প্রতিবেদন মেহেদীঃ বাকেরগঞ্জের গারুরিয়া ইউনিয়নের দেউলী মোহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল ফারাহ মোঃ আলী আকবর এর বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা যায় মাদ্রাসার প্রায় ১০-১১ বছরের আয় ব্যায়ের ৭৩ লক্ষ টাকার হিসাব না দেওয়া।
শিক্ষকদের পদোন্নতিতে ঘুষ গ্রহণ ও স্বেচ্ছাচারীতা।
এবিষয়ে দেউলী মোহাম্মাদিয়া আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র সহকারী শিক্ষক(বাংলা)হরিদাস পাটিকর জানান ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর ম্যানেজিং কমিটির বৈঠকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ ওঠে।এর প্রেক্ষিতে ম্যানেজিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক, মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মতিনকে আহবায়ক ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফিরোজ আলম ও আমাকে নিয়ে সদস্য দৃষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় । আমরা একাধিকবার অধ্যক্ষ কে আয় ব্যয়ের হিসাব জানতে চেয়েও অদ্যবধি অধ্যক্ষ আমাদের কোন হিসাব বুঝিয়ে দেয়নি।
এছাড়া পদোন্নতিতে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে মাদ্রাসার ইংরেজি প্রভাষক মো: ফারুক হোসেন অধ্যক্ষের বিরূদ্ধে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন,তিনি বিধি মোতাবেক মাদ্রাসায় সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য হলেও অধ্যক্ষ আমার কাছে পদোন্নতি বাবদ ৫০হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন, না দিলে আমাকে পদোন্নতি দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন, তাই আমি বাধ্য হয়ে পরবর্তী সময়ে অধ্যক্ষকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি । গত ১৩ মে ২০২৩ গভর্নিং বডির সভায় আমাকে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি প্রদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রেজুলেশন সম্পন্ন করেন়। কিন্তু অধ্যক্ষের ভাগিনা মুহাম্মদ এনায়েতুর রহমান প্রভাষক আরবি এর চাকরির বয়স ৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অধ্যক্ষ পদোন্নতির ব্যাপারে গড়িমসি শুরু করেন। অধ্যক্ষ পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উদ্দেশ্য মূলক ভাবে আমাকে আচরণ বিধি লঙ্ঘন দেখিয়ে মিথ্যা অভিযোগ এনে ৫ সেপ্টম্বর ২০২৩ তারিখ শোকজ নোটিশ প্রদান করেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমানের এমপি ও ভুক্তি হয় ২০১৫সালে। অন্যদিকে ফারুক হোসেনের এমপিও ভুক্তি হয় ২০১৪ সালে। অথচ অধ্যক্ষ এমপিও ভুক্তির নীতিমালা ২০১৮/২০ পর্যন্ত সংশোধিত ১৩ নং অনুচ্ছেদ অবমাননা করে মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমানকে উক্ত পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য ফারুক হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার ষড়যন্ত্র করছেন।
একই মাদ্রাসার ইবতেদায়ী প্রধান ও শিক্ষক প্রতিনিধি মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ অভিযোগ করেন, বিগত সময়ে শিক্ষকদের স্কেল পরিবর্তন,নতুন এপিওভুক্তিকরন,
বিগত ১০ বছরে প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক ও কর্মচারীদের অনুদান সহ প্রতিষ্ঠানের আয়ের প্রায় ৭৩ লাখ টাকার হিসাব বিবরণীতে গরমিল রয়েছে। সে সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় তাকেও শোকজ নোটিশ করেছেন এবং চাকুরীচ্যুত করার জন্য বিভিন্ন ভাবে পরিকল্পনা করতেছেন মাদ্রাসা অধ্যক্ষ আবুল ফারাহ মোঃ আলী আকবর । এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আবুল ফারাহ মোঃআলী আকবরের কাছে জানতে চাইলে তিনি অর্থ আত্মসাৎ ও পদোন্নতিতে ঘুষ গ্রহনণের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগকারী ফারুক হোসেনের পদোন্নতির জন্য আমি লিখিত সুপারিস করেছি, তবে মাদ্রাসার স্বীকৃতি নবায়ন না থাকায় পদোন্নতি হয়নি, স্বীকৃতি নবায়নের জন্য মাদ্রাসার জমির কাগজপত্র রেকর্ড করতে হয়, এজন্য তিনি একজনকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন যা পরবর্তীতে আবার
ফেরত দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও গারুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামিলীগ সভাপতি জুলফিকার হায়দার বলেন, বাংলাদেশ সরকার মাদ্রাসার প্রতি বিদ্বেষী টাকা ছাড়া কাজ এখন কোন সেক্টর নাই যেখানে টাকা ছাড়া কাজ হয়, আমার এই মাদ্রাসায় ২কোটি টাকা ভবনের বরাদ্দের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে , ওনার (ফারুক হোসেন) পদোন্নতির জন্য মাদ্রাসার স্বীকৃতি প্রয়োজন আর স্বীকৃতির জন্য মাদ্রাসার নামের ৬টি দলিল রেকর্ড করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা প্রয়োজন, এজন্যই ওনার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হইছিল যা পরবর্তীতে আবার ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তপন কুমার জানান,আমি অত্র মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের বিরূদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি সরজমিনে তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি, এ ব্যাপারে যাচাই বাচাই সাপেক্ষে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।