জেলা প্রতিনিধি খুলনাঃ নগরীতে সিভিল সার্জন অফিসের বন্ধের নির্দেশ অমান্য করে চলছে জেপিটি ডেন্টাল কেয়ারের কার্যক্রম। গত ১৬ আগস্ট সিভিল সার্জন অফিস ভুল চিকিৎসায় ভূক্তভোগী রোগীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিন পরিদর্শন করে। এসময়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনের নবায়ন এবং বিএমডিসি প্রদত্ত রেজিস্ট্রেশন না থাকার বিষয়ের সত্যতা পায়। পরে তদন্তের প্রেক্ষিতে গত ২২ আগস্ট খুলনার সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান লিখিত নোটিশের মাধ্যমে রুপসা ট্রাফিক মোড়ে অবস্থিত জেপিটি ডেন্টাল কেয়ারের মালিক পিটার গাইনকে অবৈধ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু বন্ধের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে ডাক্তার পরিচয়ে প্রতিদিনই রোগী দেখছেন ডেন্টাল কেয়ারের মালিক পিটার গাইন। হাতুড়ী চিকিৎসক পিটার গাইনের ভূল চিকিৎসার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেপিটি ডেন্টাল কেয়ারের মালিক পিটার গাইনের ভূল চিকিৎসার শিকার নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা ভূক্তভোগী জামাল হাওলাদারের অভিযোগের ভিত্তিতে সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে কর্মকর্তারা গত ১৬ আগস্ট রূপসা ট্রাফিক মোড় সংলগ্ন জেপিটি ডেন্টাল কেয়ার পরিদর্শনে যায়। সরেজমিন পরিদর্শনকালে কর্মকর্তারা জানতে পারেন জেপিটি ডেন্টাল কেয়ারের মালিক পিটার গাইন ডেন্টাল টেকনিশিয়ান হিসেবে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে নেয়া রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হলেও নবায়ন করেননি। এবং সরকারের বিএমডিসি প্রদত্ত কোন অনুমোদনও নেই। পরবর্তীতে তদন্তের প্রেক্ষিতে গত ২২ আগস্ট খুলনার সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান স্বাক্ষরিত নোটিশের মাধ্যমে জেপিটি ডেন্টাল কেয়ারের মালিক পিটার গাইনকে তার অবৈধ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। নোটিশ প্রাপ্তির দিন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম বন্ধ না করলে “মেডিকেল প্রাকটিস এন্ড প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ল্যাবরেটরি (রেজুলেশন) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২” মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে সতর্কও করা হয়।
কিন্তু অবৈধ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ না করে বহাল তবিয়তে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে পিটার গাইন। এমনকি তিনি প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার লিখে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার ভূল চিকিৎসার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
গত ৩১ জুলাই তাজিয়া নামক এক রোগীকে দেয়া চিকিৎসাপত্রে দেখা যায় পিটার গাইন নামের সাথে দন্ত চিকিৎসক এবং ডিগ্রি হিসেবে বিডিএ উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. কামাল হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে জানান, ‘বিডিএ’ নামে দন্ত চিকিৎসায় কোন ডিগ্রি আছে বলে আমার জানা নেই। তবে ‘বিডিএস’ নামক ডিগ্রি রয়েছে।
পিটার গাইনের ভুল চিকিৎসার শিকার ভূক্তভোগী জামাল হাওলাদার জানান, ডাক্তার নামধারী হাতুড়ে ডেন্টাল টেকনিশিয়ান পিটার গাইনের কাছে গেলে তার ভুল চিকিৎসায় আমার মাড়ির সব দাঁত পড়ে যায়। শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে আমি এখন মৃত্যু পথযাত্রী। এসব ভূয়া চিকিৎসকরা যাতে আর কোন সহজ সরল মানুষকে তাদের ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করতে না পারে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নিকট শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
অভিযুক্ত জেপিটি ডেন্টাল কেয়ারের মালিক পিটার গাইন জানান, টেকনিশিয়ান হয়েও চিকিৎসাপত্রে দন্ত চিকিৎসক উল্লেখ করা এবং নামে‘ বিডিএ’ লেখা আমার ভুল হয়েছে। সেই সাথে আমাকে সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছিলো। কিন্তু আমার কিছু কাগজপত্র তো আছে সেজন্য এবং রোগীরা ফোন করে অনুরোধ করায় খোলা রেখেছি। তাছাড়া খুব শীঘ্রই রেজিস্ট্রেশন পাবেন সেজন্য খোলা রেখেছেন বলে দাবি করেন তিনি। খুলনার সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান মুঠোফোনে জানান, অবৈধ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের জন্য আমরা নোটিশ দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখনও তার কার্যক্রম চালাচ্ছে বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি খোলা রেখে নির্দেশ অমান্য করেছে তাই আমরা প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।