কুড়িগ্রামে বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় স্থানান্তর করার পদ হারালেন শিক্ষিকা

নয়ন দাস,কুড়িগ্রামঃ কুড়িগ্রামে এক উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় স্থানান্তর করার সম্মতি না দেওয়াসহ গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। আর বিদ্যালয় স্থানান্তরের ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চিলমারী উপজেলার উত্তর খাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৮ আগস্ট) উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ সরকারের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, উত্তর খাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনসাব আলীর অবসরজনিত কারণে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জুলেখা খাতুনকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্বে অবহেলা, বিদ্যালয় পরিচালনাসহ তার অন্য জ্ঞান কম থাকায় বিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান নিশ্চিত করতে জুলেখা খাতুনের পরিবর্তে সিনিয়র শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লাকে দায়িত্বভার দেওয়া হলো।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত পাঁচজন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে জুলেখা খাতুন ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট, আবু হোসেন মোল্লা ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল, লায়লা খাতুন ২০১৬ সালের ১১ জুলাই, হাসান মাহমুদ ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এবং মুবারক হোসেন ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন। তাদের মধ্যে ওই বিদ্যালয়ে প্রথম যোগদান করেন সহকারী শিক্ষক জুলেখা খাতুন। তিনি সিইনএড কোর্স সম্পন্ন করেছেন এবং প্রায় ছয় বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। আর সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লার দ্বিতীয় যোগদান ওই বিদ্যালয়ে। তিনি বিএড কোর্স সম্পন্ন করেছেন। জানা গেছে, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে পড়ে। পরে সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা তার দলবল নিয়ে বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র পাশের রৌমারী উপজেলায় নিয়ে যান। সেখানে একটি নিচু জমিতে স্কুল ঘরটি নির্মাণ করা হয়। এক উপজেলার স্কুল অন্য উপজেলায় নেওয়ার ফলে বিপাকে পড়েন উত্তর খাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিদ্যালয় স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক জুলেখা খাতুন জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগ করা এবং গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ সরকার। পরে জুলেখা খাতুনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদ থেকে সরিয়ে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান তিনি।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ সরকারকে ম্যানেজ করে উপজেলার চরাঞ্চলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয় না গিয়েও নিয়মিত বিল-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দের বিল তুলতে গেলে তাকে কমিশন দিতে হয়। এছাড়া তিনি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আবু হোসেন মোল্লাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুলেখা খাতুন বলেন, আমি এখনো কোনো চিঠি পাইনি। আমাকে অবগত করা হয়নি।
উত্তর খাউরিয়া চর সরকারি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজা আকতার বলেন, জুলেখা খাতুনকে তার পদ থেকে অব্যাহতির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে শিক্ষা অফিসার কিংবা কোনো শিক্ষকও বলেননি। বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর আমি নিজেই উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। উনি আমাদের উত্তর খাউরিয়া এলাকায় স্কুল পরিচালনার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি আবার বিদ্যালয়ের বাকি তিন শিক্ষককে রৌমারী উপজেলায় স্কুল পরিচালনা করার নির্দেশ দেন। শিক্ষা অফিসার তার ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই জুলেখা খাতুনকে পদ থেকে সরিয়ে জুনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব দিলেন। তিনি এই চরাঞ্চলের শিশুদের পড়াশোনা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার কথা স্বীকার করে আবু হোসেন মোল্লা বলেন, স্কুল বর্তমানে রৌমারী উপজেলার যেখানে আছে সেখানে থাকবে। পানি কমে গেলে উপজেলা প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নেবে তা বাস্তবায়ন করা হবে। আর কোনো অর্থের বিনিময়ে তিনি এই পদ নেননি বলেও দাবি করেন। চিলমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ সিনিয়রটির ভিত্তিতে আবু হোসেন মোল্লাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, জুনিয়র শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে আমি জানি না। আর এটার কোনো নিয়মও নেই। উপজেলা শিক্ষা অফিসার কোনো অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top