দেশ-বিদেশে চির স্মরণীয়, মরহুম হাফেজ নেছার উদ্দীন (রহ:)

মনজুর হোসেন,লক্ষ্মীপুরঃ শাহ ওয়ালী উল্লাহ ইসলামিক সেন্টার বাংলাদেশের এর চেয়ারম্যান হাফেজ নাজমুস সা’দাত আহমেদ সাহেবের পিতা, মরহুম হাফেজ নেছার উদ্দিন আহমেদ (রহ:) দেশ-বিদেশে চির স্মরণিয় এবং বরণীয় ব্যক্তি। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৪২ সালে ১লা অক্টোম্বর, হাফিজ নেসার উদ্দিন আহমদ (রহ:) চল্লিশ দশকের শুরুতে একটি ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। পিতা মাও মানসুর আহমদ (রহ:) এর তত্ত্বাবধায়নে হেফজ শেষ করেন, এর পর টুমচর ,নোয়াখালি , কুমড়াদি ও ঢাকা আলিয়া মাদরাসা হতে ১৯৬৩ সালে কৃতিত্বের সাথে কামিল পাশ করেন। উচ্চতর শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে মাও মাওদুদি (রহ:) এর আহ্বানে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতি হন । উনি উনি সর্বপ্রথম পূব পাকিস্তান থেকে মাওলানার পছন্দ কৃত মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথম ছাত্র,এরই মধ্যে সাইয়েদ তাহের জাবেরী আল মাদানী (রহ:) কন্যা সাইয়েদা ফাতেমার সাথে বিবাহে আবদ্ধ হন।

শরীয়াহ বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রী লাভের পর ইউকে ইসলামী মিশনের আহ্বানে লন্ডনে পাড়ি দেন। গ্রেইট ব্রিটেন এ যারা ইসলাম প্রচারের কাজকে বেগবান করতে শক্ত হাতে কাজ করেছেন, তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। লন্ডনে আসেন ষাটের দশকে, তিনি সেই যুবক বয়সেই তৈরি করে ছিলেন বিশ্বের বড় বড় স্কলারগণের সাথে সক্ষমতা, বিশেষ করে সৌদিআরবের ইমাম আব্দুল্লাহ ইবন বায, ও শেখ আল বানী ওনার ওস্তাদ ছিলেন , শেখ আল বানী (রহ:)লন্ডনে আসলে শেখ উনার ঘরে মেহমান হতেন এছাড়া ও ডঃ আব্দুল মুহসিন আত তুরকী, মুহাম্মাদ কুতুব, ড.কামাল হিলবাওয়ী এবং পাকভারতের মাও মাওদূদী ও শায়খ আবুল হাসান নাদাওয়ী , উনাদের সাথে সম্পর্কে ছিল অনেক নিকটের।সুদানের হাসান তুরাবির সাথে তিনি রেখেছিলেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধন, ফিলাস্তিনের প্রফেসর ডঃ আযযাম তামিমি বরাবরই তাকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখেছেন, পাকিস্তানের খুররম মূরাদের সাথে ছিলো তার আবাল্য বন্ধুতা, ছিলো নাঈম সিদ্দীকীর সাথে ও

দেখেছি পাকিস্তানের মিয়া মুহাম্মাদ তুফায়েল, ক্বাজি হুসায়ন আহমাদ, সাইয়েদ মুনাওয়ার তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে , দেখেছি ব্রিটেনের সর্বস্তরে মুসলিম নেতৃবৃন্দের অকুন্ঠ ভাল বাসা দেখাতে তিনি ছিলেন মাও মাওদূদির খুবই আস্থা ভাজন। মাও যখন ব্রিটেনর এসে ইসলামি আন্দোলনের বীজ বপন করতে চাইলেন, এবং ইউকে ইসলামি মিশনের গোড়া প্রতিষ্ঠা করেন, তখন থেকে আজ ও এই সংগঠন ব্রিটেনের শত শত মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত করেছে। যেখানে হাফেজ সাহেবের রয়েছে অনেক বড় অবদান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইউকে ইসলামিক মিশন থেকে বাংলাদেশিদের আলাদা করে দাওয়াতুল ইসলাম ইউকে এন্ড আয়ার নামে নতুন সংগঠনের এই দাওয়াতুল ইসলামের হাতেই প্রতিষ্ঠিত হয় ইউরোপের সেরা মসজিদ ও প্রতিষ্ঠান ইস্ট লন্ডন মসজিদ। পাকিস্তানের ড. সোয়াইব হাসান উনারা একই

সাথের সমসাময়িক আমি তার সাথে যত বারই একান্তে বসেছি, ইতিহাসের নানা উত্থান পতনের ঘটনার থলে তিনি আমার সামনে মেলে ধরেছেন। ঋদ্ধ হতাম, জানতে পারতাম অনেক গভীর তথ্য। কিভাবে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ পার্ট লন্ডনে দুইভাগ হয়, কারা কারা এখানে বড় বড় ক্ষতিকর ভূমিকা পালন করে, কিভাবে ব্রিটের মুসলিম কমিউনিটিতে ফাটল ধরে। তিনি চলে আসেন সাউথ লন্ডনে এখানের বালহাম, কলিয়াজউড মসজিদ নির্মানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন ,এর পর তিনি নিজের উদ্দ্যোগে বাটারসি ফ্যালকন রোডে বিশাল ইসলামি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন যেখান থেকে আজ ও ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়ছে ॥ দীনের দাওয়াতের উদ্দেশ্যে ১৯৮৮ সালে স্বপরিবারে বাংলাদেশে চলেযান । সেখানে তিনি শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদদেস দেহলভির নামে একটা বহুমূখী বেদাআত ও শেরেক মুক্ত ইসলামী সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজ দেশের বিভিন্ন জেলাতে কাজ করে যাচ্ছে ।তিনি খুব গম্ভীর, মেধাবী ও অত্যন্ত

বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। পড়াশুনা করতেন,আরবী উর্দুতে তিনি খুবই ভালো ছিলেন ফলে আরবী ও উর্দু সাহিত্যের ভান্ডার তার আয়ত্বে ছিল, এর ই মধ্যে তিনি অনেক গুলো বই ও রচনা করেন তার মধ্যে “ টেমস নদীর তিরে “একটি চমৎ কার বই। উনি বিলাতে এসেও দ্বীনি কাজের ব্যাপারে মশগুল ছিলেন। অনুরুপ ভাবে বেশি আগ্রহ নিয়ে তিনি বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার এ ইসলামী জ্ঞান বিস্তারের জন্য চেষ্টা চালিয়েছেন, তিনি এতগুলো প্রজেক্ট পরিচালনা করেছেন যা ভাবতে ও অবাক লাগে ।
তিনি খুব বড় স্কলার ছিলেন ।ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনেক বার তার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে , প্রতিবার ই উম্মাহর কল্যান কামনা এবং নির্যাতিত মানবতার পথ অনুসন্ধানে তাকে সচেষ্ট দেখিছি , এতিমরা ছিল তার পরিবারের সদস্য, কলিজার টুকরা , এতিম লালন ছিল তার অন্যতম সাধনা , অনাত গরীব অসহায়দের সাথে একাকার হয়ে থাকাই ছিল তার জীবনের অবিচেছদ্য অংশ।ছেলে মেয়েদের তিনি ইসলামের উপরেই লালন

পালন করেছেন। ২০১৫ সালের ৪ ই ফেব্রুয়ারী তারিখে , রাতে সাউথ লন্ডন সেনট জজেস হসপিটালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। খুব আরামের সাথে তাঁর চাওয়া দিনেই আল্লাহর রহমতের চাদর গায়ে নিয়ে ইন্তেকাল করেন। এই মহান মনিষীর মৃত্যু বার্ষিকীকে দেশ ও প্রবাসের মানুষ, তাঁকে আজ ও স্মরণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।এমন মানুষ প্রতিদিন জন্ম নেয় না,এরা ক্ষনজন্মা। দেশ- বিদেশের মানুষের একই কামনা, মহান আল্লাহ যেন মরহুম হাফেজ নেছার উদ্দীন (রহ:) কে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন,আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top