দিন দিন কৃষি জমি কমে যাওয়ায় হতাশ কৃষক দিঘলিয়ায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষ

সৈয়দ জাহিদুজ্জামান দিঘলিয়া খুলনাঃ  দিঘলিয়ার যেদিকেই চোখ যায় সেদিকে শুধু সবুজের সমারোহ। মাঠে আমন ধানের সবুজ ফসলের সমারোহ। কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষকরা দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অভয়নগরে আমন চাষে এবছর ২ হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চাষ হয়েছে ১হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৫ হেক্টর কম জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। এবছর উপজেলার ২৪০ জন কৃষককে ৫ কেজি করে উপসী ধান বীজ এবং প্রতিজনকে ১০ কেজি এমওপি ও ১০ কেজি করে ডিএপি সার প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া ২০০ জনকে হাইব্রিড ধানের বীজ দেয়া হয়েছে। ধানের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগবালাই হচ্ছে মাজরা পোকা,বাদামী ফড়িং এবং গোড়াপচা রোগ। তবে এ রোগগুলো এবার কম হওয়ায় ফসল বেশ ভাল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে আগাম জাতের আমন ধান ব্রি- ৭৫, ব্রি-৮৭, ব্রি -৫২, ব্রি – ৪৯ সহ বেশ কয়েকটি আগাম জাতের আমন ধান চাষ হয়েছে। এছাড়াও বিআর–১১, গুটি স্বর্ণা, ব্রি -৩০, ব্রি-৩৯ ধানের চাষ করেছে কৃষকরা। আবহাওয়া ভাল থাকলে কৃষকরা হাসিমুখে ফসল ঘরে তুলতে পারবে।

প্রথমদিকে বৃষ্টিপাত না হলেও মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়েছিল। প্রথমে বীজতলা লাগাতে দেরি করেছেন। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় অনেককে সেচ দিতে দেখা গেছে। বর্তমানে পানি ও বৃষ্টি হওয়ায় রোপা আমনের গাছের চেহারা দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। ধানে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম দেখা যাচ্ছে । মাজরা পোকা, পামরী পোকা, বাদামী ফড়িং, গোড়াপচা রোগসহ নানাবিধ রোগ বালাই আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে না। মাঠ পর্যায়ে ১৮ জন উপ সহকারী কৃষি অফিসার ঠিকমত পরামর্শ দেয়ার জন্য তারা নিরলসভাবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। কৃষি দপ্তর থেকে কীটনাশক না পাওয়া গেলেও কীটনাশকের দোকানদারদের পরামর্শক্রমে কৃষকেরা বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করে ফসলের রোগ বালাই দমন রাখার চেষ্টা করছেন। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে বেশ কয়েকজন কৃষক জানান। যদিও কীটনাশক ও সারের দাম সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের থেকেও খাতাপত্র ঠিক রেখে ডিলাররা বেশি নিচ্ছে এমন অভিযোগ কৃষকদের। এবারের ফসলে খরচ একটু বেশিই হচ্ছে কৃষকদের। এবছর দিঘলিয়া জুড়ে মাঠের পর মাঠ সবুজ ফসলে ছেয়ে আছে।
সামনে যদি আর কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা রোগবালাই পোকামাকড়ের আক্রমণ না হয় তবে সোনার ফসলে মাঠ ভরে যাবে। কৃষান-কৃষাণীর মুখে হাসি ফুটবে। নবান্নের উৎসবে মেতে উঠবে প্রতিটা কৃষকের বাড়ি। দিঘলিয়া উপজেলার

ফরমাইশখানা গ্রামের কৃষক শেখ আকতার হোসেন বলেন, এবছর বৃষ্টি দেরীতে এবং কম হওয়ায় বীজতলা তৈরী করতে এবং ধান রোপনে দেরী হয়েছে। ঠিকমত বর্ষা না হওয়ায় সেচ দিতে হয়েছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ এখনও হয়নি। সারের দাম আগের তুলনায় বেশী। ফলে খরচ একটু বেশী হয়েছে। তারপরেও ফসল ভাল হয়েছে। সামনে যদি কোনো দুর্যোগ না হয় তবে ভাল ফলন পাব বলে আশা রাখি। তাছাড়া সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় ভাল টাকা পাব। খরচ বাদে লাভ হবে। ব্রহ্মগাতী এলাকার কৃষক রবিউল ইসলাম, মোঃ মিন্টু, মোস্তফা শেখ, মোঃ সাগর গোয়ালপাড়া গ্রামের সোহেল পারভেজ, মঈনুদ্দিন বলেন, আমন চাষে এ বার ফিল্ড অফিসারদের পর্রামশ পেয়েছি। যে কারণে আমার ধান ভালো হয়েছে। কৃষি অফিসার মোঃ কিশোর আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, এই উপজেলায় ১৮ জন ফিল্ড অফিসারের মধ্যে আছে ১৭ জন। শূন্য পদে একজন ডেপুটেশনে কাজ করছে। এ সকল কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের রোপা আমন ধানের দেখভাল করছেন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। যে কারণে এ আমন ধানের চাষে কৃষকদের পরামর্শ পেয়ে ধানের পরিচর্যায় আনন্দিত ও উৎসাহিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ কিশোর আহমেদ বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য কম জমিতে ধান চাষ হয়েছে। বিশেষ করে বারাকপুর অঞ্চলে চাষ বেড়েছে। বৃষ্টি দেরীতে হওয়ায় বীজতলা ও ধান রোপণ করতে দেরী হয়েছে। তারপরও ফসল বেশ ভাল দেখা যাচ্ছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আমন চাষে উপ সহকারী কৃষি অফিসারদের কাছ থেকে কৃষকদের পরার্মশ পাওয়ায় কৃষক কৃষকেরা বেশ উপকৃত হচ্ছে এমনটাই জানালেন উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ কিশোর আহমেদ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফিল্ড অফিসারদের পদ ১৮ টি। ১৭ টা পূর্ণ আছে। একটা পদ শূন্য থাকলেও সেখানে ১ জন ডেপুটেশনে কাজ করছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দিঘলিয়ায় কৃষি জমিতে বালু ভরাট করে নতুন নতুন আবাসন প্রকল্প করা হচ্ছে। অপর দিকে মাছের দাম বেশী হওয়ায় ধান চাষের পরিবর্তে মাছ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। যার কারণে দিন দিন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, এ বছর ১২০০ হেক্টর জমিতে উফশী, ১৫৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাত এবং ৬২০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ করা হয়েছে। ২’শ জন কৃষকের প্রত্যেককে ২ কেজি করে হাইব্রিড ধানের বীজ এবং ২৪০ জন কৃষকের প্রত্যেককে ৫ কেজি করে উফশী জাতের ধানের বীজ, ১০ কেজি করে পটাশ ও ১০ কেজি করে ডিএপি সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। দিঘলিয়ায় ধানের জমি রক্ষা করতে আবাসন ব্যবসায়ীদের এখনই আইনের প্রয়োগে কৃষি জমি রক্ষার দাবী জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top