রেলে লুটপাটের মহাউৎসব শেষে অবসরে যাচ্ছেন সিএমও ডাঃ সুজিৎ

স্টাফ রিপোর্টারঃ রাজশাহী রেলওয়ে মেডিকেলে চাকুরী বিধি লঙ্ঘন করে লুটপাট। টেন্ডার ছাড়াই ডিপিএম এর মাধ্যমে সিএমও সুজিৎ কুমার রায় এর নিজস্ব ক্ষমতাবলে কোটি কোটি টাকার মালামাল ক্রয়। ক্রয়কৃত মালামাল গ্রহন না করে ৩৫% কমিশনে টাকা গ্রহন। ওষুধ চুরি ও ওষুধ কোম্পানি থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহনসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগ উঠেছে পশ্চিম রেলওয়ে হাসপাতালে কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে। নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পরও ব্যবস্থা নেয়নি রেল কতৃপক্ষ। ৭ নভেম্বর দূর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে অবসরে যাচ্ছেন সিএমও সুজিৎ কুমার রায়।

ইতোমধ্যে ফাঁস হয়ে যায় তাঁর কয়েক কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা। রেলের বিভিন্ন সুত্র বলছে, সিএমও অবসরে গেলেও দুর্নীতির দায়ে ফেঁসে যেতে পারেন তার রেখে যাওয়া দোসরা। ইতোমধ্যে তার দূর্নীতির দোসরা ভীতু হয়ে তথ্য ফাঁস করছেন।
সূত্র বলছে, ডাঃ সুজিৎ কুমার রায় পাকশি ডিভিশনের ডিএমও থেকে পদোন্নতি পেয়ে ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ সালে সিএমও (পশ্চিম) হিসেবে যোগদান করেন। সিএমও হিসেবে যোগদানের পর স্যানেটারী ইন্সপেক্টরের শূন্য পদে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব দেন চতুর্থ শ্রেণির জামাদার, ড্রেসার, খালাসিদের। চাকুরী বিধি লঙ্ঘন, মনোনীত ব্যক্তিদের দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালামালের ডিপিএম এর বিপরীতে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। লালমনিরহাট ও পাকশি এবং রাজশাহী ডিভিশনে শুধুমাত্র স্যানেটারী বিভাগ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ৬ কোটি টাকা।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, পাকশি ডিভিশনে ৫টি স্যানেটারী ইন্সপেক্টর পদ আছে। ৫ পদের বিপরীতে একজন স্যানেটারী ইন্সপেক্টর রয়েছেন। আলিম নামে ঐ ইন্সপেক্টর বর্তমানে রাজবাড়ীতে কর্মরত। এছাড়া বাকী চারটিতে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব হিসেবে দেওয়া আছে চতুর্থ শ্রেণির জামাদার ও ড্রেসার এবং খালাসি পদের সিএমও সুজিতের বিশ্বাস্ত চার ব্যক্তি। তারা হলে, রাজশাহীতে কর্মরত জুয়েল সরকার, ঈশ্বরদীতে কর্মরত আকরাম, খুলনায় কর্মরত অয়ন সরকার, পাকশিতে কর্মরত জগবন্ধু বিশ্বাস।

বর্তমান সিএমও যখন ডিএমও পাকশি হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তখন থেকে জগবন্ধু বিশ্বাস তাঁর আস্থাভাজন ছিলেন। সেই সুযোগে গত দুই বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার উপরে মালামালের চাহিদা নেওয়া হয়েছে তার নিকট থেকে। যদিও চাহিদা বা ডিপিএম পত্রে একজন চতুর্থ শ্রেণির জামাদার স্বাক্ষর করার এখতিয়ার রাখেন না, তবুও শুধু মাত্র দূর্নীতির সঙ্গী হিসেবে আস্থাভাজন জগবন্ধুকে বলির পাঁঠা বানিয়ে লোপাট করা হয়েছে সেই টাকা। মালামাল ক্রয়ের নামে হাত বদল হয়েছে টাকা। স্টোর খাতা কলমে ঠিক রাখা হয়েছে। উক্ত স্টোরে নেই কোন মালামাল। পাকশি ডিভিশনে অন্যান্য স্যানেটারী ইন্সপেক্টর পদে দ্বায়িত্ব পালনকারী চতুর্থ শ্রেণির কেউ তেমন উল্লেখ্য যোগ্য চাহিদা বা ডিপএম এর মাধ্যমে মালামাল ক্রয় না করলেও শুধুমাত্র পাকশি’র দ্বায়িত্বে থাকা জগবন্ধু বিশ্বাস মালামাল ক্রয় করেছেন ২ কোটি টাকার।

অপরদিকে লালমনিরহাট ডিভিশনের সিঃ স্যানেটারী ইন্সপেক্টর সারাফাত একাই গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০-৩৫ কোটি টাকার মালামাল ক্রয় করেছেন। কিন্তু সেসব মালামাল গ্রহন না করে ঠিকাদারের নিকট থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। এখানেও সিএমও সুজিৎ কুমার রায় এর আছে কমিশন। সিএমও রাজশাহী দপ্তরে তাঁর নিজস্ব ক্ষমতাবলে করেছেন কয়েক কোটি টাকার কাজ। ৫ লক্ষ টাকার ডিপিএম ও ভুয়া ডিমান্ডের বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা কমিশন ও মালামাল গ্রহণ না করে ৩৫% টাকা গ্রহণ করেছেন তিনি।
ডিএমও পাকশী স্বাক্ষরিত ডিপিএম ও চাহিদায় অ্যারোসল স্প্রে, হুইল ব্যারো, স্প্রে মেশিন, হ্যান্ড ওয়াশ, হারপিক লিক্যুইড, ভিম লিক্যুইড, ফুল ঝাড়ু, ডি অয়েল, ল্যাটিন বাকেট, গ্লাস ক্লিনার, বাশের টুকড়ি, লাইজল সুগন্ধিসহ আসবাবপত্র ও হাসপাতাল সরাঞ্জাম ক্রয় খাতে আছে ব্যাপক ঘাপলা।
একই সরাঞ্জাম বারংবার ক্রয়ের নামে দেওয়া হয়েছে ডিপিএম ও চাহিদা। কিনা হয়নি মালামাল। হাত বদল হয়েছে শুধু মাত্র টাকা।
নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক কয়েকজন রেল কর্মচারী জানান, অল্প সময়ে জন্য দ্বায়িত্ব পান সিএমও। এই অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকা লোপাটে নিমিত্তে যে, যেমনভাবে পারে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি রেখে দূর্নীতি করেন। বর্তমান সিএমও জগবন্ধু বিশ্বাস ও সারাফাতের এর মতো গুটিকয়েক অসাধু কর্মচারীকে দিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা।

এ বিষয়ে কথা বললে পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, সংবাদটি আমার দৃষ্টি গোছর হয়েছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত পূর্বক পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ রাজশাহী রেলওয়ে মেডিকেলে নানা অনিয়ম দুর্নীতি হয়ে আসছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তা ফলাও ভাবে প্রকাশ হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যেখানে প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসা খাতে ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছেন, সেখানে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা তা লুটপাটে ব্যস্ত। এতে সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ভ্রুক্ষেপহীন। উক্ত দপ্তরের নানা অনিয়ম দূর্নীতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, রাজশাহীবাসীসহ রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ বৃহত্তর আনন্দোলনে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top