শ্যামনগরে সুদখোর আশিকের চক্রবৃদ্ধি সুদের কবলে সর্বহারা মানিক

পরিতোষ কুমার বৈদ্য শ্যামনগর(সাতক্ষীরাঃ সুদখোর আশিকের অত্যাচারে বাড়ি ছেড়েছি। ভাইয়ের জামাই বলে বিশ্বাস করে ছিলাম কিন্তু বিশ্বাস ঘাতক আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে ভিটে(পারিবারিক আবাসস্থল)ছাড়া করেছে। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সাড়ে চার বিঘা জমি লিখে নিয়েছে পানির দামে। তারপরও চুক্তি অনুযায়ী যে টাকা দেওয়ার কথা সেখান থেকে এক লক্ষ টাকা কম দিয়েছে। অথচ তার কাছ থেকে নেওয়া টাকা কারণে অকারণে শুধু বেড়েই গেছে দিনের পর দিন। চক্রবৃদ্ধি সুদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে গেছি। এখন বাল বাচ্চা নিয়ে এলাকা ছেড়ে মানবতার জীবন যাপন করছি। এত কিছুর পরও এলাকায় যেতে পারি না। এলাকায় গেলে মারধর মান-অপমান করবে বলে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে – টানা ৩৫মিনিট মোবাইল ফোনের আলাপচারিতায় এমনটাই বলছিলেন আশিকের হাতে প্রতারনার শিকার হওয়া মোঃ রফিকুল ইসলাম (মানিক)। সে আবাদচন্ডিপুর (চুনা) গ্রামের মৃত বকস গাজীর ছেলে। পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী মানিকের ভাষ্যানুযায়ী, মৎস্য ঘের প্রস্তুত করার সময় ১হাজার টাকায় সপ্তাহে ৫০টাকা সুদে মাত্র ৭০ হাজার টাকা নেয় আশিকের নিকট থেকে। বিনিময়ে বিশ্বস্ততা বা মটগেজ

হিসেবে দিয়েছিলেন তারিখ বিহীন দু’টি সাদা চেকের পাতা। ঠিক সেই বছরেই মৎস্য ঘেরে ভাইরাসে মাছ মারা যায়, একই সাথে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে টানা দু’মাস শয্যাসহি হয়ে পড়েন মানিক। যার কারণে নির্ধারিত সময়ে টাকা দিতে না পারাটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় ভুক্তভোগী মানিকের জীবনে। আর এই সুযোগটাই গ্রহণ করে অর্থলোভী আশিক। সুযোগের সদ্ব্যবহার হিসেবে সুদের টাকা আসলে সাথে যুক্ত করে তার উপরে পুনরায় সুদ বসিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার দ্বায় চাপিয়ে টাকা আদায়ে চাপ প্রয়োগসহ বিভিন্ন ভাবে মান অপমান করতে থাকে। সবরকম চাপ প্রয়োগ করার পরও যখন টাকা দিতে ব্যর্থ,তখনি হুমকি দেওয়া হয় চেকের মামলার। মানসিকভাবে ঘাবড়ে গিয়ে লেখাপড়া না জানা সহজ-সরল রফিকুল ইসলাম মানিক নিজের আত্মসম্মান বাঁচাতে নামমাত্র টাকায় গোপনে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি লিখে দিয়েছিলেন আশিকের নামে। সেখানেও প্রতারণা শিকার হয়েছে মানিক।

অশ্রু ভেজা চোখে মানিকের সহধর্মিনী বলেন, আমাদের তো সব শেষ, এখন খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে। কাজ করতে পারলে কোন রকম সংসার চলে। অবশিষ্ট কোন কিছুই নেই। যেটা ছিল সেটা তো হারিয়ে ফেলেছি। বিচার কার কাছে দেবো। আমাদের মত মানুষের বিচার করার লোক খুবই কম। দুনিয়াটা চলে টাকার উপর। এবিষয়ে আশিকুর রহমান আশিকের নিকট একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বরং বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে সমঝোতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে উপজেলা ব্যাপি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছোটবড় হাজার খানেকর বেশি সুদখোর। যাদের অত্যাচারে সর্বস্ব হারানো পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মামলার জটিলতা নিয়ে দিনের পর দিন মাসের পর মাস ন্যায় বিচারের আশায় ঘুরছে কোটের দ্বারে দ্বারে। এছাড়া এলাকা ছেড়ে পালানোসহ আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। এখনই আইন বহির্ভূত এই সুদ চক্রটিকে রুখে দিতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করছে শুধীমহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top