কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে তালগাছ সেই সাথে বিপন্ন হচ্ছে বাবুই পাখির নিরাপদ আশ্রয়

 সফিয়ার রহমান, পাইকগাছা (খুলনা) :::  কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে তালগাছ। সেই সাথে বিপন্ন হচ্ছে বাবুই পাখির নিরাপদ আশ্রয়। তাই তো দেখা মেলে না শৈল্পিক সৌন্দর্যের প্রতীক বাবুই পাখির। ছোটবেলায় আমরা অনেক বড় তালগাছ দেখেছি, দেখেছি অনেক বাবুই পাখির বাসা। কিন্তু তা আর টিকে নেই। আগেকার দিনে সারাক্ষণ তালগাছ মুখরিত হয়ে থাকতো বাবুই পাখির কোলাতানে। বলতে পারেন, একান্নবর্তী একটা পরিবার তাতে বাসা বেঁধেছে। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে একটুও দমছে না তারা। বাবুই পাখি যদি নগরায়ন বুঝত, তাহলে মনে হয় ভালোই হতো। ঝড়-বৃষ্টিতে আর প্রতিকূল পরিবেশে না থেকে চড়–ই পাখির মতো অট্টালিকায় থাকতে পারত। কিন্তু তাতে ওদের স্বকীয়তা যে নষ্ট হবে সে কথা কবি রজনীকান্ত সেন তার ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় লিখেছেন। সেই সাথে শিল্পের বড়াই তো আছেই। আর এই পঙুক্তি না বললে যেন তাদের

স্মরণ করাই হবে না; ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলেছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই’। হ্যাঁ, এই বাবুইকে বলা যেতে পারে সৃজনশীল কর্মী, শিল্পী ও সামাজিক বন্ধনের প্রতীকও। দেশে প্রধানত তিন প্রকার বাবুই থাকলেও দেশী বাবুই (যা দেখতে ছোট চড়ুইয়ের মতো) এর সংখ্যাই গণনযোগ্য। বাবুই আকারে সাধারণত ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এদের প্রজনন ঋতু এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস। আর এ সময় এদের বেশি দেখা যায়। বাবুই পাখি বাসা বুননে খুবই দক্ষ। প্রজনন মওসুমে একটা পুরুষ বাবুই দুই-তিনটা বাসা বানায়। স্ত্রী বাবুই তার ইচ্ছেমতো যে পুরুষ বাবুইয়ের বাসা পছন্দ হয়, সে বাসায় প্রবেশ করে এবং জোড়া বেঁধে ডিম পাড়ে। এই মৌসুমে পুরুষ বাবুইয়ের গলা খয়েরি, মাথা-বুক হলদে হলেও স্ত্রী বাবুইয়ের দেহের রঙ পরিবর্তন হয় না। এরা ডিম পাড়ার স্থানে নরম ধুলার আস্তরণ দিয়ে রাখে। এক মওসুমে বাবুই দুই থেকে চারটি ডিম পাড়ে।

আর বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে দুই থেকে তিন সপ্তাহ। মজার তথ্য হলো বাবুই পাখি জোনাকি ধরে বাসার দেয়ালের নরম কাদায় আটকে রেখে রাতে আলোর চাহিদা মেটায়। এদের ঠোঁটের আগার দিকটা সরু হওয়ায় এরা শস্যদানা খেতে বেশ পটু। এ ছাড়া কাউন, ছোট কীট এদের খাদ্যতালিকার অন্যতম। বর্ষা মৌসুমে কৃষক যখন মাঠে ধান বুনে, বাবুই পাখি দল বেঁধে তাতে ভূরিভোজ করে।পাখিপ্রেমী ও পরিবেশ বাদী সংগঠন বনবিবি’র সভাপতি সাংবাদিক প্রকাশ ঘোষ বিধান বলেন, কৃষিজমিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে তাল-খেজুর গাছের ব্যবহারেই কারনে বিপন্ন হচ্ছে বাবুই পাখি ও বাবুই পাখির বাসা তিনি আরো বলেন তালগাছ আমাদের ভারসাম্য রক্ষা করে ও বাবুই পাখিদের আশ্রয়স্থল তালগাছ না কাটার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top