স্টাফ রিপোর্টারঃ যশোরের অভয়নগরে পশু জবাইয়ে নিয়মনীতি উপেক্ষিত ও নিয়মিত সরকারি তদারকি না থাকায় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। সাধারণ জনগণ নিয়ম কানুন না জেনেই কিনছে গরু ও ছাগলের মাংস। প্রাণিসম্পদ বিভাগ চিকিৎসকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ছাড়পত্র ছাড়াই উপজেলার বিভিন্ন হাঁট-বাজারগুলোতে অবাধে গবাদি পশু জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া বড় বাজার, ভাঙ্গাগেট বাজারে প্রতিদিন ১০/১২ টি গরু জবাই হয়। জবাইকৃত পশুর শরীরে কোন রোগ বালাই রয়েছে কি-না এমন কোনো ধারণাই রাখেন না ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আইন প্রয়োগের দায়িত্ব প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কোনো তৎপরতা নেই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা ও সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নওয়াপাড়া ছাড়াও চেঙ্গুটিয়া বাজার, ধোপাদি নতুন বাজার, রাজঘাট বাজার, প্রেমবাগ বাজারে গরু, ছাগল, জবাই করা হয়। তাছাড়া হোটেলের চাহিদা পূরণ করার জন্যও গরু, ছাগল জবাই করা হয় বলে জানান হোটেল ব্যবসায়ী লিয়াকত। উপজেলার মশরহাটি এলাকা
থেকে গরুর মাংস কিনতে আসা ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা তো বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করেই মাংস কিনছি, কোন ভেজাল থাকলে আমাদের জানার কথা নয়, তবে সব বিষয়ে ভেটেরিনারি হাসপাতাল দেখাশোনা করলে আমাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমে আসবে। তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ধরনের কোন তদারকি না থাকায়, সাধারণ জনগণ মরা গবাদিপশু, নাকি রোগাক্রান্ত গবাদিপশুর মাংস খাচ্ছে তা বোঝার কোন উপায় নেই। পাশাপাশি ধর্মীয় নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে পশুটি জবাই করা হচ্ছে কিনা, সেটাও সকলের অগোচরে।
মাংস ব্যবসায়ী ছোরাপ বলেন, আমরা অনেক দিন থেকে গরুর মাংস বিক্রি করে আসছি। গরুর জবাই করার জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না। আগে পশু হাসপাতাল থেকে খোঁজ রাখলেও এখন আর কেউ খোঁজখবর রাখেন না। মাঝে মাঝে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লোক এসে খোঁজ খবর নিত।
এবিষয়ে নওয়াপাড়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিল মোস্তফা কামাল বলেন, পশু জবাই করার পূর্ব পর্যন্ত পশুটি সুস্থ কিনা, রোগাক্রান্ত কিনা, পশুটি গর্ভবর্তী কিনা, এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দায়িত্ব উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা চিকিৎসকের। স্যানিটারি ইন্সপেক্টর এর দায়িত্ব পশু জবাই এর পরবর্তীতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে বিক্রি হচ্ছে কিনা এবং ওজনের কারচুপি করছে কিনা।
নাম না প্রকাশ করার স্বার্থে ভাঙ্গাগেট এলাকার কয়েকজন অধিবাসী বলেন, সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রাত ১২ টার পরে রুগ্ন, গাভীন গরু জবাই করে এখানকার প্রতিটি দোকানে ভালো মাংসের সাথে মিশিয়ে বিক্রি করা হয়।
নওয়াপাড়া পৌরসভার স্যানেটারী ইন্সপেক্টর জাহিদ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করেও তার যোগাযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা পশু কর্মকর্তা ডাঃ শংকর কুমার দে বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ জনবল না থাকায় আমরা সেই ভাবে মনিটরিং করতে পারিনা। উপজেলা মিটিং এ আমি এবিষয়টি তুলেছিলাম, আমাকে জানানো হয়েছিল পশু জবাইয়ের উপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান মাঝে মাঝে পরিচালিত হবে, আর আমি নিজেও হাটতে বের হলে নওয়াপাড়া বড়বাজারে তদারকি করি ঠিকভাবে পশু জবাই হচ্ছে কি না।