শাজাহানপুর(বগুড়া)প্রতিনিধিঃ নিলাম নেই। সরকারের সংশ্লিস্ট দপ্তরের অনুমোদনও নেই। শুধু নৌবাহিনীর নাম ব্যবহার করে দিনে রাতে শতাধিক ট্রাকে বালু কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালি একটি মহল। বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের শৈলধুকড়ী গ্রামে শৈলধুকড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বাঙালী নদীর গফুরের ঘাটে চলছে এই বানিজ্য।
প্রতি ট্রাক গড়ে ৮শত টাকা করে বিক্রি করছেন এবং গত ৩মাসে এই পয়েন্ট থেকে কমপক্ষে ৫হাজার ট্রাক বালু নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলছেন জড়িত ব্যবসায়ীরা। এতে রাস্ট্র কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। আর নিরবতা পালন করছেন সংশ্লিস্ট দপ্তর।
একই অবস্থা চলছে শাজাহানপুর উপজেলার শেষ সীমানা এবং ধুনট উপজেলার নীমগাছি ইউনিয়নের বাবু বাজার সংলঘ্ন বাঙালী নদীর পাড়ে।
ইতিমধ্যে এখান থেকে প্রায় ৫০হাজার ট্রাক বালু বিক্রি করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি হয়ে শাজাহানপুর উপজেলার উপর দিয়ে আসছে এই বালু।
গ্রামীন রাস্তা ঘাট ভেঙে যাওয়া সহ গ্রামের বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হলেও নৌবাহিনীর নাম ব্যবহার করায় প্রতিরোধ করতে পারছেন না তাঁরা।
বিষয়টি নিয়ে নৌবাহিনীর সাথে কথা বলার জন্য বলছেন পানি বগুড়া উন্নয়ন বোর্ড। বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক।
জানাযায়, বাঙালী নদী খননের জন্য পানি উন্নংয়ন বোর্ড থেকে দায়িত্ব পায় নৌবাহিনী। ঠিকাদারের মাধ্যমে নৌবাহিনী খনন কাজ করায়। খননের বালু নদীর উভয় পাশে পাড় না বেঁধে নির্দিস্ট স্থান গুলোতে স্তুপ করে রাখে। খনন শেষে এই বালু গুলো এখন নৌবাহিনীর নাম ভাঙিয়ে বিক্রি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল।
শৈলধুকড়ী গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, স্থানীয় দূদ্ধর্ষ প্রকৃতির কিছু লোক যারা রাজনীতির সাথে জড়িত। বাঙালী নদীর গফুরের ঘাট থেকে প্রতি রাত দিন শতাধিক ট্রাকে বালু নিয়ে যাচ্ছেন। গ্রামের এই সড়ক বালু বোঝাই ট্রাক চলাচলের উপযুক্ত না। ট্রাকের চাকায় কাঁচা রাস্তা দেবে গেছে। ধুলোয় আমাদের আবাদ খুব ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিদিনই ট্রাকের চাকায় গ্রামের কারো না কারো মুরগি মারা যাচ্ছে। ছোট সন্তানদের নিয়ে আমরা আতংকে থাকি।
অনেক গ্রামবাসি বলেন, নৌবাহিনী বালু বিক্রির অনুমােদন দিয়েছে বলে আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারছিনা। নৌবাহিনী নদী খনন এবং বিক্রি করলেও আমরা কখনো তাঁদের তদারকি করতে দেখি নাই।
অরাজগতা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তাঁরা।
ধুনট উপজেলার বেড়েরবাড়ি গ্রামের বাবু বাজার এলাকার বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা জানান, বাঙালী নদীর বাবু বাজার এলাকা থেকে এক ঢিবি বালু ইতিমধ্যে নিয়ে বেঁচে দিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। ওই ঢিবিতে কমপক্ষে ৫০হাজার ট্রাক বালু ছিলো। এরকম আরো ২ঢিপি বালু রয়েছে। প্রতিদিন রাত বালু বিক্রি হচ্ছে। এই বালু দিয়ে পাড় বাঁধলে আমরা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতাম। বালু বিক্রি বন্ধে আমরা জেলা প্রশাসক এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। সবাই যোগ সাজসে এই বালু লুট করছে। আমাদের সড়ক শেষ সাথে সড়কের পাশের আবাদ।
আমরুল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং শৈলধুকড়ী গ্রামের বাসিন্দা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, আমি এক সময় এখানকার কিছু বালু বিক্রি করেছি। এখন এসবের মধ্যে আর নাই। নৌবাহিনীর ঠিকাদার রবিউল ইসলাম রবি এই বালু বিক্রি করছেন। নৌবাহিনীর জন্য প্রতি সেপ্টি বালুর নির্দিস্ট টাকা কোম্পণীর লোক রবিউল ইসলাম রবি নেন। কোন কোম্পাণী তা আমার জানা নাই।
আব্দুল হালিম, নকিব, সুরুজ সহ কয়েকজন এখন এই বালুর ব্যবসা করছেন।
আব্দুল হালিম জানান, ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম আগে বালুর এই পয়েন্টে জড়িত ছিলো তবে এখন নাই। স্থানীয় ছোবহান পাহাড়ার দায়িত্বে আছেন। আমরা কয়েকজন এই ব্যবসা করছি। নৌবাহিনীর জন্য কোম্পাণীর হয়ে রবিউল ইসলাম টাকা নেন।
রবিউল ইসলাম রবি জানান, আমি বাদল এন্টার প্রাইজে আছি। মাস খানেক হলো চাকরী বাদ দিয়েছি। আমি কোন দিন বালু বিক্রি করি নাই। কারো টাকাও আমি নেই নাই।
জানতে চাইলে গফুরের ঘাট পয়েন্টে বালু ব্যবসায় জড়িত একজন পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, এই পয়েন্টের রাস্তা সরু। একসাথে বেশি ট্রাক ঢুকলে জ্যাম লেগে যায়। মাটির রাস্তা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। ৩মাসে ৫হাজার ট্রাক বালু নিয়েছি। গ্রামের লোকজন প্রায়ই ঝামেলা করে। আকার ভেদে প্রতি ট্রাক ৭থেকে ৮শত টাকা পর্যন্ত নেই।
জানতে চাইলে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, নদী খননের জন্য নৌবাহিনী ঠিকাদার দিয়েছিলো। এ দায় দায়িত্ব তাঁদের। গফুরের ঘাট, বাবু বাজার এবং বিলচাপড়ি কি অবস্থায় আছে আমার জানা নাই। কোন কিছু জানতে হলে নৌবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেন।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক মোবাইল ফোনে জানান, বিষয়টি নিয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলব।