মনিরুল ইসলাম, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: ভারত সীমান্তের কোল ঘেঁষে অবস্থিত জবই বিল। উত্তরাঞ্চলের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এই বিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই বিলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে পর্যটক। যার ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারের ঈদুল ফিতরেও। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে জবই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। মুগ্ধ হন বিলের আভ্যান্তরিন ও বাহ্যিক কারুকাজে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঈদের ৬ষ্ঠ
দিনেও জবই বিলে দর্শনার্থীদের ভীড়ের কোন ঘাটতি নেই। মুগ্ধতা প্রকাশ করেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত দর্শনার্থীরা। সব বয়সী লোকের আগমনে মুখরিত জবই বিল প্রাঙ্গন। সকলেই যেন মেতে উঠেছেন নিজেকে নতুন ভাবে উপভোগ করতে। বাহারী পোশাকে নিজের স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে সেলফোন ও ক্যামেরায় তুলছেন ছবি। কেউ এসেছেন পরিবার সহ কেউবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে। শুধু ঈদেই এমন দৃশ্য দেখা যায় তা নয়। বরং বিভিন্ন ছুটি বা বিশেষ দিনের উপচে পড়া ভীড় জমে জবই বিলে। সম্প্রতি
পাখি, মাছ সহ নানাবিধ উদ্ভিদের আবাসস্থল গড়ে উঠেছে এই বিলে। এবং সক্রিয় ভাবে সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার ফলে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে এই বিল। শুধু তাই নয় বর্তমান সময়ে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় নের্তৃবৃন্দের অক্লান্ত পরিশ্রমে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে জবই বিল। বর্ষাকালে পানিতে ফুলে-ফেঁপে যৌবন ফিরে পায় জবই বিল। বিশালাকার জলরাশিতে নৌকা,স্পিডবোর চলাচলে নবরূপে প্রাণ ফিরে পায় এই বিল। বর্তমান সময়ে অথৈ জলরাশি না
থাকলেও মাঠ ভরা সোনালী ফসলে যেন প্রকৃতির রূপ ফুটে উঠেছে অপরূপ ভাবে। মুক্ত হাওয়ায় যেন শীতল হয়ে ওঠে প্রাণ। পাশাপাশি এবারের মূল আকর্ষণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু নান্দক স্থাপনা। বিলের উপর নির্মিত ব্রিজের প্রবেশ পথেই চোখে পড়ে নান্দনিক সেল্ফি পয়েন্ট। একটু এগিয়ে যেতেই বাম পাশে আপনার দৃষ্টি কাড়বে নান্দনিক ভাস্কর্য “মাছ চত্বর”। যা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যেগে রৈী করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সড়কের দু’পাশে চোখে পড়বে লাল, সাদা ও হলুদ রঙ করা
সারিবদ্ধ পিলার। রাস্তার দুই ধারে দৃষ্টিনন্দন বসার ১২টি বেঞ্চ। সড়ক পেরিয়ে পশ্চিম পাশে গেলে চোখে পড়ে “বিল বিলাস” নামক দুটি ভিউ পয়েন্ট। যা পর্যটকদের মন কাড়ে। এছাড়াও বর্ষা মৌসুমে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিল এলাকায় বসানো হয়েছে বজ্রপাতনিরোধক যন্ত্র। মহাদেবপুর থেকে বিলে ঘুরতে আসা পর্যটক আব্দুল আজিজের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পরিবার সহ বিল দেখতে এসেছি। গত বছরেও এই বিলে এসেছি। প্রতি ঈদেই জবই
বিলে আসা হয়। কিন্তু অন্যান্য বছর এই ধরণের মনোরম দৃশ্য চোখে পড়েনি। তবে এবারে নতুন নতুন স্থাপনা দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।” এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, “ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে দর্শনার্থীদের জন্য নানাবিধ স্থাপনা তৈরী করা
হয়েছে। এছাড়াও মাছ সংরক্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি অভয়াশ্রম তৈরী করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করা হবে। যাতে করে জবই বিল সারাদেশে সুনাম কুড়াতে পারে”। জবই বিলে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় নের্তৃবৃন্দের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ধারা অব্যহত থাকলে এই বিলটি হতে পারে উত্তরাঞ্চলের নামকরা পর্যটনকেন্দ্র এমনটাই ধারণা সচেতন মহলের।