লিমন খান :কাজিপুর(সিরাজগঞ্জঃ থাকতেন প্রধানমন্ত্রী দেওয়া আশ্রয় প্রকল্পের ঘরে। যুবক বয়সে চোখে ছানি পড়ায় অর্থ অভাবে করতে পারেননি সুচিকিৎসা। এরপর একপর্যায়ে চোখের দৃষ্টি শক্তি হারান। ভারসাম্যহীন স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে করতেন বসবাস। বলছিলাম সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নের পাঁচগাছি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা অন্ধ ক্বারী ময়ছের (৬০) এর কথা। প্রতিদিনের মতো তিনি ফজরের নামাজ আদায় শেষে সকালে কোরআন তেলাওয়াত করেন। পেটের ব্যাথা নিয়ে ছেলে সুলতান (১৭)কে পাঠান এইচএসসি পরীক্ষার হলে। যাবার সময় ছেলেকে বিদায় দিয়ে পরীক্ষা শেষে আনতে বলেন পেট ব্যথার ঔষধ। ছেলের সাথেই বেরিয়ে যান মা জোৎস্না বেগম অন্যের দারে সাহায্য চাইতে। একা ঘরে ময়ছেরের অসুস্থতা বেড়ে গেলে আজ দুপুর ১’টায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
হঠাৎ খবর পেয়ে ছুটে যান কাজিপুর উপজেলা প্রশাসন। অসহায় অভাবী হতো দরিদ্র অন্ধ ক্বারী ময়ছের এর দাফন কাজ সম্পন্নের দায়িত্ব নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় সরকার।
বিকেল ৩টায় পরীক্ষা শেষে সুলতান বাবার জন্য ঔষধ নিয়ে ফেরেন বাড়িতে। এসে দেখেন ততক্ষণে বাবা আর নেই। এরপর ভারসাম্যহীন মায়ের কাছে ফোন না থাকায় সেও আসেন দেরিতে। সন্ধ্যায় বাড়িতে এসে দেখেন স্বামীর লাশ। এরপর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
স্থানীয় এক ব্যক্তি আমজাদ আলী বলেন, অনেকদিন ধরেই উনি অন্ধ। এরপরেও প্রতিদিন উনি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আজ সকালে ভালো মানুষ দেখেকছি। কে জানত হঠাৎ উনি মারা যাবেন। তার মৃত্যুতে খুব কষ্ট লাগছে। আরেক বাসিন্দা সুধা রানী বলেন, অভাবের সংসার, জোসনা পাগলা মানুষ। স্বামী অন্ধ হওয়ায় কাজ কাম করতে পারতোনা। অন্যের বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে সংসার চালায়। তার জন্য খুব মায়া হত। আজ হঠাৎ করে মারা গেল।
এ বিষয়ে কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকুমার সরকার বলেন। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে সাথে সাথে সেখানে গিয়েছি। তার দাফন কাজের দায়িত্ব নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করা হবে। এই সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুখময় সরকার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মোহাম্মদ অনিক ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান শাপলা খাতুন, ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার মামুন, সোনামুখি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম, গান্ধাইল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম,আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা সহ স্থানীয় মুসুল্লিগণ।