নানা উৎসের শব্দ দূষণে অতিষ্ঠ খুলনার দিঘলিয়াবাসী

সৈয়দ জাহিদুজ্জামানঃ দিঘলিয়ায় বিভিন্ন কারণে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ হচ্ছে। ফলে এলাকার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। প্রতিদিন কোন না কোন স্থানে মাইক, পটকাবাজি, ডিজেল চালিত জেনারেটর, মিছিল, মিটিংয়ে স্লোগান, পরিবহনের অতিরিক্ত সাউন্ডে হর্ন বাজানো ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক অনুষ্ঠানে উচ্চশব্দে বাজানো হচ্ছে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম। যার কারণে শব্দ দূষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন এলাকায় বিয়েবাড়িতে ও নানা অনুষ্ঠানে গভীর রাত পর্যন্ত বাজে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম। মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণের কারণে সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদন্ড ও কারাদন্ডের বিধান থাকলেও দিঘলিয়া উপজেলায় তা প্রয়োগ হচ্ছে

না। দিঘলিয়া সদরের বিভিন্ন মার্কেটে মোবাইলের দোকানে অতিরিক্ত সাউন্ডে গান বাজানো হয়। আগামী মাসে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। আরো সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য পরীক্ষার্থী রয়েছে। গভীর রাত পর্যন্ত মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম বাজানোর কারণে পরীক্ষার্থীদেরও নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের লেখা-পড়ায় চরম সমস্যা হচ্ছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে অসুস্থ রোগীদের।এক সূত্রে জানা গেছে, শব্দদূষণ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দেয়ার বিধান থাকলেও তা কার্যকর না করায় মূলত শব্দদূষণের মাত্রা বাড়ছে। এ ছাড়া যা থেকে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ হয় তা হলো পটকাবাজি (৯০-১২০ ডেসিবেল), ডিজেল চালিত জেনারেটর (৮০ ডেসিবেল), মিছিল, মিটিংয়ে স্লোগান, লাউড স্পীকার ও মাইকের মাধ্যমে (১১০ ডেসিবেল)। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১৩৯ এবং ১৪০নং ধারায় নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহার ও আদেশ অমান্য করার শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রয়েছে। তাছাড়া শব্দ দূষণকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। ২০০৬ সালের পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ আইনের

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী নীরব এলাকায় ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দিনে ৫০ এবং রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ এবং রাতে ৪৫ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবেলের মধ্যে শব্দের মাত্রা থাকা বাঞ্ছনীয়। এই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। শুধু নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে আবাসিক এলাকায় শব্দের মান মাত্রা অতিক্রমকারী যন্ত্রের ব্যবহার করা গেলেও দিঘলিয়া সদর ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নিত্যদিন অবাধে চলছে শব্দ দূষণকারী যন্ত্রের ব্যবহার। ইদানীং দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন, বারাকপুর ইউনিয়ন, সেনহাটি ইউনিয়ন ও গাজীরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে, হাটে-বাজারে বিভিন্ন এলাকায় মাইক ও সাউন্ডবক্সের মাধ্যমে শব্দ দূষণ চলছে। অনুষ্ঠানের আয়োজকরা নাম মাত্র

অনুমোদন নিয়েই ইচ্ছেমতো মাইক টাঙিয়ে ও সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে শব্দ দূষণ করে যাচ্ছে। পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠন আলোর মিছিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ তারেক এ প্রতিবেদককে জানান, ইদানীং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শব্দদূষণ বেড়েছে। যত্রতত্র মাইক বাজানো, পটকাবাজির আওয়াজ, ডিজেল চালিত জেনারেটর, বিভিন্ন পরিবহনের অতিরিক্ত সাউন্ডে হর্ন বাজানো। দিঘলিয়ায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। দিঘলিয়া থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি জানান, দিঘলিয়ায় চলছে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে শব্দ দূষণ। প্রচলিত শব্দ দূষণ আইন থাকলেও প্রয়োগ না থাকায় বেপরোয়া শব্দে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। সম্প্রতি উপজেলায় শব্দ দূষণের মাত্রা অনেকগুণ বেড়েছে। ফলে স্থানীয় জনসাধারণ সাময়িক বধির বা স্থায়ী বধির হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে শিশু-কিশোররা রয়েছে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৬ এর বিধিমালায় বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকার সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ কাজের ইট বা পাথর ভাঙ্গার যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।

যানবাহনে অপ্রয়োজনে উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো যাবে না। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। এই বিধির আওতায় স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে কোন উৎসব, সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকার, অ্যামপ্লিফায়ার বা কোন যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করতে হলে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি লাগবে। এসব কার্যক্রম সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টার বেশি হবে না। পাশাপাশি রাত ১০টার পর কোনভাবেই শব্দ দূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। দিঘলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সম্প্রতি বিভিন্ন নির্বাচন, সামাজিক অনুষ্ঠানে, হাটে-বাজারে, ফেরিওয়ালা, সামাজিক অনুষ্ঠানে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বিভিন্ন নির্বাচন উপলক্ষে একাধিক মাইক উচ্চ শব্দে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্যিক বিভিন্ন প্রচারের জন্য প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, বাজার, ও আবাসিক এলাকায় প্রচারকারীরা উচ্চশব্দে প্রচার চালাচ্ছেন। এমনকি যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়ও তারা অবাধে প্রচার চালাচ্ছে। পথচারীরা প্রতিবাদ করলে তাদের সঙ্গে প্রচারকারীদের তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বসচা ঝগড়া ও মারামারিতে রূপ নিচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে কানে আঙ্গুল

দিয়ে রাস্তায় চলাচলকারীরা শব্দের যন্ত্রণা সহ্য করছেন। সরেজমিনে কয়েক প্রচারকর্মী জানান, এ সম্পর্কে কোন আইন আছে বলে তাদের জানা নেই। এত বছর ধরে মাইক চালাচ্ছি, কেউ তো কিছু বলে নি। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইদ্রিস এ প্রতিবেদককে জানান, স্বাধীন দেশ, যার যা খুশি তাই করে। মানুষের চিন্তা কেউ করে না। এভাবে উচ্চশব্দে মাইক বাজিয়ে প্রচার নয়, রীতিমত মানুষকে অত্যাচার করা হচ্ছে।এ জনপদের সাধারণ মানুষ অবৈধ এ সাউন্ড সিস্টেম উচ্ছেদসহ মাত্রাতিরিক্ত শব্দ দূষণ বন্ধে জন্য বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি, পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top