অধ্যাপক মাহবুব মুরশেদ শাহীন ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার ফলসী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের দিনমজুর আলমগীর মন্ডল( আলম) চারটি কন্যা সন্তানের জনক। বড় কন্যা শ্যামলী খাতুন ১০-১২ বছর বয়সে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অভাব অনটনের কারণে আজ থেকে প্রায় এক যুগ পূর্বে তার মেজ কন্যা কাঞ্চনমালাকে তার দূর সম্পর্কের
এক আত্মীয়ের সূত্র ধরে ঢাকার আগারগাওয়ের একটি বাসা বাড়িতে রেখে আসে। কিছুদিন যেতে না যেতেই
কাঞ্চনমালা সে বাসাতে নানা প্রকার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে থাকে। একদিন কাঞ্চনমালা ঐ বাসা থেকে ময়লা ফেলার নাম করে বের হয়ে পড়ে। পথের ধারে কাঁদতে দেখে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের প্রবাসী শফিক সাহেবের স্ত্রী কাঞ্চনমালাকে তাদের বাসায় নিয়ে যেয়ে তিন পুত্রের পাশাপাশি এক কন্যসম স্নেহাদরে লালন পালন করতে থাকে। ৫/৬ বছর বয়সী শিশু কাঞ্চনমালা তার বাবার নাম আলম, তিন বোন, নিজ গ্রাম বোয়ালিয়া এবং পাশে কুলবাড়িয়া বাজার নামক একটি স্থানের নাম টুকু পর্যন্ত বলতে পারে। কাঞ্চনের বয়স এখন ১৭ বছর। কাঞ্চনের বাবা মায়ের খোঁজ খবর পাওয়ার জন্য প্রবাসী মানবিক পরিবারটি নানামূখি উদ্যোগ গ্রহন করে। অবশেষে
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন রাত এগারোটার দিকে ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলা সদরের এক তারা মোড়ের ব্যাংক এশিয়া লিঃ এর ম্যানেজার আসাদুর রহমানের সাথে কাঞ্চনের গৃহ কর্তার বড় ছেলে রাজু আহমেদের যোগাযোগ হয়। যোগাযোগে কাঞ্চনের বাবা আলম এবং নিজ গ্রাম বোয়ালিয়ার সূত্রটি নিশ্চিত হতে পার্শ্ববর্তী বলরামপুর গ্রামের অধ্যাপক এবং গনমাধ্যম কর্মী মাহবুব মুরশেদ শাহীনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে ঐ গনমাধ্যম কর্মী বোয়ালিয়া গ্রামের আলমের সন্ধান উদ্ধার করে তার হারিয়ে যাওয়া কন্যা কাঞ্চনমালার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রাতেই মানিকগঞ্জের যাত্রাপুর পল্লীতে এ সংবাদটি পৌঁছালে আনন্দের বন্যা
বয়ে যায়। পরদিন মধ্যাহ্নে সংশ্লিষ্ট গনমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী কাঞ্চনের বাবা মাকে সাথে করে স্থানীয় ব্যাংক এশিয়ার ম্যানেজার আসাদুর রহমানের অফিসে নিয়ে যেয়ে ভিডিও কলের মাধ্যমে কাঞ্চনের সাথে বাবা মাসহ গৃহকর্তার কুশলাদি বিনিময় করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কাঞ্চন এবং তার গৃহকর্তা সোমবার দুপুরেই বাবা মাকে মানিকগঞ্জ যাওয়ার জন্য জোর তাগিদ দিতে থাকে। অবশেষে মঙ্গলবার প্রত্যুষে বাড়ি থেকে রওয়ানা দেয় কাঞ্চনের বাবা মাসহ আসাদ সাহেবেদের ছোট্ট কাফেলা। দুপুরের দিকে মানিকগঞ্জের যাত্রাপুর রাজু আহমেদের
বাসায় পৌছালে সেখানে আগাম ঈদের আনন্দ বয়ে যায়। বাবা মা নাড়ি ছেড়া ধন কন্যাকে পেয়ে আর কন্যা জন্মদাত্রী বাবা মাকে পেয়ে সুখ সাগরে ভাসতে ভাসতে অঝোরে কাঁদতে থাকে। সন্তান কাছে পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বাবা মা। রোজাদার বাবা মাকে আদর আপ্যায়নের জন্য সেখানে রেখে আগামীকাল বুধবার অপরাহ্নে হরিনাকুণ্ডুতে আনুষ্ঠানিক ভাবে নিখোঁজ বাবা মায়ের কাছে সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে এক যুগ পরে নিখোঁজ কন্যাকে ফিরে পাওয়ার খবরটি গোটা এলাকা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।