রিপোর্টার এইচ এম বাবুল আক্তারঃ মণিরামপুর উপজেলার ১৪নং দূর্বাডাঙ্গ ইউনিয়নের দত্তকোনা গ্রামে কেঁচো সারে ভাগ্য খুলেছে রোজিনা বেগমের কেঁচো সার উৎপাদনে তাঁর মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সারের উপকারিতা বেশি হওয়ায় কৃষকের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। একদিন অভাব-অনটন ছিল যার নিত্যসঙ্গী। দিন মজুর স্বামীর সংসারে মোটা কাপড় পরা ছিল দুঃস্বপ্নের মত। যেখানে স্বামীর পক্ষে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দু’বেলা-দু’মুঠো অন্ন জোগাড় করাই ছিল চরম কষ্টের। এমনি এক দুঃসময় পরিবারে সচ্ছলতা আনয়নে কঠিন বাস্তবতার মুখে জীবন সংগ্রামে নেমে পড়েন যশোরের মণিরামপুর
উপজেলার দত্তকোনা গ্রামের আত্মপ্রত্যয়ী সংগ্রামী নারী রোজিনা বেগম কেঁচো সারেই ভাগ্য বদল করেছেন তিনি। পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য খচিত হস্তশিল্পের কাজ করেও তিনি রোজগার করেন বেশ। এখন আর তিনি কারো মুখাপেক্ষি নন। নিজেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। রোজিনার দেখাদেখি তার এলাকার নারীরাও এইসব কাজে এগিয়ে এসেছেন। তারাও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন রোজিনার কাছ থেকে। ২০১২ সালে রোজিনা দি হাঙ্গার প্রজেক্টের দীপক রায় নামের এক মাঠকর্মীর অনুপ্রেরণায় ওই সংস্থার ৩ দিনের উজ্জীবক প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ওই সংস্থার কর্মকর্তা খোরশেদ আলমের সহযোগিতায় তিনি ২০১৪ সালে কেঁচো (ভার্মি) কম্পোস্ট সার উৎপাদনের ওপর ৩ দিনের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাকে ৫টি কেঁচো দেয়া হয়। এরপর প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কেঁচো সার উৎপাদনে আত্মনিয়োগ করেন
তিনি। শুরু করেন কঠোর পরিশ্রম, নেমে পড়েন নতুন করে বেঁচে থাকার সংগ্রামে। ৫টি কেঁচো একটি মাটির বড় পাতিলে (স্থানীয় ভাষায় নান্দা) প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে সার উৎপাদনে পরিচর্যা শুরু করেন। এখন ৫ কেঁচো থেকে বৃদ্ধি পাওয়া অগনিত কেঁচো।সময়ের সাথে পাল্টেছে কৌশল। লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকায় বাড়ির পাশে বিশাল টিনের সেড ও আরেক পাশে ছাপড়ার নিচে তৈরি করেছেন ৪টি সিমেন্টের হাউজ। প্রতিটি হাউজে ১ মণ গোবর, শাক সবজির উচ্ছিষ্ট ও কলাগাছের টুকরো মিশ্রণ করে প্রতিটি হাউজে ১৫০ গ্রাম কেঁচো ছেড়ে দেয়া হয়। তারপর চটের বস্তা দিয়ে হাউজ ঢেকে রাখা হয়। এভাবে এক মাস ঢেকে রাখার পর তৈরি হয় ভার্মি কম্পোস্ট সার। এই ভাবে প্রতি মাসে রোজিনা বেগমের বিশাল টিনের সেড ও ৪টি সিমেন্টের হাউজ থেকে ১৫ থেকে ২০ মন সার উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি কেজি কেঁচো ৩হাজার টাকা ও প্রতি কেজি সার ১৫ টাকা করে
বিক্রি করা হয়। এতে খরচ বাদে প্রতি মাসে তার আয় হয় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। উদ্যোক্তা রোজিনা বেগম বলেন, ‘এই সার ও কেঁচো বিক্রি করে আমার প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। সারের চাহিদা থাকায় দিন দিন উৎপাদন বাড়িয়েছি। আর আমার দেখাদেখি এলাকার অনেকেই আমার কাছ থেকে সার উৎপাদনের কৌশল রপ্ত করছেন। তারাও আগামীতে ভার্মি কম্পোস্ট সারা উৎপাদন করবেন।’ তবে এজন্য সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার বলেন, এখন প্রায় কৃষক কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। বর্তমানে রাসায়নিক সারের অতি ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। এই সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরু ত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং পরিবেশবান্ধব সার এটি। কেঁচো সার ব্যবহারে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমেছে। জৈব সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেঁচো দিয়ে সার উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।