আন্তর্জাতিক সীসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে সভা অনুষ্ঠিত

IMG_20231026_184831.jpg

সাগর কুমার বাড়ৈই জেলা প্রতিনিধি খুলনাঃ আন্তর্জাতিক সীসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভা এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ মোঃ মনজুরুল মুরশিদ। ইউনিসেফ, ডিজিএইচএস ও এনসিডিসি’র সহযোগিতায় খুলনা জেলা তথ্য অফিস এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সীসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য ছিলো ‘ শৈশব হোক সীসা দূষণমুক্ত’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিভাগীয় পরিচালক বলেন, সীসার প্রভাবে শিশুর বুদ্ধি বৃত্তিক বিকাশ বাঁধাপ্রাপ্ত হয়।

সীসা সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে শিশুদের। প্রায় ৭০ শতাংশ বুদ্ধি বৃত্তিক পঙ্গুত্ব সীসার ফলে হয়ে থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। সীসা দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত প্রায় দুই লাখ মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে। একই কারণে দেশে শিশুদের আইকিউ কমে যাচ্ছে, যার ফলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হবার ঝুঁকি বাড়ছে। বড়দের পাশাপাশি শিশুরা বেশি আক্রান্তের শিকার হয়। সীসা প্রতিরোধ করতে হলে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। খুলনা জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক গাজী জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সবিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ নুরুল আলম, খুলনা ইউনিসেফের চীফ মোঃ কাউসার হোসেন, ইউনিসেফের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এএসএম নাজমুল আহসান, বটিয়াঘাটা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নারায়ণ চন্দ্র মন্ডল, ইউনিসেফের ফিল্ড অফিসার সুফিয়া আক্তার, ইউনিসেফের শিক্ষা অফিসার সাজিদুর রহমান প্রমুখ। সীসা দূষণ প্রতিরোধের ওপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মিজানুর রহমান।

সভায় জানানো হয়, পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ শিশু সীসা দূষণের শিকার হয়। সীসা দূষণ সংক্রান্ত রোগের প্রভাব ব্রংকিয়াল এজমা থেকে ২০ গুণ এবং ক্যান্সার থেকে একশত ২০ গুণের বেশি। সকল রোগের মধ্যে এক শতাংশ রোগ সীসা দূষণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে হয়ে থাকে। মহিলা ও শিশুরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সারা দেশ জুড়ে সীসা দূষণের বিভিন্ন কারণের মধ্যে অবৈধ ব্যবহৃত লেড এসিড ব্যাটারী, রিসাইকেল সাইট, অধৈব ব্যাটারী প্রস্তুতকারক, বিভিন্ন শিল্প কারখানা, বাড়িঘরে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের সীসাযুক্ত রং, বাচ্চাদের  খেলনা, রিসাইকেল্ড স্ক্র্যাপ থেকে তৈরি এলুমিনিয়ামের তৈজসপত্র ইত্যাদি। বাংলাদেশের শিল্প কারখানায় তদারকির অভাব সীসা দূষণের একটি বড় কারণ। সীসা প্রতিরোধ করতে হলে বাড়ির আশপাশে এর উৎস খুঁজে বের করা, সীসা যুক্ত তৈজসপত্র/রং/খেলনা ব্যবহার বন্ধ করা, গর্ভবর্তী মহিলা  ও শিশুদের সীসার উৎস থেকে দূরে রাখা, স্বাস্থকর এবং ভিটামিনযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া, নিরাপদ পানি পান করা, খালি পায়ে  না হাটা, আসবাবপত্র, মেঝে নিয়মিত পরিস্কার করা, সীসাযুক্ত পেট্রোল, রং,

মোড়ক, খেলনা ইত্যাদি আমদানি ও বিক্রি নিরুৎসাহিত করা এবং বিকল্প খুঁজে বের করা উচিৎ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সীসার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এছাড়া সরকারি-বেসকারি সংস্থা, উন্নয়ন সংস্থার সকলে মিলে সীসা দূষণ প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সীসা প্রতিরোধ করা সম্ভব। সভায় উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, নার্স, গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আন্তর্জাতিক সীসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। র‌্যালিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top