ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহিদ মুরাদ, খুলনা::::: কেএমপির পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হক বিপিএম (বার) পিপিএম- সেবা বলেছেন- একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে সন্তানকে গড়ার জন্য পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্যদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষিত হওয়ার জন্য যেমন একাডেমিক শিক্ষার প্রয়োজন, তেমনি সন্তানকে সুস্থ মানসিকতার ধারক-বাহক করার জন্য সভ্যতা-ভদ্রতা-নৈতিকতা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো মননের অধিকারী করে গড়ে তুলতে হবে। ৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এসব বলেন। তিনি আরো বলেন, একজন শিক্ষক শুধুই শিক্ষক নন তিনি একজন প্রশিক্ষকও বটে। শিক্ষক যখন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদেরকোন বিষয় বুঝিয়ে দেন বা শিখিয়ে দেন তখন তিনি শিক্ষক; যখন সৃজনশীলতা, সততা, দক্ষতা, নৈতিকতা,শৃংখলা,নিয়মানুবর্তিতাশিষ্টাচার,দেশপ্রেম,নেতৃত্ব ,কষ্টসহিষ্ণুতা,গণতন্ত্রমনস্কতা ও পরমতসহিষ্ণুতা ইত্যাদি সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখেন
ও নিয়ন্ত্রণ করেন তখন ঐ শিক্ষকই একজন প্রশিক্ষক। এ জন্য বোধ হয় আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট তার পুত্রের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখেছিলেন— ‘..তাকে শেখাবেন পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান। …….আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেন না, কেননা আগুনে পুড়ে ইস্পাত খাঁটি হয়। আমার সন্তানের যেন অধৈর্য হওয়ার সাহস না থাকে’। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন—’ ইস্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা দিবার কল। মাস্টার এই কারখানার একটা অংশ। সাড়ে দশটার সময় ঘণ্টা বাজাইয়া কারখানা খোলে। কল চলিতে আরম্ভ হয়, মাস্টারের মুখ চলিতে থাকে। চারটের সময় কারখানা বন্ধ হয়, মাস্টার-কলও তখন মুখ বন্ধ করেন;………তবু মানুষের কাছ হইতে মানুষ যাহা পায় কলের কাছ হইতে তাহা পাইতে পারে না। কল সম্মুখে উপস্থিত করে, কিন্তু দান করে না; তাহা তেল দিতে পারে, কিন্তু আলো জ্বালাইবার সাধ্য তাহার নাই’। শিক্ষক হচ্ছে প্রতিটি ছাত্রের কাছে দার্শনিকের মতো। একজন দার্শনিকের যে গুণগুলো থাকা দরকার তেমনি প্রত্যেক শিক্ষকের এই গুণগুলো থাকা দরকার। এসব বিষয়গুলো শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে। এ ছাড়াও প্রত্যেক শিক্ষককে ক্লাসের বাইরে ফ্রি হতে হবে ও বেশি আন্তরিকতা গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষকদের মতো আমাদের অভিভাবক অথবা মা-বাবার সঙ্গেও সন্তানদের সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। একজন ছাত্রের ভালো লেখাপড়ার পেছনে তার শিক্ষক ও অভিভাবকের গুরুত্ব সমান।
তাদের সঙ্গে সম্পর্কটাও সহজ হওয়া প্রয়োজন। দেশের মেধাসম্পদ তৈরি করার মূল কারিগর হলো শিক্ষক। শিক্ষকের হাত ধরেই একজন শিক্ষার্থী দক্ষতা অর্জন করে। দেশকে কিছু দেওয়ার সুযোগ অর্জন করে। একটি শ্রেণিকক্ষ যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর আন্তরিকায় স্বার্থক শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয়। সেখানে থাকবে বিশ্বাস,ভালোবাসা ও আন্তরিকতা। মহাজ্ঞানী সক্রেটিস বলেছেন “যতদিন লেখাপড়ার প্রতি আকর্ষণ থাকে, ততদিন মানুষ জ্ঞানী থাকে,আর যখনই তার ধারণা জন্মে যে সে জ্ঞানী হয়ে গেছে,তখনই মূর্খতা তাকে ঘিরে ধরে। ” ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি -এ.পি.জে আব্দুল কালাম বলেছেন: “জীবন আর সময় হলো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক | জীবন শেখায় সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মুল্য দিতে।“ ফেসবুক পোস্টে আরো উল্লেখ করা হয়, শিক্ষকের সাথে ছাত্রের সম্পর্ক পথ প্রদর্শক আর পথিকের সম্পর্কের মতো। শিক্ষক শিক্ষার্থীকে পথ দেখান, ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশনা দেন। শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীর মধ্যে অজানাকে জানার, অদেখাকে দেখার এবং চেনা-জানা বিষয়গুলোকেও নতুন করে চেনার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেন, উৎসাহ, প্রেরণা ও শক্তি যোগান। ভাল মন্দ, ভুল-সঠিকের দৃষ্টিভঙ্গি শেখান। সর্বোপরি শিক্ষকের কাছে প্রত্যাশা হলো তিনি তার শিক্ষার্থীদের ভালমানুষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবেন। উদারতা, মায়া- মমতা, স্নেহ ও ভালবাসা আর শাসনের মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের ভেতরে স্বপ্নের বীজ বপন করেন। শিক্ষার্থীরা সেই স্বপ্নকে লালন করে। তাই ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্বপ্ন স্রষ্টারও মতো। পিতা-মাতা বা অবিভাবক, শিক্ষক ও ছাত্রের আন্তরিক এবং নিরলস প্রচেষ্টাই পারে তাকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিতে।