আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি:: বরগুনার আমতলীর উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের হালিমা খাতুন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে পিয়ন পদে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়ার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনা প্রমানিত হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার
গুলিশাখালী ইউনিয়নের হালিমা খাতুন নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন গুলিশাখালী গ্রামের আব্দুল হক জোমাদ্দারের ছেলে রিয়াজ জোমাদ্দার এর নিকট থেকে স্টাম্পে লিখিত চুক্তি করে পিয়ন পদে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। ঘুষ নেওয়ার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও রিয়াজ জোমাদ্দারের চাকুরি না হওয়ায় সে
তার ঘুষের টাকা ফেরৎ দাবী করেন। এ নিয়ে অনেক দেন দরবার হলেও রিয়াজ তার টাকা ফেরৎ পায়নি। টাকা ফেরৎ না পেয়ে ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডঃ এইচএম মনিরুল ইসলাম মনির নিকট ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। লিখিত অভিযোগের পর বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত
কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন গুলিশাখালী ইসহাক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম আহবায়ক, হালিমা খাতুন নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আল মামুন ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য শিরিনা বেগম। ওই কমিটি তদন্ত করে রিয়াজ জোমাদ্দারের নিকট থেকে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার বিষটি প্রমানিত হওয়ায় তারা
সভাপতি বরাবর লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সভাপতি গত ১০ জুলাই বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভা ডাকেন। ওই সভায় টাকা নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সভাপতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেনকে টাকা ফেরৎ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলে ওই সভায় রেজুলেশনের মাধ্যমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্ত
কমিটির আহবায়ক গুলিশাখালী ইসহাক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে রিয়াজ জোমাদ্দারের নিকট থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি তদন্তে প্রমানিত হয়েছে। অভিযোগকারী রিয়াজ জোমাদ্দার বলেন, হালিমা খাতুন নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমাকে পিয়ন পদে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে
আমার কাছ থেকে দুই দফায় ৪ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা স্টাম্পে স্বাক্ষর করে ঘুষ নেন। আমাকে চাকুরি না দিয়ে তিনি ঘুরাতে থাকেন। টাকা ফেরৎ চাইলে সে টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। অভিযুক্ত হালিমা খাতুন নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি রিয়াজ জোমাদ্দারের নিকট থেকে কোন টাকা
নেইনি। তবে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি করে টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেনি। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন, সভা চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে লাঞ্চিত করেছে। সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি রেজুলেশনে করে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও
গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডঃ এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, চাকুরি দেওয়ার কথা বলে রিয়াজ জোমাদ্দারের নিকট থেকে সারে ৪ লাখ, পারভেজ খান নামে একজনের নিকট থেকে ২ লক্ষসহ একাধিক মানুষের নিকট থেকে ঘুষ নিয়েছেন। কাউকেই তিনি চাকুরি দিতে পারেনি। ওই বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির তদন্তে সত্যতা পেয়ে তাকে টাকা ফেরৎ দিতে বলায় সে টাকা দিতে অস্বীকার করে।
এজন্য সভা ডেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। লাঞ্চিত করার বিষয়ে তিনি জানায় টাকা ফেরৎ দেওয়ার কথা বলায় যাতে টাকা ফেরৎ দেওয়া না লাগে সেজন্য তিনি নাটক সাজিয়েছে। লাঞ্চিতের ঘটনা সম্পূর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট। আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিয়াউল হক মিলন বলেন, হালিমা খাতুন নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাকুরি দেওয়ার নামে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে মৌখিক ভাবে শুনেছি। তবে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।