খুলনার সর্বত্র বাড়ছে নিষিদ্ধ পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহার

 সৈয়দ জাহিদুজ্জামানঃ খুলনায় আইনের প্রয়োগ ও প্রচারের ব্যর্থতায় নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। এখন ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্যও পলিথিন ব্যবহার করা হয় । পাশাপাশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে পরিত্যক্ত জুতা-স্যান্ডেল ও ওয়ান টাইম চায়ের কাপসহ থালা ও গ্লাস। পলিথিনের ব্যবহার রোধে হাল ছেড়ে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নেই দূষণ রোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা। পরিবেশবিদদের মতে,

 

পলিথিন মাটিতে আটকে পানি ও প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান চলাচলে বাধা দেয়। মাটিতে থাকা অণুজীবগুলোর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে না, জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায় এবং শস্যের ফলন কম হয়। পলিথিন ও প্লাস্টিকজাত পণ্যের ব্যবহার বেড়ে চলায় হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। যত্রতত্র পলিথিন ফেলায় ভরাট হচ্ছে নদী, খাল ও পয় নিষ্কাশনের নালা। এছাড়া, চায়ের কাপের মতো ওয়ানটাইম প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারও

 

অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন এখানে- সেখানে ফেলা হচ্ছে কোটি কোটি প্লাস্টিকের চায়ের কাপ, পানির গ্লাস ও থালা যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচাবাজার, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। একবার ব্যবহারের পর পলিথিন ব্যবহার শেষে সেগুলো ছুড়ে ফেলা হচ্ছে রাস্তা, ফুটপাত কিংবা ড্রেনে। যা পরিবেশকে ঠেলে দিচ্ছে

 

হুমকির মুখে। পলিথিনের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার, উৎপাদন, বিপণন নিষিদ্ধ হলেও এর ব্যবহার রোধে কর্তৃপক্ষের নজর নেই। বাংলাদেশ পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবি সামাজিক সংগঠন আলোর মিছিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ তারেক বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতি বিবেচনা করে প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশই সবার আগে পলিথিনকে আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করেছিল। তবে বর্তমান সময়ে বাজারে পলিথিনের আধিপত্য

 

দেখলে বোঝার কোনো উপায় নেই, ২০ বছর আগেও নিষিদ্ধ ছিল এ পলিথিন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫-এর পরিপ্রেক্ষিতে পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি নিষিদ্ধ পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন করে, তাহলে ১০ বছরের কারাদন্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে

 

পারেন। সেই সঙ্গে পলিথিন বাজারজাত করলে ছয় মাসের জেলসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এ আইনের অবস্থা দাঁড়িয়েছে এমন যে, কাজীর গরু খাতায় আছে গোয়ালে নেই। অর্থাৎ আাইন আছে আইনের প্রয়োগ নেই। বর্তমান সময়ে এর যথাযথ প্রয়োগের অভাবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। পলিথিন বন্ধে একসময় অভিযান চললেও এখন অজ্ঞাত কারণে বন্ধ আছে। এখন যেভাবে

 

পলিথিন ব্যবহৃত হচ্ছে তা বেআইনী। এ ব্যাপারে সরকারের তেমন মাথাব্যথা নেই। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশ পরিবেশগতভাবে মহা বির্পযয়ের সম্মুখীন হবে। পরিবেশ দিবসে পরিবেশবাদী সংগঠন আলোর মিছিলের উপদেষ্টা শেখ মমতাজ শিরিন ময়না ভবলেন, জটিল পলিমারাইজেশন বিক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট দীর্ঘ শিকল বিশিষ্ট পলিথিনের নন-বায়োডিগ্রেডেবল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিবেশের ওপর

 

বহুমাত্রিক ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। এগুলো বছরের পর বছর মাটিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে নির্দিষ্ট গভীরতায় পুরুস্তর সৃষ্টি করে, যা বৃষ্টির পানি মাটির গভীরে অনুপ্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে উপরিভাগে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এছাড়া পলিথিন আবরণ পচনশীল পদার্থসমূহের সরাসরি বিয়োজনে প্রতিবন্ধক এবং দূষিত তরল লিচেট তৈরীর জন্যও প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top