিন্তু সদ্য প্রতিষ্ঠিত উদীচীর ভাই-বোনেরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে উদীচীর ভাইবোনের রক্তস্রোত জড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধের ভীবৎসতার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে আবার উদীচী যাত্রা শুরু করে। সংগঠনকে সংগঠিত করার পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার তিন বছরের মাথায় জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। তারপর বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী দেশকে পুনরায় পাকিস্তানী ভাব্যধারা