বগুড়া প্রতিনিধিঃ বগুড়ার শেরপুরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান বিজয় দিবস উদযাপন নানা অব্যবস্থাপনার ও অসংগতির মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা। এসব চাঁদা আদায়ের দায়িত্বে ছিল মহান বিজয় দিবস উদযাপনের অর্থ সংগ্রহ আদায় উপ-কমিটিসহ ইউএনও অফিসের কতিপয় কর্মচারীরা। আর এসব অব্যবস্থাপনার তীর ছুঁড়ছে খোদ নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানার দিকে! সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাঁদাবাজির বিষষটি নিয়ে নানা প্রশ্নের উদয় হয়েছে সচেতনমহলে। আর সবাই এতো অভিযোগের আঙ্গুল তুলছেন উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তার দিকে। জানা যায়, ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার দিনব্যাপী মহান বিজয় দিবস যথাযথভাবে উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহন করে উপজেলা প্রশাসন। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা, সাংস্কৃতিক, কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসুচীর আয়োজন করা হয়। আর এসব কর্মসুচী পালনের জন্য আর্থিক সংকুলান এড়াতে অর্থ আদায়ের জন্য নানা কৌশল হাতে নেয় উপজেলা প্রশাসন। এ প্রেক্ষিতে এ দিবসের কয়েকদিন আগে থেকেই অনুষ্ঠানের চিঠি ও অর্থ আদায়ের রশিদ দিয়ে আসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে।
এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মিল-চাতাল, ইট ভাটা, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার, এনজিও, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, বিভিন্ন দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থাকে আদায় করা হয় লক্ষ লক্ষ টাকা এমন অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
অপরদিকে শেরপুর সরকারি ডিজে মডেল হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত মহান বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের অতিথি মঞ্চের পিছনে মূল ব্যানার টানানো ছিলনা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত আসন সংরক্ষণ না করায় মাঠে বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরতে দেখা যায় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের। এসব বিষয়গুলোকে উপজেলা প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা বলে দাবী করেছেসচেতনমহলেরা।
বিজয় দিবস উদযাপনে উপজেলা প্রশাসনের চাঁদা দাবির বিষয়ে নামপ্রকাশ না করার শর্তে শেরপুরে একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলেন, উপজেলা প্রশাসন বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তাদের দাওয়াত দিয়েছেন এবং সঙ্গে ৫ হাজার টাকা অনুদান দেয়ার জন্য একটি চিঠিও দিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদানের নামে চাঁদা নেওয়া অপমানজনক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে এভাবে চাঁদা আদায়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির আশঙ্কা করছেন তারা।এদিকে উপজেলা কমিশনার(ভূমি) কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম প্রশিক্ষণে থাকলেও তাকে(ওই কর্মকর্তা)কে মহান বিজয় দিবসের অর্থ সংগ্রহ উপ কমিটির আহবায়ক হিসেবে রেখে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট উপ-
কমিটি গঠন করা হয়।ওই কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি অফিসার ফারজানা আক্তার বলেন, এ দিবসে ‘আমার এখতিয়ার যেটুকু আমি দেখেছি’, বাকীগুলো কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে তা আমার জানা নাই।অর্থ সংগ্রহ উপ কমিটির আরেক সদস্য শেরপুর থানার পুলিশপরিদর্শক (তদন্ত) লাল মিয়া বলেন, আমাকে যে ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে, সেটাইতো আমার জানা নাই। অর্থ সংগ্রহ উপ কমিটির অন্যতম সদস্য উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রায়হান বলেন, মহান বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির বিভিন্ন উপ-কমিটির ৩ কমিটির আহবায়ক। সেক্ষেত্রে অর্থ সংগ্রহ উপ-কমিটির সদস্য থাকার তো কথা নয়! তাছাড়া তহবিল সংগ্রহের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই তদারকি(ডিলিক্স) করে
থাকেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, কুচকাওয়াজ মাঠে সাজসজ্জায় সামনে ব্যানার থাকায় পিছনে ব্যানার দেয়ার প্রয়োজন বোধ মনে করিনি। তাছাড়া সাংবাদিক আসন সংরক্ষণের বিষয়টি আমাকে কেউ মনে করিয়ে দেয়নি, তাই কি বলবো! এছাড়াও বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, কেউ কেউ অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদা আদায় করেছে মর্মে আমি আমার(উপজেলা প্রশাসনের) ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে সর্তক করে দিয়েছি। তবে ওই রশিদের সরকারি অফিসের সিল মোহরও তাদের না বলে দাবী করেন।