ছাতকের সবার মুখে লিচুর গ্রাম মানিকপুরের বাগানে গাছে-গাছে ঝুলছে রসালো ফল পাকা লিচু

সেলিম মাহবুব, ছাতক: সুনামগঞ্জের ছাতক-দোয়ারাবাজারে চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় বাগানে লিচুর ফলন কম হয়েছে। বর্তমানে টিলা বেষ্টিত এ অঞ্চলের লিচু বাগানের গাছে-গাছে এখন ঝুলছে মৌসুমী রসালো ফল লিচুর ছড়া । চলতি মৌসুমে এখানকার চাষীরা লিচু বিক্রি করে লক্ষ-লক্ষ টাকাআয় করবেন বলে জানান এই এলাকার একাধিক লিচু চাষী। ছাতকসহ দোয়ারাবাজারের কিছু গ্রামে ২০-২২ বছর ধরে বানিজ্যিক ভাবে লিচুর চাষ করা হয়। ছাতক – দোয়ারাবাজারের লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট-বাজারে খুব কম বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। তবে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এর চাহিদা ব্যাপক। এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচু দিয়েই ছাতক-দোয়ারাবাজারের

মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। গত কয়েক দিন ধরে ছাতক-দোয়ারাবাজার সহ স্থানীয় হাট বাজারে এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচুর বিক্রি শুরু হয়েছে। ছাতকসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাটে এখানের উৎপাদিত লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি হয় প্রতিদিন । বর্তমানে হাটে এ অঞ্চলের উৎপাদিত ১০০ লিচু ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর, গোদাবাড়ী, চাঁনপুর, বড়গল্লা, রাজারগাঁও এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার লামাসানিয়া ও টেংরাটিলায় রয়েছে লিচুর বাগান। এখানের উৎপাদিত লিচু আকারে ছোট হলেও এ লিচু খুবই মিষ্টি। লিচু চাষী মানিকপুর গ্রামের আরব আলী, আজাদ মিয়া, গোদাবাড়ী গ্রামের আব্দুল কাদির, আব্দুল মমিন, রাজারগাঁও গ্রামের

আব্দুল মানিক, চাঁনপুর গ্রামের আনোয়ার মিয়া ও লামাসানিয়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, লাভ জনক লিচু চাষের সাথে জড়িয়ে তারা সহ এখানের শতাধিক লিচু চাষী এখন স্বাবলম্বী। লিচুর বাজারমূল্য সব সময়ই ভালো থাকে। চলতি মৌসুমে লিচুর ফলন আশানুরূপ হয়নি। খরার কারণে লিচুর মুকুল ঝরে পড়ায় ফলন অনেকটা কম হয়েছে। এদিকে মানিকপুরের সাথে ছাতক – দোয়ারা বাজারের সড়ক যোগাযোগ অত্যন্ত নাজুক। ফলে চাষীরা এ অঞ্চলে তাদের উৎপাদিত লিচু সঠিক সময়ে বাজার জাত করতে পারছেন না। ছাতক-সিলেট রেলপথ বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও এখানের উৎপাদিত লিচু কম খরছে পাঠাতে পারছেন না বলে তারা জানান। ছাতক শহর থেকে সুরমা নদী পাড়ি দিয়ে ৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টিলা বেষ্টিত চৌমুহনী বাজার

ও লিচুর গ্রাম হিসেবে পরিচিত মানিকপুর গ্রাম। একটু এগুলেই দোয়ারাবাজারের লামাসানিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুর গাছ। বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ করেছেন এলাকার শতাধিক পরিবার। বর্তমান সময়ে ছাতক-দোয়ারাবাজারের এই এলাকার বাগানগুলোতে দেশীয় জাতের পাকা রসালো ফল লিচুর ছড়া গাছে-গাছে ঝুলছে। যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। লিচু বাগান দেখতে আসা এখানে দর্শনার্থীদের ভীড় ও কম নয়। লিচু চাষী গোদাবাড়ি গ্রমের আবদুল বারী,মানিকপুর গ্রামের শওকত আলী জানান, চারা রোপনের তিন বছরের মধ্যে লিচু ধরা শুরু হয়। একটি বড় লিচু গাছের লিচু বিক্রি করে বছরে ২৫ থেকে ৩০হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। ছাতক- দোয়ারাবাজারের এ অঞ্চলে ২০/২২ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরি করে লিচুর চাষ করা হচ্ছে। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন-দিন এর

পরিধি বেড়েই চলছে। স্থানীয়রা জানান, গত ক’বছর ধরে উপজেলা কৃষি বিভাগও লিচু চাষে লোকজনকে উৎসাহী করছে এবং বিদেশী লিচুর চারা চাষীদের মাঝে বিতরণসহ বিভিন্নভাবে সরকারি সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ছাতক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান
ও দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (অবঃ) মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ জানান, লিচু চাষীদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা। অনেককে লিচু চাষে উদ্যোগী করা হয়েছে।তাদের সরকারি সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে চাষীরা পাচ্ছেন ভালো বাজার মূল্য। টিলা বেষ্টিত এ অঞ্চল লিচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে লিচুর বাগান করতে আগ্রহীদের সরকারি সকল সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top