রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস চত্বরে গড়ে উঠেছে কয়েকটি অবৈধ দোকান। দোকানের সামনে ফেস্টুনে লেখা- নতুন পাসপোর্ট/ভিসা প্রসেসিং ও নবায়নের কাজ করা হয়। এসব দোকানে কম্পিউটার-ফটোকপির পাশাপাশি ভেতরে প্রকাশ্যে চলছে পাসপোর্ট দালালদের কারবার। এ সকল দোকানে পূর্বে ভুয়া সিল ব্যবহার করে তৈরি হতো যাবতীয় নকল কাগজপত্র। দির্ঘদিন থেকে পাসপোর্ট অফিসের সামনে এসব দোকান ঘর ঘিরেই পাসপোর্ট দালাল চক্রের সদস্যরা তৎপর থাকলেও কোন মাথা ব্যাথা নেই বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস কতৃপক্ষের। গত বুধবার পাসপোর্ট অফিসে ঘুরে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে। এমন বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহকালে লাখো কন্ঠ পত্রিকার রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম আমিন নামে এক সাংবাদিককে পিটিয়ে হাত/পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিয়েছে দালাল চক্ররা।
শুধু হুমকি নয় এমন সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়ার এই শক্তিশালী সিন্ডিকেট লাখো কন্ঠ পত্রিকা অফিসে যোগাযোগ করে সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম আমিনকে লাখো কন্ঠ পত্রিকা থেকে সাময়িক ভাবে বরখাস্তও করিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম আমিন। সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম আমিন জানান, রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস চত্বরে গড়ে উঠেছে কয়েকটি অবৈধ দোকান। সারাক্ষণ এখানে দালালদের প্রকাশ্য হাঁকডাক। বেশিরভাগ পাসপোর্ট প্রত্যাশী ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে গিয়ে দালালের ফাঁদে পড়ছেন। ফরম পূরণ শেষ হলেই দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট করার অফার দেয় দালালরা। পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য টাকার অংক ভিন্ন। যেমন- সিরিয়াল ছাড়া আবেদন জমা করতে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা, পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট পেতে দুই হাজার, নামের বানান ও জন্ম তারিখ সংশোধনে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন ,পাসপোর্ট অফিস কেন্দ্রিক দালালদের নিয়ন্ত্রণ করেন সরকারদলীয় দুই হাইব্রিড নেতা। তারা প্রতিদিন অফিস কতৃপক্ষ ও দালাল চক্রের কাছ থেকে তিন থেকে ১০হাজার টাকা করে এমন অবৈধ কাজের মাসোয়ারা পেয়ে থাকে । বিনিময়ে পাসপোর্ট অফিসের বাইরের সকল সমস্য সমাধান তারাই করেদেন। এ ছাড়াও পাসপোর্টের আবেদনপত্রের জন্ম সনদ, বয়স বিভ্রান্তি, সত্যায়নে ভুল নির্ণয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে দালালচক্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। অফিসটিতে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা পাসপোর্টকারী সহযোগিদের ভেতরে ঢুকতে না দিলেও অনায়াসে যাতায়াত করছে দালালরা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ- পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে তৈরি হয় পাসপোর্ট। বাইরে থেকে দালালরা নিয়ন্ত্রণ করে পাসপোর্ট অফিস। দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করতে গেলেই পড়তে হয় হয়রানিতে। পাসপোর্ট অফিসের আশেপাশের দালাল চক্রের হাতে জিম্মি পুরো পাসপোর্ট অফিস। সেবাগ্রহীতারা জানান, আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সরকার নির্ধারিত ফি (ব্যাংক চালান) জমা দিয়ে চালানপত্র দেওয়ার পরও অফিসের কর্মকর্তারা নানান ধরনের ভুল চিহ্নিত ও তা সংশোধন করে অন্যদিন জমা দেয়ার কথা বলেন। তবে ঘুষ দিলেই রিসিভ করা হয় আবেদন ফরম। তারা বলেছেন, দালাল ছাড়া যদি আবেদনটি জমা হয়েই যায়, তবুও নিষ্কৃতি নেই। অফিসের ভেতরে সার্ভার নষ্ট, অফিসার আসেননি, ছবিতে সমস্যা, জন্ম তারিখ ভুল- এমন হাজারও সমস্যা তুলে মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় পাসপোর্ট ডেলিভারি। তবে টাকা দিলেই দ্রুত মেলে পাসপোর্ট।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও মো. হারুন রশিদ ও রবিউল ইসলাম তাদের পাসপোর্ট জমা দিতে পারেননি। হতাশ হয়ে তারা বাড়ি ফিরে গেছেন। পাসপোর্ট অফিস থেকে চলে যাওয়ার পর মুঠোফোনে তাদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। হারুন রশিদ বলেন, আমি গ্রাম থেকে এসে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও আমার আবেদন ফরম জমা নেয়নি।
এ সকল অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সহকারী পরিচালক রোতিকা সরকারকে একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আগামী পর্বে থাকছে অবৈধ তিন দোকানদার ও দুই হাইব্রিড নেতার তথ্য-প্রমানসহ । আমাদের সাথে থাকুন।